সকল মেনু

চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের ব্লকসমূহ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের নতুনবাজার অংশে ৬০ মিটার এলাকায় ধস নামতে শুরু করেছে। রোববার  সকাল ১০ টার পর থেকে বাঁধের ব্লকসমূহ তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসন ‘মোল হেড’ নামে পরিচিত শহরের ওই এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।  চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধটি  ৩ হাজার ৩শ’ ৬০ মিটার প্রশস্ত। এর নতুন বাজার অংশে  ১ হাজার ৭শ’ ৩০ মিটার এবং পুরানবাজার অংশে ১ হাজার ৬শ’ ৩০ মিটার এলাকার অবস্থান।  প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই বাঁধটিই চাঁদপুরবাসীকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করে আসছে। বাঁধের পাশে ডাকাতিয়া ও মেঘনার মোহনা অবস্থিত হওয়ায় প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে এটি ঝুঁকির মুখে পড়ে। কারণ এই মোহনা দিয়েই দেশের ৯০ ভাগ নদ-নদীর পানি বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। রোববার সকাল থেকেই বড় ষ্টেশন মোল হেড এলাকায় বাঁধ হুমকির মুখে পড়ে। বাঁধের শূণ্য থেকে ৬০ মিটার এলাকার ব্লকসমূহ নদীতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে বলে জানালেন  পাউবোর কার্য সহকারি মোঃ মফিজুল ইসলাম। তিনি জানান, এসব এলাকায় নদী তীরের ব্লকসমূহ সরে যেয়ে ২৫ ফিট পর্যন্ত গভীর হয়ে গেছে। ফলে ওই এলাকাটি পানিতে তলিয়ে যাবার আশংকা রয়েছে।
চাঁদপুর পৌর কর্তৃপক্ষ খবর পেয়ে দ্রুত ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে সেখান থেকে সমস্ত স্থাপনা সরিয়ে ফেলে। পৌরসভার মেয়র নাছিরউদ্দিন আহমেদ জানালেন, বিষয়টি পানি সম্পদ মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে। চাঁদপুর শহরকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন মেয়র। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান এবং  এলাকাটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ নূরুল্ল্যাহ নূরী জানালেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জরুরি সংরক্ষণ কাজ পরিচালনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে  কাজও শুরু করেছে। বালি ভর্তি জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হচ্ছে মোল হেডে।  সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লা অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীসহ বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। তারা জানান, ৮০ মিটার এলাকাকে মারাতœক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে বালি ভর্তি জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবউল্ল্যাহ জানান, দেশের ৯৫ ভাগ নদীর পানি চাঁদপুরের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। পানির এই বিশাল ¯্রােত এসে আঘাত হানছে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধে। ফলে ব্লকসমূহ তলিয়ে যাচ্ছে।  গত কয়েকদিন ধরেই চাঁদপুরের মোল হেড এলাকায় মেঘনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন সতর্কতা সেখানে দেখা যায়নি।  সেখানে তাদের একটি কার্যালয় থাকলেও সেখানে কোন কর্মকর্তা বসেন না। একজন বৃদ্ধ এমএলএসএসকে দেখা গেছে সেখানে অবস্থান করতে। তার কাছে পানির রিডিংও থাকে না।
রোববার সন্ধ্যায় মোলহেড এলাকায় যেয়ে দেখে যায়, পাউবো কর্মকর্তাদের ছড়াছড়ি। কারণ তাদের প্রধান প্রকৌশলী এসেছেন। পাশেই নদীতে বালুভর্তি জিইও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলছিল শ্রমিকরা। ¯্রােতের তীব্রতার কারণে সেখানে কোজ বার্জ এনে রাখা যাচ্ছে না। তাই তীর থেকে টেনে নিয়ে তা নদেিত ফেলছির শ্রমিকরা। কী পরিমাণ ব্যাগ নদীতে ফেলা হবে তাও জানাতে পারেননি পাউবোর কর্মকর্তারা। বললেন, ডিজাইনের লোক আসার পর বলতে পারবেন কী পরিমাণ ব্যাগ ফেলতে হবে। বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে আনাড়ি ¤্রমিকদের দিয়ে মান্ধাতা পদ্ধতিতে যেসব ব্যাগ ফেলা হচ্ছে তা পানির নিচে থাকছে না নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে তাও বুঝা যায়নি। তবে এভাবে ব্যাগ ফেলে যে শেষ রক্ষা করা যাবে না তা মনে করছেন অনেকেই।
এদিকে চাঁদপুরের জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা এলাকাটিকে ঘিরে রেখেছে। সেখানে মাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলেও উৎসুক ও উৎকন্ঠিত মানুষের ঢল কোনভাবেই সামলানো যাচ্ছে না।  চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছিরউদ্দিন আহমেদ, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান  দেওয়ান সফিকুজ্জামান, পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ নূরুল্ল্যাহ নূরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ মাসুদ আলম সিদ্দিকী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল ইসলামসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিকভাবে সেখানে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top