সকল মেনু

শুল্ক ফাঁকির কৌশল শনাক্তে আটকে আছে এনবিআর

 অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: বিদেশি পণ্য আমদানি কিংবা দেশি পণ্য রফতানিতে শুল্ক ফাঁকি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নেওয়া বিভিন্ন কৌশল ভেস্তে যেতে বসেছে।
যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে শুল্ক ফাঁকি রোধে নতুন নতুন পরিকল্পনা এখনও আলোর মুখ দেখছে না। যার একটি হলো রিস্ক ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি (ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা)।  মাঠ পর্যায়ে কাস্টমস হাউজগুলোর অনীহার কারণেই এ প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। পদ্ধতিটি হাতে নেওয়ার প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়ন থেকে বেশ দূরে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এনবিআরের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার মতে, আমদানি শুল্ক ফাঁকি রোধে নতুন কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতির বাস্তবায়ন জরুরি। তা না হলে শুল্ক ফাঁকির মহোৎসব আরো বাড়বে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রাজস্ব আদায়ের ওপর। এর আগে গত বছরের শুরুতে ঢাকা কাস্টমস হাউস শুল্ক ফাঁকির বিষয়ে দীর্ঘ গবেষণা শেষে শুল্ক ফাঁকির ২৬ কৌশল চিহ্নিত করে। যাকে শুল্ক ফাঁকির ঝুঁকি হিসেবে দেখে প্রতিষ্ঠানটি। এনবিআরের গবেষণায় দেখা গেছে, শুল্ক ফাঁকির জন্য আমদানিকারক এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদেরকেই সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শুল্ক ফাঁকির ঝুঁকিকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ হয়েছে। পর্যায়গুলো হলো- উচ্চ ঝুঁকি, মধ্যম ঝুঁকি ও নিম্ন ঝুঁকি । মোট ২৬টি ঝুঁকির মধ্যে ১৫টি উচ্চ ঝুঁকি, ৮টি মধ্যম ঝুঁকি এবং ৩টি নিম্ন ঝুঁকি রয়েছে। শুল্ক ফাঁকির প্রধান পন্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে, জাল বন্ড লাইসেন্স দাখিলের মাধ্যমে শূন্য শুল্ক হারের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া, আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং ফ্রেইট ফরওয়ার্ডস এজেন্ট কারসাজি করে ইউডি জালিয়াতির মাধ্যমে শুল্কমুক্তভাবে পণ্য খালাস করা, আমদানিকারক এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট দুর্নীতি করে জাল ইউডি টেম্পারিং করে অতিরিক্ত প্রাপ্যতা প্রদর্শন করা, নিজেকে বন্ড লাইসেন্সধারী দাবি করে জাল এলসি মাধ্যমে বি/ই দাখিলের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া, ডিরেক্ট পারচেজ প্রক্রিয়ায় আনীত পণ্যের ক্ষেত্রে জাল এলসি প্রদর্শন করে কর ফাঁকি, প্রকৃত ওজনের তুলনায় কম ওজন দেখিয়ে ফাঁকি, ওষুধ আমদানির ক্ষেত্রে ব্লক লিস্ট দাখিল করে শুল্ক ফাঁকি, ইনভয়েসে মিথ্যা এইচএস কোড ঘোষণা করে শুল্ক ফাঁকি, আইজিএম পণ্যের মিথ্যা বর্ণনার মাধ্যমে ফাঁকিসহ ২৬টি কর ফাঁকির কৌশল।

এর ওপর ভিত্তি করে ২০১৩ সালের জুনে এনবিআরে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ফাঁকি রোধ করতে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নেয়। এরপর এনবিআর থেকে দেশের সকল কাস্টমস এন্ড ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়কে তাদের স্ব-স্ব এলাকার রাজস্ব আদায়ে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করতে বলা হয়েছিল।

সে সময় এনবিআর কাস্টমস কার্যালয়গুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ আমদানি-রফতানি পণ্য, ঝুঁকিপূর্ণ আমদানি-রফতানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট, ঝুঁকিপূর্ণ কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারী চিহ্নিত করতে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

সেই সঙ্গে চিহ্নিত শেষে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছিল। কারণ কাস্টমস হাউজগুলোর প্রতিবেদন ধরেই আমদানি শুল্ক রোধে রিস্ক ম্যানেজমন্ট প্রকল্পের আওতায় পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছিল।

কিন্তু এনবিআর থেকে কাস্টমস কার্যালয়গুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ আমদানি-রফতানি পণ্য, ঝুঁকিপূর্ণ আমদানি-রফতানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট, ঝুঁকিপূর্ণ কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারী চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরও বেশির ভাগ কাস্টমস কার্যালয়গুলো এ সংক্রান্ত কোন প্রতিবেদন এনবিআরে জমা দেয়নি।

এনবিআর সূত্রে আরো জানা যায়, গত জুলাই মাস পর্যন্ত কুমিল্লা, সিলেট, খুলনা ও চট্টগ্রাম কাস্টমস এন্ড ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়সহ মাত্র ৮ টি কাস্টমস হাউজ থেকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন এনবিআরে পাঠানো হয়েছে। তবে ৮টি কাস্টমস কার্যালয় থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেলেও তা ছিল অসমাপ্ত। প্রতিবেদন তৈরির সময় রিস্ক ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতির পুরোপুরি দিক নির্দেশনা মানা হয়নি।

প্রতিবেদনসমূহে আমদানিকারক, সিএন্ডএফ এর নাম উল্লেখ করা হলেও তা কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে তা উল্লেখ নেই। একইভাবে প্রতিবেদনে উল্লেখিত পণ্য কেন ঝুঁকিপূর্ণ, সুনির্দিষ্ট পণ্য বিগত ২ বছরে কি হারে শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে তার উল্লেখ নেই। আর এসব কারণে বর্তমানে ভেস্তে যেতে বসেছে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, কোন পণ্যে শুল্ক ফাঁকি হয়, কেন হয়, কে দায়ী এসবের সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া রিস্ক ম্যানেজমন্ট কার্যক্রম পরিচালনা বা প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এনবিআর থেকে সম্প্রতি আবারো কাস্টমস কার্যালয়গুলোতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জরুরিভিত্তিতে জমা দিতে বলা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top