সকল মেনু

খুলনা বিভাগে ১০ জেলায় পাটের লক্ষ্যমাত্রা আর্জিত হয়নি

 ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : এ বছর ঝিনাইদহসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। পাটের বাজার ভালো থাকার পরও বিঘা প্রতি পাটের ফলন কম হওয়ায় লাভবান হতে পারছেন না পাট চাষিরা। পাট চাষি এবং বিভিন্ন বাজারের পাট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলাসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১লাখ ৯৩হাজার ১শ ৭০হেক্টর জমিতে। আর পাট উৎপাদন হয়েছে ১লাখ ৮৩হাজার ৫শ ৩৬হেক্টর জমিতে। সব থেকে বেশি পাট উৎপাদন হয়েছে কুষ্টিয়া জেলায় ৩৫হাজার ৩শ ৩৫হেক্টর জমিতে। আর কম পাট উৎপাদন হয়েছে বাগেরহাট জেলায় ১হাজার ৪শ ৩৬হেক্টর জমিতে। ৩২হাজার ৭শ ৩০হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন করে মাগুরা জেলার অবস্থান তৃতীয়।

এ ছাড়া যশোর জেলায় ২১হাজার ৮শ ৮০হেক্টর জমিতে, নড়াইলে ১৮হাজার ৩শ ৫০হেক্টর, খুলনা জেলায় ১হাজার ৮শ ২০হেক্টর, সাতক্ষীরা জেলায় ১০হাজার ৬শ ৫৫হেক্টর, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১৮হাজার ১শ ৫০হেক্টর, মেহেরপুর জেলায় ২৩হাজার ৩শ ৯৫হেক্টর এবং ঝিনাইদহ জেলায় ১৯হাজার ৭শ ৮৫হেক্টর জমিতে কৃষকরা পাট চাষ করেছেন।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাট চাষকে ত্বরান্বিত করতে গত বছর কৃষকদের নিকট ৯শ ৮০টি রিবনার এবং নগদ ৭৬লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

পবহাটি গ্রামের কৃষক শিমূল হোসেন জানান, বাজারে ভালো পাট বর্তমানে ১৪/১৫’শ টাকায় মন বিক্রি হচ্ছে। তবে সময় মত পাটে সেচ না দেওয়া বা বৃষ্টি না হওয়ার কারনে বিঘা প্রতি ফলন কমে ৭/৮ মন হয়েছে।

সদর উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের পাটচাষী আতিয়ার রহমান জানান, তার ৩ বিঘা জমিতে এবার ২০ মন পাট হয়েছে। গতবছর ফলন হয়েছিল প্রায় ৩৫ মন। এতে উৎপাদন খরচের টাকা ওঠানোই দূঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। আগামীতে আর পাট চাষ করবেন না বলে তিনি জানান।

মাগুরা জেলার লাঙ্গলবাঁধের কৃষক আশরাফুল ইসলাম, আশাদুল হক, আব্দুল মমিনসহ একাধিক কৃষক জানান, পাট জাগের জন্য পানির অভাব দূর করতে রিবণ রেটিং পদ্ধতি আশা জাগিয়ে ছিল। কিন্তু এ পদ্ধতিতে অতিরিক্ত শ্রমিকের দরকার হয়। তাও আবার রিবনারে পাট ছড়াতে শ্রমিকেরা অভ্যস্থ নয়। তারা পুরাতন পদ্ধতিতেই পাট জাগ দিতে অভ্যস্ত। আর এ পদ্ধতিতে পাট জাগ দেয়ার জন্য এবার পানি কিনতে হয়েছে। ফলে পাটের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে।

এ বিষয়ে উপ-সহকারি কর্মকর্তা শাহিন আলম জানান, পানির অভাবে পাট জাগ দিতে কৃষকদের একটু সমস্যা হয়েছে। যারা পানি কিনে পুকুরে পাট জাগ দিয়েছে তাদের খরচ বেশি হয়েছে। তবে কৃষকরা যদি রিবন রেটিং পদ্ধতি গ্রহন করেন তবে তারা লাভবান হতেন। কারন ঝিনাইদহ পাট উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগি।

আর রিবনারের মাধ্যমে পাট জাগ দিলে অল্প পানিতে এবং অল্প জায়গায় খুব সহজেই পাট জাগ দিতে পারেন। এ জন্য প্রতি বছরই পাট চাষিদের বিশেষ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে থাকেন কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাসও একই কথা জানান। তিনি বলেন, কৃষকরা রিবন রেটিং পদ্ধতি গ্রহন করলে নদী, পুকুর, ডোবার পানির জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। কৃষক তার প্রচলিত নিয়ম থেকে বেরিয়ে আসতে চায় না। তাই রিবন রেটিং পদ্ধতিতে তাদের আগ্রহ কম।

কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক হজরত আলি জানান, কৃষকদের রিবন রেটিং পদ্ধতি গ্রহণে আগ্রহ সৃষ্টি এবং উৎসাহ দিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং আগামিতেও তা করবে কৃষি বিভাগ। আর ফলন বিপর্যয় ঘটেছে এটা কিন্তু সরাসরি বলা যাচ্ছে না। কারণ এ সমস্যার পরও অধিকাংশ কৃষকই ভালো ফলন পেয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top