সকল মেনু

দায়মুক্তি পাচ্ছেন পদ্মা সেতু দুর্নীতির সাত আসামিই!

  নিজস্ব প্রতিবেদক : পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পেতে যাচ্ছেন সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল হাসান চৌধুরীসহ সাত আসামি।  দুদকের একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আদালতে উপস্থাপনযোগ্য যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আসামিদের অব্যাহতির (নথিভুক্তি) সুপারিশ করে রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মীর্জা জাহিদুল আলম তদন্ত প্রতিবেদনটি কমিশনের মহাপরিচালকের কাছে জমা দেন।  দুদক কমিশনার (তদন্ত) সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এ বিষয়ে জানান, পদ্মা সেতু দুর্নীতি ষড়যন্ত্র মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রতিবেদনটির পরীক্ষা শেষ হলে তা কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। পরবর্তী সময়ে কমিশনের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  নাম প্রকাশ না-করার শর্তে দুদকের এক উপপরিচালক হটনিউজ২৪বিডি.কমকে জানান, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহর ডায়েরিকে ঘিরেই পদ্মা সেতু বিষয়ে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ উত্থাপিত হয়, যেখানে ঘুষ দেওয়ার পার্সেন্টেস লেখা ছিল। তাই রমেশের ডায়েরির অনুলিপি ও বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করতে না পারলে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে দুদক কানাডার কাছ থেকে ওই দুটি নথির একটিও হাতে পায়নি। তাই শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নথিভুক্তির দিকে যাচ্ছে।

যদিও এর আগে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু হটনিউজ২৪বিডি.কমকে জানিয়েছিলেন, ‘পদ্মা সেতু দুর্নীতির বিষয়ে উপযুক্ত রেফারেন্স দুদক পেয়েছে। এখন আর রমেশের ডায়েরির অনুলিপি প্রয়োজন নেই। তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আগস্টেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব বলে আশা করছি।’

দুদক সূত্রে জানা যায়, বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দুদকের প্রধান কৌঁসুলি থাকাকালে কানাডা সফরে গিয়ে কানাডার আদালতে নথিপত্রের কপির জন্য আবেদন করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদক যে নথিপত্র হাতে পায় সেখানে কোথাও প্রাক্তন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বা প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে অভিযুক্ত করা হয়নি। আর এ কারণেই তদন্ত প্রতিবেদনে ওই দুই প্রাক্তন মন্ত্রীকে অভিযুক্ত করতে পারছে না দুদক।

তা ছাড়া কানাডার আদালতে বাংলাদেশের প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে অভিযুক্ত করে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বর্তমানে তাও স্থগিত। কারণ হিসেবে জানা যায়, কানাডার আদালতে বিদেশের একজন নাগরিকের বিচার করা সম্ভব নয়। তাই তাকে বাদ দিয়েই সে দেশে বিচার কার্যক্রম চলছে।

মামলা তদন্তের বিষয়ে সূত্র জানায়, কানাডার আদালত থেকে তথ্য পাওয়ার পর অনেকটা নীরবেই প্রাক্তন দুই মন্ত্রী হাসান-হোসেনের জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করে দুদক। গত ১২ জুলাই আবুল হাসান চৌধুরীকে এবং পরদিন ১৩ জুলাই সৈয়দ আবুল হোসেনকে দুদকের বাইরে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সৈয়দ আবুল হোসেন ছয় পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তব্য দেন। তাতে তিনি আবারও পদ্মা সেতু প্রকল্পে ন্যূনতম দুর্নীতি বা দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়নি দাবি করেন। তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেন।

তাদের চতুর্থবারের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপপরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা মির্জা জাহিদুল আলম। এ ছাড়াও ঢাকায় পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনায় এ পর্যন্ত যত জনের নাম এসেছে, তাদের সবার বক্তব্য আবার নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটির বক্তব্য।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় (মামলা নম্বর ১৯) মোট সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলায় আসামিরা হলেন : সেতু বিভাগের প্রাক্তন সচিব মোশাররফ হোসেইন ভূঁইয়া, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইপিসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, কানাডীয় প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ এবং প্রাক্তন পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল।

তবে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি না-হলেও সৈয়দ আবুল হোসেন এবং আবুল হাসান চৌধুরীকে সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখা হয়েছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top