সকল মেনু

কৌশলী মান্নান, মামলা হচ্ছে স্ত্রীর নামেও

 আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আবদুল মান্নান খানকে শুধু ধনবানই করেনি তার স্ত্রীকেও করেছে ধনবতী। স্বামীর মন্ত্রিত্বের পাঁচ বছরে স্ত্রী সৈয়দা হাসিনা সুলতানার সম্পদ স্বামীর সাথেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।

গত ৫ বছরে ধন-সম্পদে ‍ফুলে ফেঁপে উঠলেও শেষ পর্যন্ত পার পাচ্ছেন না তিনি। অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার জালে ধরা পড়ছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মান্নানের স্ত্রী সুলতানা।

বৃহস্পতিবার হাসিনা সুলতানার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন জমা হয়েছে। প্রতিবেদনে সম্পদ গোপন ও অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে হাসিনা সুলতানার বিরুদ্ধে।

দাখিল হওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, মান্নান খানের স্ত্রীর নামে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। এছাড়া দুদকের কাছে তিনি প্রায় ২ কোটি টাকা সম্পদ গোপন করেছেন।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে সৈয়দা হাসিনা সুলতানা সম্পদ গোপন এবং অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন করেছেন যা দুদক আইন ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অপরাধ। দুদক আইনে ২৬(২) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে ৩ বছর এবং ২৭(১) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে ৭ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মান্নান খান বিগত মহাজোট সরকারের আমলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে যে সম্পদ গড়েছেন তার বিশাল একটি অংশ রেখেছেন স্ত্রীর নামে।

দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, কমিশন (চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার নিয়ে কমিশন) এ প্রতিবেদনের আলোকে আগামী সপ্তাহে মামলার অনুমোদন দেবে।

এর আগে গত ২১ জুলাই মহাজোট সরকারের সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী মান্নান খানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলা দায়েরের দু’দিন পর নিম্ন আদালত থেকে জামিন নেন তিনি।

জামিনের পরই দুদক জানিয়েছে, উচ্চ আদালতে তার জামিন বাতিলের আবেদন চেয়ে আপিল করা হবে। এছাড়া মান্নানের স্ত্রী বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অভিযোগেও পৃথকভাবে অনুসন্ধান চলবে বলে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি থেকে জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার দাখিল হওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মান্নান খান কৌশলে তার স্ত্রীর নামে কৌশলে এসব সম্পদ গড়েছেন। পরিবারের আরও অন্যান্য সদস্যদের নামেও তার সম্পদ রয়েছে। যা মামলা পরবর্তী তদন্তে বেরিয়ে আসবে মনে করছে সংস্থাটি।

রাজউক, জেলা রেজিস্টার দপ্তর, সাব-রেজিস্ট্রি, ভূমি অফিস, ডাক বিভাগ, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, স্টক এক্সচেঞ্জ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ব্যাংক, বিমা, লিজিং কোম্পানিসহ প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধান চালিয়ে হাসিনা সুলতানার অবৈধ সম্পদ খুঁজে পায় দুদক।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মান্নান খান দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় মোট সম্পদের গড় মূল্য উল্লেখ করলেও এতে ছিল শুভংকরের ফাঁকি। মান্নান গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে যে অর্থ হাতিয়েছেন তার বিশাল একটি অংশ রেখেছেন স্ত্রীর নামে।

সৈয়দা হাসিনা সুলতানা পেশায় একজন গৃহিণী। কিন্তু মান্নান খান তার হলফনামায় স্ত্রীকে ‘ব্যবসায়ী’ বলে উল্লেখ করেন।

হলফনামায় সৈয়দা হাসিনা সুলতানার নামে গত অর্থবছরে মৎস্য চাষ থেকে আয় দেখানো হয় ৮৫ লাখ টাকা। অথচ নির্বাচনী এলাকায় মান্নান খান কিংবা তার স্ত্রীর কোনো মৎস্য খামার নেই বলে জানা গেছে। সম্প্রতি নবাবগঞ্জে হাসিনার নামে ৯৯ লাখ ৫২ হাজার ৪০৪ টাকায় একটি জায়গা কেনা হয়েছে।

২০১৩ সালের জুনে দোহার গালিমপুর মৌজায় হাসিনার নামে কেনা হয় ৩ শতাংশ জমি। যার দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা। ২০১২ সালের নভেম্বরে বকশনগর মৌজায় কেনা হয়েছে ১৯২ শতাংশ জমি। যার দলিল মূল্য উল্লেখ রয়েছে ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা।

একই সময় গালিমপুর মৌজায় কেনা হয়েছে ৮৪ শতাংশ জমি। যার দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ২৯ লাখ ৪১ হাজার ৪০০ টাকা। এসব জমি ক্রয়ে অর্থের উৎস এবং জমির প্রকৃত মূল্য নিরূপণে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক।

এছাড়া মান্নান খান তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন খাতে নগদ অর্থও বিনিয়োগ করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে রাজধানীর ধানমণ্ডির রোড নং-৯, বাড়ি নং-৬, অ্যাপার্টমেন্ট ‘এ-৫’ ঠিকানায় সৈয়দা হাসিনা সুলতানার নামে রয়েছে একটি অ্যাপার্টমেন্ট। গত বছর ‘এশিওরেন্স ডেভেলপমেন্ট’ থেকে কেনা বিশাল আয়তনের এ অ্যাপার্টমেন্টের অগ্রিম মূল্য শোধ করেছেন ৬০ লাখ টাকা। মান্নান খানের স্ত্রীর নামে পুঁজিবাজারে শেয়ার রয়েছে ২ লাখ টাকার। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৬ লাখ টাকার। অন্যান্য খাতেও অন্তত ৬০ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। মামলা পরবর্তী তদন্তে আরও সম্পদ বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে দুদক।

দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনী হলফনামার হিসাব অনুযায়ী মহাজোট সরকারের পাঁচ বছর আগেও তার সর্বসাকল্যে ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকার সম্পত্তি ছিল। অল্পদিনের ব্যবধানে তা হয়েছে ১১ কোটি তিন লাখ টাকা। আগে তার বার্ষিক আয় ছিল তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর তার আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে তিন কোটি ২৮ লাখ টাকায়। পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ১০৭ গুণ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top