সকল মেনু

ভোলায় ইলিশ শিকারে ১১ দিনের নিষেধাজ্ঞা

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: জেলার ১শ’ ৯০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের ইলিশ শিকার বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রজনন মৌসূমে মা ইলিশ রক্ষায় ৫ থেকে ১৫ অক্টোবর এই ১১ দিন ইলিশ ধরা বন্ধের জন্য জেলেদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনসহ সকলকে সজাগ থাকতে জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলা মৎস কর্মকর্তা প্রীতিষ কুমার মল্লিক বুধবার দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন। মৎস্য বিভাগ সুত্রে জানা যায়, ভোলার ইলিশা থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তম পর্যন্ত জলসীমায় ইলিশের অভয়আশ্রম ঘোষণা করা হয়। এ জলসীমায় সাগর থেকে মা ইলিশ এসে ডিম পাড়ে তাই এ সময় ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। নিষিদ্ধ সময়ে কেউ যাতে ইলিশ ধরা, বিক্রি ও মজুদ করতে না পারে সে জন্য পুলিশ, কোস্ট গার্ড, মৎস্য বিভাগ ও ভ্রাম্যমান আদালত নজরদারী করবে, কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে, এসময় শুধু মাত্র নদীতে ইলিশ শিকার বন্ধ করার কথা বলা হলেও সাগরে এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ না থাকায় জেলে ট্রলারগুলো ১১ দিনের জন্য সাগর অভিমুখে যায় বলে জানা গেছে। ঢালচর মৎস অবতরণ কেন্দ্রের মৎস ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, সাগরে কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা না থাকায় জেলেরা নির্বিঘেœই ইলিশ শিকার করতে পারে। সরকারি এই নিষেধাজ্ঞার সুফল সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়ার জন্য একই সাথে সাগরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে তিনি তার মতামত তুলে ধরেন।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস কর্মকর্তা প্রীতিষ কুমার মল্লিক জানান, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বড় পূর্ণিমার আগে ও পরের সময় ইলিশ মাছ সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়া অব্যাহত থাকে অমাবস্যা পর্যন্ত। বিশ্বের অন্যতম ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র হলো বাংলাদেশ। সফল প্রজননের লক্ষ্যে এসময় চট্টগ্রাম, ভোলা, পটুয়াখালি, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালি, ফেনী ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটারসহ সারা দেশে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এ সময় ওই সব স্থানে গভীর সমুদ্র থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ আসে। ইলিশ অত্যন্ত দ্রুতগামী সামুদ্রিক মাছ। এ মাছ সব সময় চিরচেনা পথ ধরেই চলে। একবার যেখানে ডিম পাড়ার জন্য আসে, বার বার সেখানেই ফিরে আসে, এমনটি জাটকা মাছও (বাচ্চা)। তিনি আরো জানান, আইন অনুযায়ী প্রতি আশ্বিন মাসে প্রথম উদিত চাঁদের পূর্ণিমার দিনসহ আগের ৫ দিন ও পরের ৫ দিন উপকূলীয় এলাকাসহ সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, বাজারজাতকরণ, বিক্রয় ও মজুদ দ-নীয় অপরাধ। আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে ১ থেকে ৬ মাসের সশ্রম কারাদ-সহ সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। এর পর পরবর্তীতে প্রতিবার আইন ভঙ্গের জন্য শাস্তির পরিমাণ দ্বিগুণ রাখা হয়েছে। মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, তিনি জানা, এরইমধ্যে ভোলার ৭টি উপজেলার বিভিন্ন মৎস্যঘাটে ব্যাপক মাইকিং, প্রচার-প্রচারণা, জেলে সমাবেশ এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এসব প্রচারণা করে মাছ শিকার না করার জন্য সচেতন করে তোলা হচ্ছে মৎস্যজীবীদের। এরপরেও আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে শুধু নদীর বিশেষ বিশেষ পয়েন্টে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা জারি ছিলো, কিন্তু এ বছরই সব পয়েন্টে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এদিকে, যে মুহূর্তে নদীতে মাছ পড়া শুরু করেছে ঠিক সে মুহূর্তে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছেন সাধারণ জেলেরা। তারা বলছেন, মৌসূমের শুরু থেকে নদী ও সাগরে পর্যাপ্ত ইলিশ ছিলনা। কিছুদিন থেকে মাছ পড়া শুরু করেছে। কিন্তু সে মুহূর্তেই মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top