সকল মেনু

আজ শেখ হাসিনার ৬৮তম জন্মদিন

 আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬৮তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা। বাবার জন্মভিটা মধুমতি বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার পাড়াগাঁ টুঙ্গীপাড়ায় তারও জন্ম। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ভাই-বোনদের অন্যরা হলেন, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। প্রধানমন্ত্রীর শৈশব কেটেছে দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদী সাহেরা খাতুনের কোলে-পিঠে, টুঙ্গীপাড়ার বাইগার নদীর তীরে। ছোট বেলায় শেখ হাসিনাকে সবাই আদর করে ‌হাসু নামে ডাকতেন। গ্রামবাংলার ধূলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেড়ে উঠা শেখ হাসিনার সঙ্গে নদী, গ্রাম, খোলা আকাশ, বাংলার প্রকৃতির সখ্যতা ছোট বেলা থেকেই। এজন্য তিনি বাংলার মানুষের দুঃখ-কষ্ট হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারেন। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গীপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের  নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরানো ঢাকার মোগলটুলীর রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন বঙ্গবন্ধুর পরিবার। পরে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে ৩ নম্বর মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে উঠেন তারা। টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তির মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা শহুর জীবনের পড়াশুনা শুরু।
১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে উঠেন বঙ্গবন্ধু পরিবার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর পূর্ব পর্যন্ত এ বাড়িতে থাকতেন তারা। ১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশীবাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। শিক্ষা জীবনেই শেখ হাসিনা রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হন। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন ও ৬ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬ দফা দাবিতে জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হলে শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দায়ের করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। দুঃখ-কষ্টে ভরা সেই ঝড়ো দিনগুলিতেই, কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ব্যক্তিজীবনে শেখ হাসিনা দুই সন্তানের জননী। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। বিয়ের পরও ১১-দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে ত‍ৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর রোশানলে পড়েন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস গৃহবন্দি থেকেছেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ভয়াল ১৫ আগস্ট দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজের সঙ্গে থাকা শেখ রেহানা ছাড়া বাবা-মা, ভাই-বোনসহ নিকট আত্মীয়-স্বজনদের চিরদিনের মতো হারান তিনি। ঘাতকের নির্মম বুলেটে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি রক্তে রঞ্জিত হয়।

১৯৭৫ পর দীর্ঘদিন দেশে ফিরতে পারেননি শেখ হাসিনা। ৭৫ পরবর্তী ৬ বছর লন্ডন ও দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয় তাদের দু’বোনকেই।

১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতেই তাকে দলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। আওয়ামী লীগের চরম দুর্দিনে দলের হাল ধরেন তিনি।

শত বাধা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে সামরিকজান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন তিনি।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।

২০০৪ সালের একুশে আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় গুরুতরভাবে আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা।

১/১১-এর সরকার গঠনের পর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার করা হয় শেখ হাসিনাকে। জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি।
পরে পরিস্থিতি পাল্টে গেলে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দেয় ত‍ৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি মহাজোট সরকারের নেতা হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক বাধা উপেক্ষা করে গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় বারের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। টানা দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন শেখ হাসিনা।

শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং সাম্প্রদায়িক ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাসহ মানব কল্যানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসংখ্য পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হন।

পুরস্কারগুলোর কয়েকটি হলো বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সেরেস পদক, ইউনেসকোর পার্ল এস বাক পদক, মাদার তেরেসা পদক, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু স্মৃতি পদক, আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালের রাষ্ট্রপ্রধান পদক, রোটারি ফাউন্ডেশনের পল হ্যারিস ফেলোশিপ, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার; গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সৃজনশীল লেখালেখির জন্য বিশ্বের খ্যাতনামা ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।

দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ কর্তৃক সম্মানজনক ‘সাউথ-সাউথ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। মহিলা ও শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় সম্প্রতি ইউনেস্কো মহাপরিচালক তার হাতে শান্তিবৃক্ষ তুলে দেন। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অধিকার আদায়ে বলিষ্ট ভূমিকা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশন উপলক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় থাকায় এবারের জন্মদিনটিও দেশের বাইরে কাটাতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। জন্মদিনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া উপহার দেওয়া হবে।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়াও বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত করা হবে। দুপুর ১২টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এবং প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়ে বিশেষ প্রার্থণা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতিমখানাসহ দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top