সকল মেনু

তৃণমূল কংগ্রেসের টাকায় জামায়াতের সন্ত্রাস!

  হটনিউজ ডেস্ক,ঢাকা: বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করতে কাজে লাগানো হয়েছে ভারতের সারদার কোটি কোটি টাকা। আর তার সঙ্গে জড়িত তৃণমূল সংসদ সদস্য আহমেদ হাসান ইমরান। এ ব্যাপারে ভারতের কাছে সরকারিভাবে অভিযোগও জানিয়েছে বাংলাদেশ। এমন রিপোর্টই প্রকাশ করেছে কলকাতার ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১২-১৩ সালে ইমরানের মাধ্যমে ভারত থেকে দফায় দফায় বিপুল পরিমাণ অর্থ পৌঁছেছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের নানা শাখা সংগঠনের হাতে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরু করার পর বাংলাদেশে দাঙ্গা, নাশকতা ও সন্ত্রাস শুরু করেছিল মৌলবাদীরা। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দিলে ‘হেফাজতে ইসলাম’ এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। তারা ঢাকা অবরোধ করে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করেছিল। সেই কাজে ইন্ধন জোগাতেই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। যার একটা বড় অংশ সারদা অর্থলগ্নি সংস্থার। তবে এ বিষয়টি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে বলে পত্রিকাটি দাবি করে। ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্টও এই বক্তব্যকে অনেকটাই সমর্থন করছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে অবশ্য এই দাবিও করা হয়েছে যে, ইমরানের মাধ্যমে অর্থের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকের বেশ কয়েকটি চালানও ভারত থেকে পৌঁছে জামায়াতের হাতে।

ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, সারদার বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্সে টাকার বান্ডিল ভরে তা নিয়ে যাওয়া হতো বনগাঁ, বসিরহাট, নদিয়া, মালদহ, বালুরঘাট ও কোচবিহারের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে। তারপর তা বাংলাদেশি টাকা, ডলার বা ইউরোয় পরিবর্তন করে জামায়াতের এজেন্টদের হাতে তুলে দেয়া হয়। তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষও ইডিকে লেখা চিঠিতে সারদার অ্যাম্বুলেন্সে করে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কাছে টাকা চালানের কথা জানিয়েছিলেন।

এছাড়া, হাওয়ালা ও হুণ্ডির মাধ্যমেও সারদার টাকা জামায়াতের হাতে আসে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জামায়াত পরিচালিত বেশকিছু হাসপাতাল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বেনামে টাকা লগ্নি করেছে সারদা। সেই অর্থও জামায়াতের ‘জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন’-এই খরচ হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু উর্দুভাষী নেতার দহরম মহরম শুরু হয়। ২০১১ সালের ভোটে সীমান্ত এলাকায় জামায়াত কর্মীরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করে। সে সময় তৃণমূলকে অর্থেরও যোগান দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী।

গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেই সুসম্পর্ক থেকেই পরবর্তীকালে জামাতকে তৃণমূল শুধু পাল্টা সাহায্যই করেনি, তিস্তা চুক্তি ও স্থল সীমান্ত চুক্তি আটকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকেও বিপদে ফেলার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ সংক্রান্ত নীতির বিষয়ে মমতা বরাবর জামায়াতের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখা উর্দুভাষী নেতাদের মতামতই মেনে চলেছেন বলে গোয়েন্দা রিপোর্টের দাবি।

এ বিষয়ে রাজশাহীর সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা আনন্দবাজারকে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিজেদের নেতাদের বিচার বানচাল করতে বাংলাদেশ জুড়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস শুরু করেছিল জামায়াতে ইসলামী। রেললাইন উপড়ে, বাস-ট্রেন জ্বালিয়ে অজস্র মানুষকে হত্যা করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘রাজশাহী ও সাতক্ষীরার মতো সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে এই সন্ত্রাস মাত্রাছাড়া হওয়ায় ভারত থেকে অস্ত্র-বিস্ফোরক ও অর্থ আসার বিষয়ে আমরা সন্দিহান হই। পরে পুলিশ ও আধাসেনারা এই সব জায়গায় অভিযান চালিয়ে বহু মৌলবাদীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকেই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।’

সাতক্ষীরার সংসদ সদস্য মুস্তাফা লুৎফুল্লা বলেন, ‘জামায়াতের দুষ্কৃতিকারীরা পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে। সেখানে শাসকদলের নেতারা তাদের আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করছে বলে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট খবর আছে। সন্ত্রাসের সময়েও সীমান্ত পার থেকে নিয়মিত অর্থের জোগান পেয়েছে মৌলবাদীরা।’

এসব কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতেই প্রাক্তন সিমি নেতা বর্তমান তৃণমূল সংসদ সদস্য ইমরানকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, ‘সিমিকে নিষিদ্ধ করার সময়ে মমতা কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন। তিনি সবই জানতেন। তারপরও কেন তিনি ইমরানকে রাজ্যসভায় পাঠালেন?’

তার দাবি, জামায়াতের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই তৃণমূল নেত্রী এই প্রার্থী বাছাই করেছেন। মমতার এই কাজকে ‘দেশদ্রোহ’ বলে মন্তব্য করেন বিজেপির এ নেতা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top