সকল মেনু

মাগুরায় পাট নিয়ে দিশেহারা কৃষক

  মাগুরা, প্রতিনিধি : পাটের বাজারে ধস নামায় বিপাকে মাগুরার পাটচাষিরা। হাটে পাট এনে বিক্রি করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন তারা। উৎপাদন ব্যয় ওঠাতে না পেরে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন পাটচাষিরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু ভারতে পাট রপ্তানির অনুমতি, সরকারি ক্রয় কেন্দ্র বন্ধ ও সরকারের অদক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে এর নায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষক। মাগুরা সদরের আলোকদিয়া এলাকার পাটচাষি মানক বিশ্বাস জানান, দৈনিক সাড়ে তিন থেকে চার’শ টাকা মজুরিতে শ্রমিক নিয়ে এ মৌসুমে পাটচাষ করেছেন। এখন উৎপাদিত পাট বিক্রি করে তিনি লাভের হিসেব মেলাতে পারছেন না। তার মতে,  জেলার লাখ লাখ কৃষকেরও এই একই অবস্থা। তারা বলছেন, গত কয়েক বছরে কৃষি উপকরণের দাম বাড়ার পাশাপাশি- কমেছে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের দাম। ফলে, দিনদিনই অলাভজনক খাতে পরিণত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে।

জানা যায়, আগস্টের শুরু থেকেই জেলার চারটি উপজেলায় পাটের দাম কমতে শুরু করে; বর্তমানে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে  মণপ্রতি গড়ে তিন-চার’শ টাকায়। গত জুলাইয়ে প্রতিমণ পাট যেখানে বিক্রি হয়েছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায়; এখন তার দাম এক হাজার টাকা। সুতি ও তোষা পাটের পাইকারি দাম আরো কম।

সর্বোপরি, ক্রেতার অভাবে উৎপদিত পাট বিক্রিই করতে পারছেন না স্থানীয় কৃষকরা। এতে তাদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে বলেও জানান ভূক্তভোগী কৃষকরা। অন্যদিকে, সব রকমের নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

মাগুরা কৃষি বিভাগ জানায়, গত বছর জেলায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়। ন্যায্য মূল্যে তা বিক্রির সুযোগ পাওয়ায়, এ বছর গতবারের তুলনায় ১১ হাজার ৬৭৫ হেক্টর বেশি জমিতে এ ফসলটি  করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। সে হিসেবে জেলায় ৪ লাখ ১৭ হাজার ১২৬ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু ভারতে কাঁচা পাট রপ্তানির সুযোগ এবং আর্থিক সংকটে সরকারিভাবে পাট কেনা বন্ধ থাকায় বাজারে এ ধস নেমেছে।

আবার, উৎপাদিত পাট কৃষকের গলার ফাঁস হলেও, এ থেকে ফায়দা লুটছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। দর বেশি দেখিয়ে ব্যাংক থেকে বাড়তি টাকা তুলে কম দামে কিনে মজুদ করছে শিপারস্-বেলার্সরা।

মাগুরা সদরের পাটচাষি আবু জাফর আক্ষেপ করে বলেন, বাজারে পাটের কোন চাহিদা নেই; তাই তা বিক্রি করা যাচ্ছে না। অথচ আমাদের হাতে যখন পাট থাকবে না তখন এর দাম বাড়বে। তাতে কৃষকের কোনো লাভ হবে না।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাটের সোনালী অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও- তা রয়ে গেছে কাগজে কলমেই। এর পেছনে সরকারের অদূরদর্শিতা ও অব্যবস্থাপনাকেই  দায়ী করছেন তারা। আর, এর প্রভাবও সুদুরপ্রসারী হবে বলে আশঙ্কা করছেন, চাষীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top