সকল মেনু

সম্পর্কে থাকা চাই সীমারেখা

 শানজানা জামান : সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরও তার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ দরকার। এ ক্ষেত্রে দুজন মানুষকে-ই এই ব্যাপারে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হয়। আপনাকে সম্পর্কের খাতিরে হয়তো অনেক কিছু উৎসর্গ করতে হয়, আবার অনেক কিছু মেনেও নিতে হয়, এজন্য একটি সম্পর্ক যে সব সময়ই খারাপ হবে তা কিন্তু না।

যখন আপনি কাউকে ভালোবাসেন তখন আপনার সঙ্গীর ক্রুটিগুলো মেনে নেয়া আর তাকে খুশি করার জন্য কিছুই করতে পারেন। এমনকি নিজের জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন আনাও অনেক সহজ মনে হয়। কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে এটা কিভাবে করবেন?

নারীরা যে কোনো পরিবেশে নিজেকে সহজেই মানিয়ে নিতে অভিজ্ঞ। কারণ ছোটবেলা থেকে তারা এভাবে-ই বড় হয়। কিন্তু এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে অনেক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরস্পরের আপস করার ইচ্ছাটা হয়তো আছে, কিন্তু জানেন না কোথায় কিভাবে এটা করতে হবে। এখানে তিনটি সাধারণ উপায় দেয়া হলো যা আপনার সম্পর্ককে জীবন্ত আর সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে।

কখনো হাল ছাড়বেন না : ধরুন, আপনি মুটিয়ে গেছেন। আপনার সঙ্গী যদি আপনাকে সচেতন করার জন্য ফুটবল খেলতে বলে, বা কিছুদিন নিয়মিত জীমে যেতে বলে, তবে আপনার সঙ্গী ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু সে যদি আপনার ওজন নিয়ে সবসময় কথা বলতেই থাকে, আপনাকে নিরামিষভোজী হতে পরামর্শ দেয়, তবে সম্ভবত আপনার সঙ্গীর অন্য কারও সঙ্গ প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে সায়মা নামের একটি মেয়ে তার বাস্তব জীবনের ঘটনা শেয়ার করে বলেন, ‘আমাদের প্রায় চার বছরের সম্পর্ক ছিল। তখন তাকে খুশি রাখার জন্য সবরকমের চেষ্টা করি। একদিন নিজেকে প্রশ্ন করে দেখি, নিজের পরিচয়, নিজের ব্যক্তিত্ব তাকে খুশি করার মধ্যে দিয়ে শেষ করে দিচ্ছি। আর আমার সত্যিকারের বন্ধুরা ও কাছের মানুষগুলো অনেক দূরে সরে যাচ্ছে।’

সায়মা দেখেছেন কিভাবে জীবনের কঠিন সময় পার করতে হয়। তবে এমন সম্পর্ক থেকে সরে এসে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন তিনি। মনে রাখবেন, তিনি আপনার জন্য কখনোই উপযুক্ত নয়, যিনি আপনাকে বদলাতে চায়। এ ধরণের মানুষের জন্য নিজের সময় নষ্ট করবেন না।বরং এমন কাউকে বেছে নিন, যিনি আপনি যেমন- আপনাকে সেভাবেই ভালবাসবে।

না বলতে শিখুন : একটি সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে, শারিরীক অন্তরঙ্গতার ব্যাপার চলে আসতেই পারে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু আপনি যদি শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে প্রস্তুত না থাকেন, তাহলে সোজা তাকে না বলে দিন।

ভারতীয় মনস্তাত্তিক ডক্টর প্রভান সোনার বলেন, অনেক মেয়েরাই নিজে না চাওয়ার পরেও, মনের বিরুদ্ধে গিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যায় শুধু তার সঙ্গীকে হারানোর ভয়ে। আপনি যদি এই মুহূর্তে শারীরিক সম্পর্ক না চান তাহলে, পরিষ্কারভাবে আপনার সঙ্গীকে বুঝিয়ে বলুন। আপনাকে যদি সে সত্যিই ভালোবাসে। তার মনে যদি কটুলতা না থাকে তবে তিনি আপনাকে বুঝবেন এবং অপেক্ষা করবে।

আপনার একান্ত নিজের জগত রাখুন : আপনার নিজস্ব একটা জগত আছে। যা থাকা খুবই জরুরি। কখনোই সঙ্গীর উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। মনে রাখবেন, আপনার কাজ আপনাকেই করতে হবে।বন্ধু বান্ধব বা নিজের কোনো শখ থাকলে তার জন্য একান্ত কিছু সময় বের করুন। বান্ধবিদের সঙ্গে সময় কাটান। চাকরি করুন। নিজের শখের কাজটি করুন বা কোনো একটি ভাষা শিক্ষার কোর্সে যোগ দিন কিংবা নাচ শিখে ফেলুন! নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত একটি জীবন আপনাকে আরও স্বাধীন এবং আরও আত্মবিশ্বাসী করবে।

সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য একাই সংগ্রাম করবেন না : হতে পারে আপনার সঙ্গী অনেক ধনবান। অনেক সুদর্শন। আপনি তাকে অনেক ভালোবাসেন। কখনও একটি সম্পর্কে টিকিয়ে রাখতে এগুলোই যথেষ্ট নয়। যদি দেখেন যে, আপনি একাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, ঝগড়ার পরে আপনিই সবসময় ঠিকঠাক করছেন, সে কোন কিছুই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না তাহলে, এখন-ই সময় আপনার সরে আসার। নাহলে শেষ পর্যন্ত আপনাকে পাপোষের মতো-ই রয়ে যাবেন।

এ ব্যাপারে ডক্টর সোনার বলেছেন, আপনি যদি বুঝতে পারেন যে, সব ঠিকঠাকভাবে করার চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, তাহলে স্বপ্নের জগত থেকে বেরিয়ে আসুন। এজন্য আপনার সম্পর্ককে দুই থেকে তিন মাস সময় দিন, এরপরও সব কিছু ঠিক নাহলে এ সম্পর্ক থেকে সরে আসুন।

প্রতিটি সম্পর্কেই কিছু রেখা ঠিক মাপে টানতে হয়। তাই, যা সঠিক তাই করুন এবং নিজের মতের পক্ষে দাঁড়াতে একটুও দ্বিধা করবেন না!

তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top