সকল মেনু

নেপালের জলবিদ্যুৎ সহজে মিলছে না

 সরওয়ার হোসেন , কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে :  নেপালের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নদীশাসন ব্যবস্থা, আন্তদেশীয় গ্রিড নির্মাণের জটিলতা নিরসন এবং সঠিক সমীক্ষার সমাধান না হওয়ায় সহজেই বাংলাদেশের জন্য মিলছে না সে দেশের জলবিদ্যুৎ। নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে প্রথম যুগ্ম সচিব পর্যায়ে আলোচনা হয় ২০১৩ সালে নেপালে। এরপর একাধিক বৈঠকের পর গত আগস্টে বাংলাদেশে এ বিষয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে অান্তদেশীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, পরিবেশগত সমীক্ষা, ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সম্পর্কসহ নানা বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয় বাংলাদেশ নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি করবে, যা উৎপাদনে ব্যয় নির্বাহ করবে বাংলাদেশ। তবে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের ভূমি ব্যবহারের জন্য দেশটির ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেলেও বিদ্যুৎ পেতে দীর্ঘ সময় পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, আগস্টে নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী রাধা কুমারী গয়ালীর বাংলাদেশ সফরের সময় অনেকেই মনে করেছিলেন এই সফরেই হয়তো বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে, আসলে বিষয়টি তা নয়। এটি এখনো বোঝাপড়ার পর্যায়ে রয়েছে, যা এখনো অনেক সময়ের ব্যাপার। কেবল ভারতের সঙ্গে নেপালের একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি (পাওয়ার ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষর হয়েছে। যেখানে তারা বলেছে, নেপালে উৎপাদিত বিদ্যুৎ তৃতীয় দেশে রপ্তানি করতে পারবে। আর তৃতীয় দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ‘নেপালে ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর দুটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এর মধ্যে একটি ৯০০ মেগাওয়াটের এবং আরেকটি কেন্দ্র হচ্ছে ৬০০ মেগাওয়াটের। কোম্পানিটি এখন মাত্র অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে। এ ছাড়া নেপাল ও ভারতের মধ্যে এখনো গ্রিড কানেক্টিভিটি গড়ে ওঠেনি। নেপালের ডালকে বাঁধ ও ভারতের মোজাফফরাবাদ পর্যন্ত কানেক্টিভিটি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। যখন কানেক্টিভিটি হবে তখন এ গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারবে।’

রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে জলবিদ্যুতের বিষয়টি না এগোনোর আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি। দীর্ঘদিন চলে আসা রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টি সমাধানে না আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আর এটা বুঝেই আমাদের এগোতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নেপাল সফরের পর দেশটির সঙ্গে নেপালের জলবিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এটি চূড়ান্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের বিষয়টি এগোবে। আমরাও এ বিষয়ে আলোচনা করছি। নেপালের সঙ্গে পাওয়ার ট্রেড করতে হলে আমাদের ভারতের সঙ্গেও করতে হবে। আর এ বিষয়ে ভারত ইতিবাচক।’

মাশফি বিনতে শামস আরো বলেন, যে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তা মূলত হিমালয়ের নেপাল অংশে রানওয়ে নদী থেকে। এসব নদীতে বর্ষাকালে পানি হয়। আবার শীতকালে দেখা দেয় পানির ঘাটতি। এ সময় বিদ্যুৎ ঘাটতি হবে। আর এটা রোধে ড্যাম দিয়ে রিজার্ভেশন করতে হবে। এতে নদীর গতিপথে বাধা আসবে। ফলে স্রোতের গতিতে পরিবর্তন আসবে।

তিনি বলেন, নেপালে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা ৮০ থেকে ৯০ হাজার মেগাওয়াট রয়েছে বলে অনেকে মনে করলেও মূলত এর কোনো যথাযথ সমীক্ষা এখনো হয়নি। আর এর ব্যবহারিক ভিত্তি নিয়েও রয়েছে অনেক বিতর্ক। তাই যথাযথ সমীক্ষারও প্রয়োজন আছে।

সার্বিক বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমাদের এগোতে হবে। এ বিষয়ের নীতিমালাগুলো চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত অগ্রসর হওয়া কঠিন। তবে এ ক্ষেত্রে দুই দেশেরই উইন উইন পর্যায়ে চুক্তি হবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস।

নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি খান মো. মঈনুল হোসেন হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, এ খাতে অনেক বিনিয়োগের প্রয়োজন। নেপালের যেসব ব্যবসায়ী এ খাতের লাইসেন্স নিয়েছিলেন, তাদের পক্ষে এত পরিমাণ বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। তাই তারা এগোতে পারছেন না। এখন তাদের প্রয়োজন বিদেশি বিনিয়োগ।

তিনি বলেন, নেপালে আইএফসির (ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স করপোরেশন) অনেক বিনিয়োগ আছে। আইএফসি নেপালের জলবিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য বাজার খুঁজছে। আর বিদ্যুতের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার বাংলাদেশ। তবে এ বিষয়ে নেপাল ও বাংলাদেশের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ভারতের মতামতকে। কেননা, বিদ্যুৎ নিতে হবে ভারতের ভূমি ব্যবহার করেই।

খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, হিমালয় থেকে উৎসারিত নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে হিমালয় থেকে নেমে আসা বিভিন্ন নদীর ওপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে ভারত, পাকিস্তান, চীন, ভুটান ও  নেপাল। এ জন্য বিভিন্ন নদীর ওপর মোট ৫৫৩টি বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ভারত নির্মাণ করবে ৪২৯টি, পাকিস্তান ৪৮টি, ভুটান ২১টি, নেপাল ৫৪টি ও চীন একটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top