সকল মেনু

বৃহস্পতিবার ভাষা মতিনের মরদেহে সর্বস্তরের মানুষের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা

 আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম, ঢাকা: সদ্য প্রয়াত ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনের মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। তার স্ত্রী গুলবদন নেছা মনিকা হটনিউজ২৪বিডি.কমকে এ খবর জানান। তবে প্রথমে সকাল ১০টায় শহীদ মিনারে মরদহ নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিলো। পরে বেলা ১২টার কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে ভাষা মতিনের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ৪ অক্টোবর থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিলো। বুধবার সকাল ৯টার দিকে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়।

ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন মৃত্যুর আগেই শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালকে মরণোত্তর দেহ দান করার ঘোষণা দিয়ে গেছেন। আর চক্ষু দান করার ঘোষণা দিয়েছেন সন্ধানীকে।

ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার মৃত্যুর পরপরই তার কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়। তারপর মরদেহ রাখা হয় একই হাসপাতালের হিমঘরে।

গত ১৮ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়েন ভাষামতিন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নগরীর সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৯ আগস্ট তাকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়। শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেলে চলতি মাসের ৪ তারিখে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয় ভাষা মতিনকে।

বিএসএমএমইউ এর ১০ তলায় সম্প্রসারিত আধুনিক আইসিইউ কক্ষের ৯ নাম্বার বেডে শিফট অনুযায়ী তার শারীরিক অবস্থা দেখভাল করেন ডাক্তাররা।

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম রূপকার ও সংগ্রামী আব্দুল মতিনের জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলায় এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে। তাঁর বাবার নাম আব্দুল জলিল এবং মায়ের নাম আমেনা খাতুন। তিনি ছিলেন তাদের প্রথম সন্তান।

১৯৩০ সালে গ্রামের বাড়ী যমুনায় বিলীন হলে আব্দুল জলিল জীবিকার সন্ধানে সপরিবারে ভারতের দার্জিলিংয়ে চলে যান। সেখানে জালাপাহারের ক্যান্টনমেন্টে সুপারভাইজ স্টাফ হিসেবে চাকরি পান।

১৯৩২ সালে দার্জিলিং-এর বাংলা মিডিয়াম স্কুল মহারাণী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণীতে ভর্তি হন। শুরু হয় তার শিক্ষাজীবন। ১৯৩৩ সালে আব্দুল মতিনের বয়স যখন মাত্র ৮ বছর, তখন তার মায়ের মৃত্যু হয় অ্যাকলামশিয়া রোগে।

মহারানী গার্লস স্কুলে ৪র্থ শ্রেণি পাশ করে ১৯৩৬ সালে দার্জিলিং গভর্মেন্ট হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন মতিন। ১৯৪৩ সালে এনট্রান্স (Secondary Certificate Examination) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।

ছেলে দার্জিলিংয়ে ভাল কোনো কলেজে ভর্তি হোক বাবা তা চাইলেও আব্দুল মতিন ১৯৪৩ সালে রাজশাহী গভর্মেন্ট কলেজে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। ২ বছর পর ১৯৪৫ সালে তিনি এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে আব্দুল মতিন ব্রিটিশ আর্মির কমিশন্ড র‌্যাঙ্কে ভর্তিপরীক্ষা দেন। দৈহিক আকৃতি, উচ্চতা, আত্মবিশ্বাস আর সাহসিকতার বলে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কমিশন পান। এরপর তিনি কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোর যান। কিন্তু ততদিনে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ফলে তিনি একটি সার্টিফিকেট নিয়ে আবার দেশে ফিরে আসেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস (পাশ কোর্স) এ ভর্তি হন। ফজলুল হক হলে তাঁর সিট হয়। ১৯৪৭ সালে গ্র্যাজুয়েশন কোর্স শেষ করেন এবং পরে মাস্টার্স করেন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস বিভাগ থেকে।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলায় তার অবদান অন্যতম। ১৯৫২ সালে  আব্দুল মতিনসহ অন্যরা ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। তারই নেতৃত্বে একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সারা বাংলার জন্য আন্দোলনের নানা কর্মসূচি।

তিনি ছিলেন সর্বদলীয় ইমেজের অধিকারী এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।

আব্দুল মতিন বেশ ক’টি বইও রচনা করেন। এগুলো হলো-‘ইউরোপের দেশে দেশে’ (১৯৬০), ‘কাস্তে’ (১৯৮৭), ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রবাসী বাঙালি’ (১৯৮৯), ‘প্রবাসীর দৃষ্টিতে বাংলাদেশ’ (১৯৯১), ‘শামসুদ্দিন আবুল কালাম ও তার পত্রাবলী’ (১৯৯৮), ‘শেখ হাসিনা: একটি রাজনৈতিক আলেখ্য’ (১৯৯২), আত্মজীবনী ‘স্মৃতিচারণ পাঁচ অধ্যায়’ (১৯৯৫), ‘জীবনস্মৃতি: একটি বিশেষ অধ্যায়’ (২০১২), রাজনীতি বিষয়ক ‘জেনেভায় বঙ্গবন্ধু’ (১৯৮৪), ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়’ (১৯৯৩), ‘খালেদা জিয়ার শাসনকাল: একটি পর্যালোচনা’ (১৯৯৭), ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: মুক্তিযুদ্ধের পর’ (১৯৯৯), ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: কয়েকটি ঐতিহাসিক দলিল’ (২০০৮), ‘বিজয় দিবসের পর: বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ (২০০৯), ইতিহাস বিষয়ক ‘রোমের উত্থান ও পতন’ (১৯৯৫), ‘মহানগরী লন্ডন’ (১৯৯৬), ‘ক্লিওপেট্রা’ (২০০০), ‘দ্বি-জাতি তত্ত্বের বিষবৃক্ষ’ (২০০১), ‘ভলতেয়ার: একটি অনন্য জীবনকাহিনী’ (২০০২), ‘কামাল আতাতুর্ক: আধুনিক তুরস্কের জনক’ (২০০৩), ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি: যুক্তরাজ্য’ (২০০৫), ‘ইউরোপের কথা ও কাহিনী’ (২০০৫); ‘ইউরোপের কথা ও কাহিনী’ (২০০৭), ‘ইউরোপের কথা ও কাহিনী’ (২০০৯)।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top