সকল মেনু

বিএনপি বারবার হোঁচট খাচ্ছে !

  নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা: নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সিনিয়র নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, সরকারের সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের আঁতাত, দলের বিভিন্ন কমিটি গঠন নিয়ে সমস্যা, সর্বপরি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে মতবিরোধের কারণে দল গোছানোর কাজে বার বার হোঁচট খাচ্ছে বিএনপি। এমন কি নতুন কোন কমিটি করেও সুফল পাচ্ছে না দলটি। এভাবেই বারবার দলকে গোছাতে গিয়ে নতুন করে আরো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে । এ নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় দলটির নীতিনির্ধারকরা। সূত্রমতে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে দলকে আরো সংগঠিত, শক্তিশালী এবং আন্দোলন উপযোগী করে তুলতে বিএনপির হাইকমান্ড সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় ঢাকা মহানগর কমিটিকে। কিন্তু এটি এখন বিএনপির জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য সর্বসাকুল্যে দুই মাস সময় বেঁধে দেন খালেদা জিয়া। এই দুই মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সুখবর দিতে পারেননি মহানগর বিএনপির কর্ণধার মির্জা আব্বাস। উপরন্তু সম্প্রতি তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ঢাকা মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না। এ ঘোষণার পর নেতা-র্কমীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। এখানেই শেষ নয়, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবীব উন নবী খান সোহেলকে মির্জা আব্বাসসহ কমিটিতে থাকা বেশিরভাগ নেতাই মেনে নিতে চাচ্ছেন না। এ নিয়ে মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে।

সূত্রমতে, এই মহানগর কমিটি গঠন নিয়েও তারেক রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার পছন্দ-অপছন্দের দ্বন্দ্ব বিরাজমান। এখানেও খালেদা জিয়ার পছন্দের সঙ্গে একমত হতে পারেননি তারেক রহমান।

এদিকে আন্দোলনের ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটনা ঘটেছে। তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে খালেদা জিয়া খুব শিগগিরই ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তারেক রহমানের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি সামনে চলে আসে। এ কারণে হঠাৎ করেই থমকে যায় কমিটি ঘোষণার কাজ।

কিন্তু গত মঙ্গলবার ঘটে আর এক ঘটনা। ওই দিন সকালে কমিটি দেয়ার কথা থাকলেও ছাত্রদলের বড় একটি অংশ কমিটির বিরোধিতা করে এবং খালেদা জিয়ার গুলশান অফিসের সামনে শত শত ছাত্রদল কর্মী বিক্ষোভ করে। একই সঙ্গে ওই দিন রাতে খালেদা জিয়ার গাড়ি ঘেরাও করে কর্মীরা। পরে খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে ছাত্রদল কর্মীদের আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি একটু শান্ত হয়। এ ঘটনার পর খালেদা জিয়া আবারও ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করতে গিয়েও স্থগিত করে দেন।এভাবেই বিভিন্ন পদক্ষেপে হোঁচট খাচ্ছে বিএনপি।

দলীয় সূত্র জানায়, নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে যেসব তরুণ নেতা কিছুটা হলেও ভূমিকা রেখেছে তাদেরকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু তারেক রহমান তাঁর এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি মেনে নিতে পারেননি। তিনি চেয়েছেন, তারুণ্য নির্ভর কমিটি দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হবে। এ ক্ষেত্রে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় থাকাটা জরুরি।

জানা গেছে, ছাত্রদলে বয়স্কদের ব্যাপারে তারেকের আগ্রহের আরেকটি কারণ হলো, এখন পর্যন্ত তারেক রহমানের আশপাশে যারা আছেন, তারা সবাই ছাত্রদলের আদু ভাইদের প্রজন্ম। এই প্রজন্মটাই তারেক রহমানকে বয়স্কদের ব্যাপারে প্রভাবিত করছে।

জাতীয়তাবাদী যুবদল নিয়েও খালেদা-তারেক রহমানের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্রমতে, সাবেক দুই ছাত্রনেতার ব্যাপারে আগ্রহী তারেক রহমান। অন্যদিকে খালেদা জিয়া চান না, রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়া কোনো ব্যক্তি বড় কোনো পদ পাওয়ার শর্তে আবার রাজনীতিতে আসুক। তার চেয়ে বরং যারা রাজনীতিতে এখনো সক্রিয় এবং বিএনপির দুর্দিনে পাশে পাওয়া গেছে তারাই নেতৃত্ব পাক।

মা-ছেলের এ রকম বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে, যুবদল পুনর্গঠনেও হোঁচট খায় বিএনপি। যার ফলে মাসখানেক আগে যুবদলের নতুন কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত  তা করা হয়নি। এ নিয়ে এখন কোনো কথা বলতেও শোনা যায় না বিএনপি নেতাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণেই তড়িঘড়ি করে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এ কমিটি দিয়েও ভালো কিছু আশা করতে পারছেন না বিএনপির হাইকামান্ড। কারণ, সেই সব লোক দিয়েই শেষ পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে যাদের অনেকেই ওয়ান-ইলেভেন থেকে শুরু করে সর্বশেষ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।

দলীয় সূত্র বলছে, ৭৫টি সাংগঠনিক জেলায় নতুন কমিটি দেওয়ার চিন্তা করলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১১ টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি দিতে সক্ষম হয়েছেন খালেদা জিয়া। এ সব জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিলেও দলীয় কোন্দল, একাধিক কমিটি, পদ-পদবী নিয়ে লড়াই থাকায় সময়মতো পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে কমিটি ছাড়াই চলছে চট্টগ্রাম মহানগর, ময়মনসিংহ উত্তর ও মানিকগঞ্জ জেলা। আর ঢাকা জেলার সভাপতি নাজমুল হুদাকে বহিষ্কার করার পর আব্দুল মান্নানকে সভাপতি করা হলেও দলীয় কর্মকাণ্ডে কোনো প্রকার গতি সঞ্চার হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top