সকল মেনু

যশোর-খুলনা মহাসড়ক ঈদের আগে সংস্কার হচ্ছে না

  যশোর প্রতিনিধি:  ঈদ-পূজায় ঘরমুখি মানুষের জন্য যশোর-খুলনা মহাসড়ক সংস্কারে কোনো সুখবর নেই। খানা খন্দে ভরা, কাঁদা পানিতে একাকার এই মহাসড়ক দিয়েই তাদের যাতায়াত করতে হবে। তাই ঈদের আগে দুর্ভোগ আর মৃত্যুঝুঁকিই সঙ্গী হচ্ছে এ রুটে চলাচলকারী লাখো মানুষের। সর্বশেষ গত ঈদের আগে ২৩ জুলাই এ মহাসড়কটি পরিদর্শন করে যশোর-খুলনা মহাসড়ককে ‘যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের গলার কাঁটা’ উল্লেখ করে এর দায়িত্ব নিজেই নিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজের কাজ হয়নি। যদিও সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, মহাসড়কটি চলাচলের উপযোগী রাখতে তাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। ঈদের আগে সড়কটিকে স্বাভাবিক যাতায়াতে প্রস্তুত করতে তাদের যাবতীয় প্রস্তুতিতে জল ঢেলে দিয়েছে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি।তারপরও সড়ক বিভাগ আশাবাদী দ্রুতই তারা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে তুলবেন।যশোর, খুলনাসহ এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের আরেক না ‘যশোর-খুলনা মহাসড়ক’। সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে গত পৌনে ৪ বছর ধরে চলছে সংস্কার কাজ। কিন্তু আজও তা শেষ হয়নি। খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী একাধিক বার সড়কটি পরিদর্শন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাতেও খুব একটা কাজের কাজ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এখন সংস্কার কাজ চললেও বৃষ্টি কাঁদায় তা খুব একটা এগুচ্ছে না। বরং মাঝে মধ্যেই মহাসড়কে গাড়ি বিকল হয়ে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতির সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু জানিয়েছেন, যশোর-খুলনা মহাসড়কের পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ভাঙা চোরা, গর্ত, কাঁদা পানিতে একাকার সড়কেই তাদের যানবাহন চালাতে হচ্ছে। যশোরের পিকনিক কর্নার থেকে নওয়াপাড়ার শেষ সীমানা পর্যন্ত সড়কের প্রায় পুরোটাই বেহাল। প্রায় প্রতিদিনই সড়কে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ছে, ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়ক সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সময়ে আবেদন নিবেদনের পাশাপাশি তারা পরিবহন ধর্মঘট করারও ঘোষণা দিয়েছেন একাধিক বার। সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকেও পরিবহন ধর্মঘটে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঈদ পূজার কথা বিবেচনা করে তারা কর্মসূচি পিছিয়েছেন। সড়কটি চলাচলের উপযোগী না হলে ঈদের পর তারা আন্দোলন কর্মসূচিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদি হাসান হটনিউজ২৪বিডি.কমকে জানান, মহাসড়কটি সংস্কারের কাজ অব্যাহত রয়েছে। তবে, গত ৪/৫ দিনের টানা বৃষ্টিতে সংস্কার কাজ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, মহাসড়কের যশোরের অংশে বিভিন্ন এলাকা মিলিয়ে দুই থেকে আড়াই কিলোমিটারের অবস্থা নাজুক। এ নাজুক অংশ সংস্কার করে বিটুমিনের কাজ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু টানা বৃষ্টি পুরো প্রক্রিয়াতেই জল ঢেলে দিয়েছে। বৃষ্টির পানিতে সড়কের বালি পাথর সব একাকার হয়ে গেছে। তবে, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি উল্লেখ করেছেন, দু’একদিন শুকনো আবহাওয়া পাওয়া গেলেই তারা ঈদ পুজায় ঘরমুখো মানুষদের নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন। যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, যশোর-খুলনা মহাসড়কের সংস্কার কাজ চলছে প্রায় পৌনে ৪ বছর ধরে। ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে মহাসড়কটির যশোরের চাঁচড়া চেকপোস্ট থেকে অভয়নগর উপজেলার রাজঘাট পর্যন্ত ৩৩ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। খুলনার যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য বেসিক ইউআইএল-জেভি সংস্কার কাজের কার্যাদেশ পায়। ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দরপত্র আহ্বানের এক বছরের মাথায় ২০১২ সালের ২৭ জানুয়ারি সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সংস্কার কাজ কিছুটা হওয়ার পর ওই বছরের ৩১ মে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ভাঙা অংশগুলোতে ইট বিছিয়ে জোড়াতালি দিয়ে মহাসড়কটির সংস্কার করা হয়।

পরবর্তী সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের খুলনা সফরের প্রাককালে ওই ভাঙাচোরা ইট উঠিয়ে সেই জায়গাগুলোতে পিচ দেওয়া হয়। এরপর প্রিওডিক মেনটেইনেন্স প্রোগ্রামের (পিএমপি) আওতায় মহাসড়কটির ২৭ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়।

৩১ অক্টোবর ২২ কোটি ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকার প্রকল্পের কার্যাদেশ পায় পূর্বের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য বেসিক ইউআইএল-জেভি। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারেনি।
এরপর ২০১৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহাসড়কটি পরিদর্শন করেন। এ সময় মহাসড়কের বেহাল অবস্থা দেখে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে সংস্কার কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও অবহেলার অভিযোগে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যাদেশ বাতিল করেন।

সূত্র আরও জানায়, ২২ ফেব্রুয়ারি ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের পর সংস্কার কাজের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত মে মাসে সড়ক সংস্কারের কার্যাদেশ পায় রাজশাহীর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আরডিএল এসটিবি। ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯ কিলোমিটার মহাসড়কের সংস্কার কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরে ঈদুল ফিতরের আগে ২৩ জুলাই এ মহাসড়কটি ফের পরিদর্শন করতে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি ঈদের আগে যথাসময়ে এ সড়কের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীকে শো’কজ করেন।

আর যশোর-খুলনা মহাসড়ককে ‘যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের গলার কাঁটা’ উল্লেখ করে এর দায়িত্ব নিজেই নেন। কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজের কাজ হয়নি। তাই এবারও ঈদুল আযহা ও শারদীয় দুর্গাপূজায় ঘরমুখি মানুষদের এই সড়ক দিয়ে দুর্ভোগ আর মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top