সকল মেনু

দেশবাসীসহ ছাত্রসমাজকে সতর্ক ও হুঁশিয়ার থাকার আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী

  নিজস্ব প্রতিবেদক : পাকিস্তানি ইয়াহিয়ার পা-চাটা কুকুরের দল এখনো বাংলাদেশের মাটিতে আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদের বিরুদ্ধে দেশবাসীসহ ছাত্রসমাজকে সতর্ক ও হুঁশিয়ার থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ইয়াহিয়ার পা-চাটা কুকুর এখনো বাংলাদেশে আছে। তাদের দোসররা এখনো সক্রিয়। তাদের সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে, হুঁশিয়ার থাকতে হবে।’ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রোববার বিকেলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বেলা ৩টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে বিকেলে ৫টা ১৯ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। বক্তব্য শেষ করেন সন্ধ্যা ৬টার দিকে। বক্তৃতায় ছাত্রসমাজ এবং দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। আমি যে সবহারা। শোককে শক্তিতে পরিণত করে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এতেই আমার বাবা-মার আত্মা শান্তি পাবে।’ যারা আবারো ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের মত ঘটনা ঘটিয়ে দেশের স্বাধীনতা নষ্ট করতে চায়, দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তাদের সম্পর্কে দেশবাসীসহ ছাত্র সমাজকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সম্পদের নেশায় যারা রাজনীতি করে, তারা কখনো ওপরে উঠতে পারে না। ত্যাগের মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে বিশ্বের সেরা ভাষণগুলো নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে একটি সংকলন বের হয়েছে। ওই সংকলনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ রয়েছে। বইটি আমার কাছে আছে। কিন্তু পঁচাত্তরের পর জিয়া এ ভাষণ কোথাও প্রচার করতে দেননি।’ এ ভাষণ প্রচার করতে গিয়ে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যারা সামরিক শাসকদের রোষানলে পড়ে শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে লাঠি হাতে লাখ লাখ মানুষ আর পেছনে বন্দুক হাতে পাকবাহিনী। এর মধ্যেই বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়া খুনিদের রাজত্ব কায়েম করে। যারা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে আনে। মার্শাল ল আইনে আল-শামস, আল-বদরদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা তুলে ধরেন বলেন, ‘বাঙালি জাতির যত অর্জন, তাতে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল।’ প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন তিনি নিজেও ছাত্রলীগের একজন সদস্য ছিলেন।

সমাবেশে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগ নয়, ছাত্রলীগের নামে কিছু পরগাছার জন্য আমাদের নেত্রীর সোনালী অর্জন বৃথা যেতে দেওয়া হবে না।’ বিএনপির সঙ্গে এই মুহূর্তে সংলাপের কোনো পরিবেশ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে মঞ্চে আসন না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বাণিজ্যমন্ত্রী, ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি ও ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদ সমাবেশস্থল থেকে ফিরে যান।

ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামানের সভাপতিত্বে ছাত্র সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সংসদ সদস্য তারানা হালিম।

সমাবেশে সূচনা বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ এবং শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল। সমাবেশ পরিচালনা করছেন সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।

সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সেরা ১০টি ইউনিটকে পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রথম স্থান অধিকার করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট। দ্বিতীয় হয় ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ, তৃতীয় ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ, চতুর্থ মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ, পঞ্চম সুলতানগঞ্জ ইউনিট, ষষ্ঠ টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগ, সপ্তম রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ, অষ্টম নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগ, নবম লালমনিরহাট জেলা ছাত্রলীগ ও দশম স্থান অধিকার করে যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগ।

সমাবেশে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ থেকে ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। সমাবেশের পরিধি এক পর্যায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও আশপাশের এলাকা ছড়িয়ে পড়ে।

বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে দুপুর ১২টা থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে সমবেত হতে শুরু করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মাঠ কর্দমাক্ত থাকায় বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মাঠের চারপাশে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান নেন। উদ্যানসংলগ্ন টিএসসি, শাহবাগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে গাড়ি পার্কিং করে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছাত্রলীগের এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top