সকল মেনু

চার খুন পরকীয়ার বদলা নিতেই

  নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘কোরআন শরিফের ওপর হাত রেখে শপথ করার পরও সাজু শপথ ভঙ্গ করে অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। সে ডাকাত দলের সর্দার হওয়ার পরও টাকার ভাগাভাগি নিয়ে ভেজাল করত। ডাকাতি করা বেশিরভাগ মালই নিজের ভাগে রাখত সে। এসব কারণে আমরা পাঁচজন মিলে পরিকল্পনা করে সাজুকে মেরে ফেলি।’  ২৪ সেপ্টেম্বর কেরানীগঞ্জে দুই শিশুসহ একই পরিবারের চারজনকে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার দুই দিন পর হত্যাকারীদের মধ্যে তিনজনকে আটক করে ঢাকা জেলা পুলিশ। আটকের পর তাদেরকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আনা হয়। এর পর ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান হাবিব হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা করেন সাংবাদিকদের কাছে। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনের পর আটককৃতদের মিডিয়া সেন্টারের একটি কক্ষে রাখা হয়। তখন হটনিউজ২৪বিডি.কমের প্রতিবেদক আটককৃতদের সঙ্গে কথা বলেন। কিলিং মিশনের নেতৃত্ব দানকারী জাকারিয়া হোসেন জনি হটনিউজ২৪বিডি.কমকে খুনের পুরো বর্ণনা দেন। এ সময় জনি বলেন, ‘দুই মাস আগে গাজীপুর এলাকায় একটি ডাকাতি করা হয়। সেখানে আমরা চারজন অংশ নিয়েছিলাম। ডাকাতির টাকা ভাগ করতে গিয়ে নিজের ভাগে বেশিরভাগই রেখে দেয় সাজু। এর কয়েকদিন পর শুনতে পাই সুমনের প্রথম স্ত্রী লাকীর সঙ্গে সাজুর পরকিয়ার কথা। সুমন বিষয়টি জানার পর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়। রফিকও জানতে পারে তার স্ত্রীর সঙ্গে সাজুর অবৈধ মেলামেশার খবর।’

জনি বলেন, ‘চার বছর ধরে মেলামেশার ফলে তাকে চিনতে পেরেছি। সে একটা ধুরন্ধর প্রকৃতির লোক। আগে সে ট্রাকচালক ছিল। সে এক বাসায় দুই চার মাসের বেশি থাকে না। তাকে অনেকদিন ধরে মারার পরিকল্পনা ছিল আমার। কিন্তু কাউকে সঙ্গী পাচ্ছিলাম না। কিছুদিন আগে নবাবগঞ্জের চুরাইন বাজারে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করার পর তাকে মেরে ফেলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। কিলিং মিশনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডাকাত নাসির, সুমন-২ ও তার স্ত্রী আফসানা। ব্যাস খেইল খতম।’

লোমহর্ষক খুনের বর্ণনা দিতে গিয়ে জনি বলেন, ‘২২ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার মধ্যে নাসির, আফসানা, সুমন, সুমন-২ ও রফিকসহ আমি সাজুর বাসায় যাই। বাইরে থেকে এক প্যাকেট করে খিচুড়ি নিয়ে বাসায় ঢুকি। সঙ্গে গরুর ভুনা মাংস। ইয়াবা ও ফেনসিডিলও নিয়ে যাই। আগে থেকেই সবাই মাদক গ্রহণে অভ্যস্ত ছিলাম। রাত ১১টার দিকে সাজু খিচুড়ি খাওয়ার পর প্রথমে ফেনসিডিল ও পরে ইয়াবা সেবন করে। বেশি সেবন করায় বিছানায় ঢলে পড়ে সে। প্রথমে আমি ও আফসানা মিলে সাজুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করি। এরপর আফসানাকে ডাইনিং রুমে পাঠিয়ে দিয়ে সাজুর স্ত্রী রঞ্জু বেগমকে দুজন মিলে ধর্ষণ করি। এরপর তাকেও মেরে ফেলি একই কায়দায়। বাচ্চারা টের পেয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করবে, এ জন্য তাদের দুজনকেও হত্যা করি। তবে বাচ্চাদের মারার সময় আমরা সকলেই ছিলাম। কোনো ক্লু রাখব না, এটা ভেবেই সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ভাঙা মোবাইল ফোনটা রেখে গেছে সুমন-২। এতেই আমরা ধরা পড়লাম। মজিদের কোনো দোষ নেই। সে আমাদের কাছে ইয়াবা বিক্রি করেছিল।’

জনির ভাষ্য অনুযায়ী সবার ঠিকানা- জাকারিয়া হোসেন জনি, বাবা: আব্দুর রহিম খাঁ, গ্রাম: কাঠালবাড়ী, শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ। সুমন, বাবা: জহির আলী, গ্রাম: ডিগ্রিপাড়া, থানা: গোপালপুর, জেলা: টাঙ্গাইল। মজিদ, বাবা: নেওয়াজ আলী, গ্রাম: বাঘাপুর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা। রফিক, বাবা: হোসেন আলী, গ্রাম কুরিয়া খালপাড়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

মুক্তাকে কেন আটক করল পুলিশ, এ প্রশ্নের জবাবে জনি বলেন, ‘সাজুর বাসার একটি ফ্রিজ, একটি খাট, একটি শো-কেসসহ কিছু হাড়িপাতিল মুক্তার বাসায় রেখে আসি। এ অভিযোগে মুক্তাকে আটক করে পুলিশ। মুক্তার স্বামী মোহাম্মদ আলী সৌদি আরবে থাকেন।’

আটককৃত জনির মা শাহেদা আক্তার আম্বিয়া হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘ছেলে যে এতগুলো খুন করেছে, তা আগে জানতাম না। জনির শাশুড়ি আমাকে ফোন করে বলে যে, জনি পাগল হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। ওকে নিয়ে যান। ওর কী হয়েছে? ওই খবর পেয়ে জনিকে নিয়ে আসি। পরে পুলিশ আমাকেসহ জনিকে আটক করে নিয়ে আসে।’ আপনার ছেলে তো, খুনি এর বিচার চান কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই হত্যার বিচার চাই। তবে শুধু জনির একার না। যারা জড়িত ছিল, তাদের সবার বিচার চাই।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top