সকল মেনু

একজনই সর্বেসর্বা বাংলাদেশে : ইকোনমিস্ট

  ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশে মূলত একজন দেশ চালাচ্ছেন। তিনি (শেখ হাসিনা) দেশের সর্বেসর্বা। বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রধানসহ দলটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাকে আরো পাকাপোক্ত করছেন তিনি। শুক্রবার বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ প্রকাশিত ‘পলিটিক্স ইন বাংলাদেশ: ওয়ান অ্যান্ড অনলি ওয়ান’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ সব কথা বলা হয়েছে।  প্রতিবেদন বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিয়োগপ্রাপ্ত এক বিচারকের অপসারণের দাবিতে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। এ থেকে স্পষ্ট জিয়া এখন আদালতের কাঠগোড়ায়। সরকারি আইনজীবীদের অভিযোগ, প্রয়াত স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের (যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে সেনা কমান্ডার ও পরে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন) স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণের নামে  সরকারি অর্থ তছরূপ করেন মিসেস জিয়া। যদি এ মামলায় দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে দেশের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান এই নারীকে জেলে যেতে হতে পারে।

আর আদালত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচন বয়কট করায় অপ্রত্যাশিতভাবে জিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্ব হিসেবে ইতিমধ্যে ৮ মাস পার করেছেন হাসিনা। নির্বাচনের সময় বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি ও বিএনপির মিত্র জামায়াতে ইসলামীকেও বিভিন্ন মামলা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল হাসিনার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

তথা কথিত বিরোধী দল সাজিয়ে নির্বাচন করায় শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের বিজয় হয়েছে। স্নায়ুচাপের মধ্যে শুরু এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবির প্রেক্ষাপটে হাসিনার সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার পথে এগোচ্ছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা শেখ হাসিনার শাসনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর দারিদ্র্য দ্রুত কমে গেছে। ২০০৬ সালে বেগম জিয়ার দুঃশাসনের অবসান হওয়ার প্রাক্কালে যে অর্থনীতি ছিল তা বর্তমানে দ্বিগুণ হয়েছে।

ওই সময় ঝগড়ারত দুই বেগমকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছিল। অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনী বুঝতে পারে শাসন ক্ষমতা উপভোগ্য নয়, যেটা তারা কল্পনা করেছিল। তারা প্রত্যাবর্তন করেছে। জাতিসংঘের শান্তি মিশন থেকে তারা বছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার সহজে আয় করতে পেরেছিল, অস্ত্রের বাজেট বেড়েছিল সুন্দরভাবে, এবং সেনাবাহিনীর ব্যবসায়িক পোর্টফলিওর নতুন সংযোজন হয়েছে বিলাসবহুল হোটেলে থেকে গবাদি পশুর খামার পর্যন্ত।

এখন শেখ হাসিনার সরকার বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তার সরকারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের সমালোচক ও বিশেষজ্ঞদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করারই পূর্ব পরিকল্পনা। সংসদের এক-তৃতীয়াংশ জনমত নিয়ে সাবেক স্বৈরশাসক মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি সরকারের বিশ্বস্ত বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করছে। বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধান সংশোধন বিল পাস করা হয়েছে।

এটি বিএনপির অপছন্দ ছিল, তবে এজন্য তাদের পরবর্তী নির্বাচন ২০১৯ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এমন পরিস্থিতি দাবি করে যে, আওয়ামী লীগ তাদের ইচ্ছাকে কেন্দ্রীভূত করছে। যদিও অর্থনীতিতে ধীরগতি বিরাজ করছে, ব্যাংকিং খাতে কালো ছায়া, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নড়বড়ে, তবে তেমন কোনো সংকট দৃশ্যমান নয়।

কিছু ক্ষেত্রে সরকার বিচক্ষণ হয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া বিতর্কিত ট্যাইব্যুনালের মাধ্যমে প্রলম্বিত করে রেখেছে সরকার।

জামায়াতে ইসলামীর প্রায় সবাইকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে লঘু শাস্তি দিয়েছে। গত বছর সাঈদীর দণ্ডাদেশের রায়ের পর রাজপথে ব্যাপক সহিংসতার সূত্রপাত হয়।

সর্বশেষ রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ স্থগিত এ সংকেত দেয় যে, সরকার এটাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে সুবিধামত ব্যবহার করছে।

সাম্প্রতিক জনমত জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে সরকার আশ্চর্যজনকভাবে নির্বাচনের পূর্বের সময়কালের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। তবে বিএনপি বলছে, তারা এ ধরনের জনমতে দ্বিধান্বিত। তাদের মতে, তারা বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেছে। যেখানে বিরোধী দল নেই কিংবা এর কোনো বিকল্পও নেই তখন সরকার কেন জনগণের মতামত লুট করল? সম্ভবত: এ জনমত সরকারের অদৃষ্টের প্রতিচ্ছবি।

সংসদের বাইরে থেকে এবং রাষ্ট্রের দেওয়া নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়াই এ ধরনের ঝাপসা পরিস্থিতিতে বিএনপি কিভাবে উঠে আসবে। উপদেষ্টা বিশেষ করে যারা জিয়াউর রহমানের কাছের মানুষ ছিলেন তাদের পরামর্শ অনুযায়ী নির্বাচন বর্জনকে সঠিক মনে করেন বেগম জিয়া। তিনি দল সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন যাতে লন্ডনে নির্বাসিত তার ছেলে তারেক রহমান রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারেন। বেগম জিয়া ঘোষণা দিয়েছেন তিনি প্রতিশোধে আগ্রহী নন।

যদিও তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন কিছু সংখ্যক তরুণকে দলে টানতে সাহায্য করবে, তবে তার পদমার্যাদা দেশে বিএনপিতে ভাঙ্গনের সৃষ্টি করবে এবং বিদেশে বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়বে।

২০০৮ সালে উইকিলিকসে ফাঁস হয়ে যাওয়া আমেরিকান কূটনীতিকদের মন্তব্য ছিল, ‘বাংলাদেশে যা দুর্নীতি হচ্ছে তার জন্য তারেক রহমান ও তার সঙ্গীদের দায়ী করা যেতে পারে।’ তারেক রহমানের রক্ষকরা বলছেন, যে দুর্নীতির জন্য তাকে ব্যাপকভাবে দায়ী করা হয়েছে সেটা মূলত; তারা করেছে যারা তারেক রহমানের সঙ্গে সম্পর্কের অব্যবহার করেছে।

কংগ্রেস নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার সঙ্গে গান্ধী পরিবারের মতো তেমন বন্ধনে আবদ্ধ হননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ইসলামী জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী মোদি।

সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে চীন সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে। যা বাংলাদেশ এর আগে কখনই পায়নি। জাপান ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। রাশিয়া এবং বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। যদিও এটা তারা কখনও করতে পারবে কি না সন্দেহ।

শেখ হাসিনার পিতা এবং দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নামে চালু হতে যাওয়া উপগ্রহের জন্য বিদেশিরা দর প্রস্তাব দিয়েছে।

সর্বোপরি অন্যভাবে বলা যায়, একটি বিতর্কিত নির্বাচনের পরও শেখ হাসিনা ন্যায্য জায়গায় বসেছেন। কার্যকরী বিরোধী দল ছাড়া তিনি কিছুটা চাপে রয়েছেন।

একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যদি উপলব্ধি করেন, একটানা তৃতীয় মেয়াদে ২০১৯ সালে বিজয়ী হওয়া কঠিন হবে, তাহলে তিনি তার শাসন আরো দীর্ঘায়িত করতে আগাম নির্বাচনের আহ্বান করতে পারেন। বর্তমানে এক বেগমই অবিরাম যুদ্ধে জয়ী হয়েই যাচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top