আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম : রাজধানী জুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা। গরুর হাটগুলোতে মাইকে মাইকে প্রতি মিনিটে চালানো হচ্ছে সতর্কবাণী। লঞ্চ, বাস, ট্রেনেও লিফলেট ব্যানারে প্রচার চালানো হচ্ছে অপরিচতদের দেওয়া কিছু না খাওয়ার জন্য। প্রচার চালানো হচ্ছে পত্রিকা, টেলিভিশন এমনকি অন লাইন নিউজ পোর্টালেও। তারপরও পুরো ঠেকানো যায়নি অজ্ঞান পার্টিকে। সব কিছুর চোখে ধুলো দিয়ে সুপার ভিলেন বনে গেছে এই দুষ্কৃতকারীরা। ঈদুল আজাহাকে সামনে রেখে গত দেড় সপ্তাহে রাজধানীতে রীতিমতো তা-ব চালিয়েছে কমপক্ষে ২৫টি অজ্ঞান পার্টি। গোয়েন্দা পুলিশ এদের টিকিও ধরতে পারেনি। হাসপাতালগুলোর তথ্য অনুযায়ী গত ১০ দিনে এই পার্টির খপ্পরে রাজধানীতে কমপক্ষে ৪০০ ব্যক্তি সর্বস্ব হারিয়েছেন। এদের প্রত্যেককেই চিকিৎসা নিতে হয়েছে হাসপাতালে। রোববার রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির শিকারে পরিণত হয়েছেন চারজন। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী এ পর্যন্ত অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে মারা গেছেন দুই জন। পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু না খাওয়ার জন্য এবার ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উচ্চমাত্রার ঘুমের বড়ি পানিতে গুলিয়ে চা, শরবত, ডাবের পানি, ভাত, জুসের প্যাকেট, শসা, কোমলপানীয়, পান, ঝালমুড়ি ও ক্রিম দেওয়া বিস্কুটে মিশিয়ে কৌশলে মানুষকে খাইয়ে অজ্ঞান করে সব লুটে নেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার ঈদে যাত্রীদের সচেতন করতে বিলি করা হয়েছে প্রায় দুই লাখ লিফলেট। ১০টি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রচার করছে অজ্ঞান পার্টি নিয়ে নানা খবর। তারপরও এবার ঈদের সুপার ভিলেন অজ্ঞান পার্টিই।
অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়াদের সবার কাহিনী প্রায় একই রকম। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অপরিচিত ব্যক্তিরা সখ্য গড়ে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করে সবকিছু নিয়ে গেছে। তাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে রাস্তা, বাসস্টেশন বা লঞ্চঘাট থেকে।
ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাবরিনা আক্তার জানিয়েছেন, খাবারের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার ঘুমের ট্যাবলেট কিংবা সিরাপ মিশিয়ে অজ্ঞান করার কাজ করে এই চক্র। যাদের ডায়াবেটিস ও লিভারের সমস্যা আছে তারা এ ধরনের ওষুধে মারাও যেতে পারেন।
পুলিশের ভাষ্য মতে, অচেতন করার এসব ওষুধ আমদানি নিষিদ্ধ। তারপরও অসাধু ব্যবসায়ীরা চোরাই পথে এসব ওষুধ এনে উচ্চ মূল্যে প্রতারক চক্রের কাছে বিক্রি করে।
পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশে অজ্ঞান পার্টির ২৫টি চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাদের সদস্য তিনশ`র বেশি। অজ্ঞান পার্টির সদস্য এক দলে কমপক্ষে চারজন থাকে। তারা যাত্রী বা কেনাকাটা করতে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করে নানা কৌশলে ভাব জমায়। এরপর তারাও খায়, শিকারকেও খেতে দেয়। আর এরমধ্যেই থাকে কারসাজি।
পুলিশ রোববার পর্যন্ত অজ্ঞান পার্টির ৪০ জন সদস্যকে আটক করার কথা জানিয়েছে। এই চক্রের সদস্যদের ধরতে গঠন করেছে বিশেষ টিম। তারা লঞ্চ, রেল ও বাসষ্টেশন এবং জনসমাগম স্থলে নজরদারি বাড়িয়েছে।
পুলিশ জানায়, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা রোববার ঘরে ফেরা যাত্রীদের ওপর শেষ মরণ কামর দেবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। আর এ উদ্দেশ্যে এই চক্রের সদস্যরা অনেকটা মরিয়া অবস্থায় রয়েছে। রোববার দুপুরের আগেই চারজনকে সর্বশান্ত করেছে এই পার্টির সদস্যরা। তবে পুলিশও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
এই সুপার ভিলেনকে ঠেকাতে পুলিশকেই হতে হবে সুপার হিরো এমনটাই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।