সকল মেনু

চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য; কোষ্টগার্ডের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদপুরের বিস্তীর্ণ নদীতে ইলিশ শিকার অব্যাহত রয়েছে। ইলিশ শিকারীদের নিবৃত্ত করতে যেয়ে বুধবার সকালে চাঁদপুরের হরিণা ফেরি ঘাট এলাকায় পুলিশ ও কোষ্টগার্ডকে ২৬ রাউন্ড সর্ট গানের ফাঁকা গুলি পর্যন্ত ছুঁড়তে হয়েছে। তারপরও বন্ধ নেই ইলিশ শিকার, বিক্রি, পরিবহন ইলিশ মাছের ডিম পাড়ার সুবিধার্থে এবং মা’ ইলিশ শিকার বন্ধ করতে সরকার গত ৫ অক্টোবর থেকে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ১১ দিন নদীতে সব ধরনের জাল ফেলা নিষিদ্ধ করেছে। সে হিসেবে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকায়ও মাছ শিকার বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু জেলেরা তা মানছে না। তারা ঠিকই প্রশাসন ও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ডিমওয়ালা ইলিশ শিকার করেই যাচ্ছে। আর এসব ইলিশের একটা বড় অংশ চাঁদপুর শহর লাগোয়া দোকানঘর, বহরিয়া, হরিণা, ঈদগাহ ফেরি ঘাট এলাকায় এবং চাঁদপুর বড়ষ্টেশন নৌ-ফাঁড়ি লাগোয়া কোরালিয়ার চরে এনে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। হালি দরে হাঁক-ডাক করে নদী তীরে এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি ইলিশ ৭০ টাকা থেকে থেকে ৮শ’ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সবচাইতে বড় আকৃতির ইলিশের হালি ৮শ’ টাকা। বড় আকৃতির ইলশগুলো এক কেজি বা তার উপরের ওজনের।  এসব মাছ কিনতে দূর দূরান্ত খেকে লোকজন গাড়ি, মাইক্রোবাস, হোন্ডাযোগে চাঁদপুর আসছে। বাঁধাহীন ভাবে চলছে ইলিশের কেনা-বেঁচা। জেলেরা বলল, পেটের দায়ে তারা মাছ ধরছে। ক্রেতারা জানলেন, কম দামে পেয়ে তারা কিনছেন। আর এলাকার সচেতন লোকরা মাছ ধরার জন্য দুষলেন পুলিশ, প্রশাসন ও কোষ্টগার্ডকে। বলছেন, সার্বক্ষণিকভাবে নদীতে কোন পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। ৪/৫ ঘন্টা পর পর কোষ্ট গার্ড বা নৌ-পুলিশের একটি দল নদীতে টহল দিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন একদিকে যায় অন্যদিকে জেলেরা জাল পেতে বসে। তাছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন সদস্যের সাথে রয়েচে আড়তদারদের সমঝোতা। ফলে তারা নদীতে নামার আগে জেলেরা সে খবর জেনে যায়। ফলে সেমতেই তারা নদীতে নামে।  জেলেরা জানালেন, যে ১১ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে সে ১১ দিনের জন্য পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে তারা নদীতে মাছ শিকার করতে যাচ্ছেন। তারা জানান, মার্চ-এপ্রিলে জাটকা শিকার বন্ধ রাখতে দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকে। সেই সময়ও প্রকৃত জেলেরা সরকারি সহায়তা পায় না। মুখ দেখে, দলীয় পরিচয় ও আতœীয়তার বিবেচনায় সেসময় জেলেদের সাহায্য রদয়া হয়। ফলে তখনো বাধ্য হয়ে তাদের নদীতে নামতে হয়।
পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা অব্যাহতভাবে অভিযান চালিয়ে গেলেও জেলেরা কথা শুনছে না। বরং জেলেরা সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর। বুধবার সকালে হরিণা ফেরি ঘাটের ঘটনা বর্ণনা করে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর জানান, সেখানে মাছ বোঝাই একটি মাইক্রোসহ প্রায় ১২ মণ মাছ, ৪০ হাজার মিটার জাল ও ৯ জন জেলেকে আটক করা হলে জেলেরা পুলিশ ও কোষ্টগার্ডের উপর চড়াও হয়। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। পরে তাদের নিবৃত্ত করতে পুলিশ ২০ রাউন্ড এবং কোষ্টগার্ড ৬ রাউন্ড সর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আটককৃত নয় জেলেকে ২ বছরের করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে। পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও টাকা নিয়ে মাছ বেঁচা-কেনার অভিযোগও অস্বীকার করলেন পুলিশ সুপার।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন জানালেন, তারা প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মা ইলিশ রক্ষায়। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের সবাইকে অভিযানের কাজে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও অভিযান পরিচালনা করছেন। মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম সফল করার জন্য সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। অথচ ইতমধ্যেই তাদের প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে অভিযান চালাতে যেয়ে। তারপরও তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমকে সফল করার জন্য। কিন্তু জেলেদের অসহযোগিতার কারণে পুরোপুরি সফল হওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানালেন, অভিযান আরো জোরদার করা হবে।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জানান, একটি মা ইলিশ একবারে ৮ থেকে ২০ লাখ ডিম দেয়। সেই ডিম থেকে জাটকা হয়। ইলিশের এই ডিমের ৪০ ভাগও রক্ষা পায় তাহলে ২৮ হাজার কোটি টাকার ইলিশ সংযুক্ত হবে।  তাই ডিমওয়ালা মাছ শিকার উচিত নয়। মা মাছ ও জাটকা বাঁচতে দিলে লাভ জেলেদেরই। মৌসুমে তারা ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ পাবেন।
জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় যদি সাধারণ মানুষ সচেতন না হয় তাহলে প্রশাসনের সীমিত লোক দিয়ে এই অভিযান সফল করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top