সকল মেনু

চাঁদপুরে পদ্মা- মেঘনায় ইলিশ বিলুপ্তির আশংকা

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: ইলিশ রক্ষা নিয়ে এতা সভা-সেমিনার, আন্দোলনের পরও  ইলিশ  রক্ষা করা যাচ্ছে না। অভয়আশ্রম ঘোষনা, মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা ধরা বন্ধ সহ সরকারের গৃহিত পদক্ষেপ থেকে তেমন সুফল না আসায় ধীরে ধীরে পদ্মা-মেঘনা ইলিশ শুণ্য হয়ে পরছে বলে ধারনা করছেন ব্যবসায়িরা। শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশেও প্রচারিত যে ইলিশের শহর চাঁদপুর । কিন্তু বিগত প্রায় অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন ইলিশের রাজধানি হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরের বড় ষ্টেশন এলাকার  ইলিশ ব্যাবসায়িরা। ৭-৮ বছর যাবৎ নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে কম। এ বছর ভরা মৌসুমের শেষের দিকে এসে কিছু ইলিশ মিললেও তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছেনা আড়ৎদাররা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মেঘনাপাড়ে ইলিশ উত্তোলন ঘাটে কয়েকটি মাছের ট্রলার থেকে শ্রমিকরা মাছ উপরে উঠাচ্ছে। এক সময় এ ঘাটে ইলিশ মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০ টি ট্রলার থেকে একসাথে ইলিশ  নামানো হতো। ১ কেজি সাইজের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকায়। অন্যদিকে ৫’শ থেকে ৭‘শ গ্রামের মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ২৮ হাজার টাকা মন । এখন ঘাটে যে পরিমান মাছ আসছে তা অতীতের ১২ থেকে ১৫ ভাগের এক ভাগ। প্রতি বছর গড়ে ৫০ থেকে ৬০ মণ মাছ কম ধরা পরছে। চাঁদপুর থেকে ইলিশ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। মাছের আমদানি কম হওয়ায় দামও অনেক চড়া।  জেলা মৎস্য ও বণিক ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ মিজানুর রহমান কালু ভুইয়ার সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, এক সময় এ নদীতে প্রচুর পরিমান ইলিশ ধরা পরতো। বর্তমানে আগের মত ইলিশ না থাকায় ইলিশ ব্যাবসায়িরা অধিকাংশ হতাশ হয়ে পড়েছেন। অনেকে ইলিশের আড়ৎ বন্ধ করে দেওয়া উপক্রম হয়েছে। ইলিশ চাঁদপুরের নদীতে এখন তেমন আসেনা। কারণ নানান ভাবে পানি দূষিত হচ্ছে। মাছের ডিম্বানু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই জাটকা ইলিশ রক্ষা করা অনেক কঠিন হয়ে পরেছে। জাটকা ইলিশ রক্ষা অভিযানের মৌসুমে সরকার, জেলা প্রশাসন, জেলা মৎস্য বিভাগ, কোষ্ট গার্ড , নৌ-ফাঁড়ি, সহ প্রশাসনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা যথেষ্ঠ আন্তরিক থাকলেও লোকবল ও কিছু অ-সাধু জেলেদের কারণে নদীতে জাটকা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পরে। যেসব পয়েন্ট ইলিশের অভয়ারন্য হিসেবে গন্য করা হয়ে থাকে সেখানে প্রশাসনের পাশাপাশি যদি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণ্য- মান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে  কমিটি করে দেয়া হয় তাহলে জাটকা ইলিশ রক্ষা অভিযান ফলপ্রসু হবে বলে তিনি আশা ব্যাক্ত করেন। এ বিষয়ে কয়েকজন জেলেদের সাথে আলাপ কালে তারা জানায়, জাটকা ইলিশ ধরার জন্য প্রথমে কারেন্ট জাল বন্ধ করতে হবে। একদিকে আইনের দোহাই দিয়ে কারেন্ট জাল বাজারে দেদারছে বিক্রি হবে অন্যদিকে জেলেদের জেল জরিমানা করা হবে- তা হয় না। অনেকে অভিযোগের সুরে বলেন, যে সময় জাটকা চালের কার্ড তালিকা করা হয় তখন অনেক প্রকৃত জেলেরা কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়। যাদের মাধ্যমে কার্ড বিতরনের দায়িত্ব দেওয়া হয় তারাই অনিয়ম করে সরকারকে দোষি করে । কার্ড না পেয়ে সরকারি আদেশ অমান্য করে অনেক জেলে পেটের টানে নদীতে নামে। আবার কিছু অসাধু জেলে রয়েছে তারা কার্ড পাওয়ার পরেও নদীতে নেমে জাটকা ধরে। প্রশাসন যদি ওইসব জেলেদের চিহ্নিত ও কারেন্ট জাল চিরতরে বন্ধ না করে তাহলে ইলিশ রক্ষা করা যাবেনা।  বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মা ইলিশ ও জাটকা  রক্ষা না হওয়ায় ধীরে ধীরে নদীতে মাছ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে এক সময় হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে ইলিশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top