সকল মেনু

বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বহাল তবিয়তে রাজউকের এমদাদ!

 স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: তথ্য গোপন করে স্ত্রীর নামে প্লট বরাদ্দ নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। প্লট বরাদ্দের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এমন আলোচনাও ছিল সর্বত্র। কিন্তু হঠাৎ করেই সব থেমে গেছে। এ অবস্থায় আবারও তিনি চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে সংস্থাটির সদস্য হওয়ার জন্য জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা তোলারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সদস্য হওয়ার জন্য সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি সুপারিশও রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে গেছেন এমদাদ। আগামী মাসে তার অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান সময়ে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে ও রাজউকের কর্মকাণ্ডে নৈরাজ্য কমাতে ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু করার পথও রুদ্ধ করে রেখেছেন প্রধান প্রকৌশলী এমদাদ। আর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর দুর্নীতির বোঝা চাপানো হচ্ছে রাজউক তথা সরকারের ঘাড়ে। প্রভাবশালী এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কারণে-অকারণে সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগও আছে। সব মিলিয়ে পুরো রাজউক এখন অনেকটা এমদাদের কাছে জিম্মি!  রাজউক সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুলাই থেকেই ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু করার কথা ছিল। সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। আবার বিষয়টি গত বছরের অক্টোবরে কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বোর্ড সভায়ও সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়। সংগত কারণে সড়ক বিভাগের একজন প্রকৌশলীকে রাজউকে এনে ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু সব কিছু ঠিক থাকার পর আজও চালু হয়নি এ সেবা। এর প্রধান কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমদাদ এককভাবে প্রভাব বিস্তার করে ই-টেন্ডারিং সেবা বন্ধ করে রেখেছেন। গত পাঁচ বছরে মহাজোট সরকারের সময় এককভাবে সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। নিজের একক ক্ষমতা ধরে রাখতে শিডিউল বিক্রির জন্য শুধু রাজউক ভবনে থাকা তিনটি ব্যাংক নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে টেন্ডার জমা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় আর কোনো কাজে আসছে না। এ টেন্ডার ব্যবস্থার ফলে প্রতিটি কাজেই অস্বাভাবিক দরে কার্যাদেশ দিতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। এ সুযোগে প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বছরের পর বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। রাজউক সূত্র জানায়, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম তার স্ত্রী সামিনা ইসলামের নামে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ফেঁসে যাওয়া অবস্থায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ম্যানেজ করার কথাও শোনা যাচ্ছে। রাজউক কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে ফের থেমে গেছে। রাজউকের এক কর্মকর্তা জানান, এ ধরনের প্লট জালিয়াতির ঘটনায় সাবেক পূর্ত সচিব ড. শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। কিন্তু এমদাদের ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি জানান, এমদাদের স্ত্রী সামিনা ইসলামের নামে ২০০৩ সালে পূর্বাচলের সেক্টর-১১, রোড ২০৪-এর ৩০ নম্বর প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পর ১০ কাঠা আয়তনের প্লট বাবদ সমুদয় অর্থ পরিশোধ করেন। কিন্তু বরাদ্দ গ্রহীতার স্বামীর নামে নিকুঞ্জে (দক্ষিণ) একটি তিন কাঠা আয়তনের প্লট আছে। রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংরক্ষিত কোটা থেকে প্লটটি পেয়েছিলেন তিনি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, রাজউকের প্লট বরাদ্দের নির্দেশিকা নিয়ম অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে প্লট বরাদ্দ পেতে পারেন না। আর বরাদ্দ পেলেও যেকোনো একটি প্লট কর্তৃপক্ষ বরাবর সমর্পণ করতে হয়। এ ছাড়া এমদাদের স্ত্রী সামিনা ইসলামও লিজ দলিল রেজিস্ট্রির সময় হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি হলফনামায় বলেছেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন প্রকল্পে কোথাও তিনি বা তাঁর স্বামীর নামে বা পোষ্যদের নামে কোনো আবাসিক জমি বা বাড়ি বরাদ্দ অথবা লিজ প্রদান করা হয়নি। সরকারের ১৭টি বাড়ি রাজউকের মাধ্যমে বিক্রি করার ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদকের দায়ের করা মামলায় সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের সঙ্গে এমদাদুল ইসলামকেও আসামি করা হয়। সেই মামলায় এমদাদ দেড় বছর জেল খেটেছেন।

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলামের বিষয়টি নিয়ে যখন গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠেছে তখন সবারই ধারণা, এবার এমদাদ ফেঁসে যাচ্ছেন। কিন্তু ‘ম্যানেজ মাস্টার’ হিসেবে খ্যাত এমদাদ সব কিছু সামলে নিয়েছেন আগের মতোই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এমদাদুল প্রধান প্রকৌশলী থেকে আগামী মাসে অবসরে যাওয়ার আগেই চাকরির মেয়াদ বাড়াতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

রাজউকের সদস্য পদ পেতে মন্ত্রণালয়ের একটি সুপারিশও নিয়ে আসেন। কিন্তু দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির দায়ে দেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকাগুলোতে এমদাদকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে।

সেই সূত্রে বিষয়টি নিয়ে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থাও তদন্তে নামে। তদন্তে এমদাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ পাওয়ায় সুপারিশ আমলে নেয়নি সরকার। কিন্তু নাছোড়বান্দা এমদাদ হাল ছাড়েননি। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে রাজউকের সদস্য হতে আবারও একটি সুপারিশ নিয়ে আসেন তিনি। এরপর তা বাস্তবায়নের জন্য এখন দিনরাত দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের ১৭টি বাড়ি রাজউকের মাধ্যমে বিক্রি করার ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদক মামলা দায়ের করে। মামলায় সাবেক জোট সরকারের গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়।

পরস্পরের যোগসাজশে, প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এসব বাড়ি বিক্রির মাধ্যমে রাষ্ট্রের ১২৭ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৯ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়। পরে এ মামলায় এমদাদুল ইসলামকে দেড় বছর জেল খাটতে হয়েছে।

অভিযোগের ব্যাপারে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলামের বক্তব্য জানতে তার কার্যালয়ে গেলে সেখান থেকে জানানো হয়, তিনি বিদেশ ভ্রমণে বর্তমানে জার্মানিতে অবস্থান করছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top