সকল মেনু

বাংলাদেশে রেফ্রিজারেটর চাহিদা ১১ লাখ, উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ লাখ

 অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ন হয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে ফ্রিজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১১ লাখ। অন্যদিকে বাংলাদেশে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ লাখ। অর্থাৎ উৎপাদন ক্ষমতা চাহিদার দ্বিগুনেরও বেশি। আর এই স্বয়ংসম্পূর্ন হওয়ার সুফল পাচ্ছেন ক্রেতারা। তারা সাশ্রয়ী মূল্যে পাচ্ছেন উচ্চমানের দেশীয় পণ্য। এখাতের বাজারও এখন প্রায় পুরোপুরি বাংলাদেশে উৎপাদিত ফ্রিজের দখলে। আর এসব অগ্রগতি এটাই প্রমাণ করছে যে, বাংলাদেশে যে কোনো উচ্চমানের পণ্য তৈরি হলে বিদেশী পণ্য এখানে টিকতে পারবে না। কারণ দেশপ্রেমিক ক্রেতারা দেশীয় পণ্যকেই অগ্রাধিকার দেন।  বাংলাদেশ রেফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, গত অর্থবছরে দেশে রেফ্রিজারেটর বিক্রি হয়েছে ১০ লাখ ৭৭ হাজার। আগের অর্থ বছরের চেয়ে যা ৩২.৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে দেশে তৈরি ফ্রিজ ছিলো ৭৭.৭৩ শতাংশ (৮.৩৭ লাখ)। আমদানি হয়েছে ২২.২৭ শতাংশ (২.৪ লাখ)। আগের অর্থ বছরে আমদানিকৃত ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে ৩.১৭ লাখ। অর্থাৎ এবছর আমদানি করা ফ্রিজের বিক্রি কমেছে ৭৭ হাজার ইউনিট। পক্ষান্তরে দেশে তৈরি ফ্রিজের বিক্রি বেড়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ইউনিট।সংশ্লিষ্টদের ধারনা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে চলতি অর্থবছরে দেশীয় ফ্রিজের প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে। এবছর ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করছেন তারা। সেক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের শেষে ফ্রিজের দেশীয় বাজার ১৪ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। সেইসঙ্গে আমদানিকৃত ফ্রিজের বাজার আরো সংকুচিত হয়ে যাবে। সূত্র মতে, বাংলাদেশে ফ্রিজ উৎপাদনের বার্ষিক ক্ষমতা ২৩ লাখ। যেসব ব্র্যান্ড বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে সেগুলো হলো ওয়ালটন, মার্সেল, ইকো প্লাস, যমুনা, আরএফএল, মাইওয়ান এবং মিনিষ্টার। এর মধ্যে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৪ লাখ, যমুনা ইলেকট্রনিক লিমিটেডের উৎপাদন ক্ষমতা ৩ লাখ, বাটার ফ্লাই ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানী লিমিটেডের উৎপাদন ক্ষমতা (ব্র্যান্ডের নাম ইকো প্লাস) ২ লাখ, আরএফএল ইলেকট্রনিক্্র লি. এর উৎপাদন ক্ষমতা ৩ লাখ এবং মাইওয়ান ও মিনিস্টার ব্র্যান্ডের উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক ১ লাখ। এরমধ্যে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের পণ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রক্রিয়া চলছে ইউরোপের বাজারে প্রবেশের। বাংলাদেশ রেফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব লোকমান হোসেন আকাশ বলেন, দেশের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে একটি বড় ইতিবাচক খাত হচ্ছে রেফ্রিজারেটর। এই খাত এখন দেশে শিল্পায়নের মডেল। একসময় ফ্রিজের শতভাগ চাহিদা মেটাতে হতো আমদানি করে। এখন শতভাগ চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা অর্জনের পর বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। আমদানি করা ফ্রিজের বাজার আধিপত্য ভেঙ্গে তা এখন দেশীয় পণ্যের দখলে। সময় এসেছে বিদেশী ফ্রিজ আমদানি নিরুৎসাহিত করার। এদিকে দেশীয় ফ্রিজের বাজারের সিংহভাগ এখন ওয়ালটনের দখলে। ওয়ালটন সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপ আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে রপ্তানির জন্য তারা নতুন একটি ফ্রিজ কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। উচ্চমানের নো ফ্রস্ট তৈরি হবে ওই কারখানায়। যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৬ লাখ। এছাড়া ফ্রিজের কেমিক্যাল, মোল্ড-ডাই ও মেশিনারিজ তৈরি করছে ওয়ালটন। এসব রপ্তানির সক্ষমতাও রয়েছে তাদের। বছরে ২০ লাখ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কম্প্রেসার তৈরির প্রকল্প নিয়েও কাজ করছে ওয়ালটন।
বাংলাদেশের রেফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন এর রিসার্স সেল এর রির্পোট অনুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থ বছরের তুলনায় ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ফ্রিজের বাজার বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ । যার প্রায় ৭৮ শতাংশ দেশীয় উৎপাদনকারীদের দখলে।

অর্থ বছর    বিদেশী ফ্রিজ    দেশে তৈরি ফ্রিজ    মোট বাজার    বাজার হ্রাস/
বৃদ্ধির হার
২০১০-১১    ৭২.২৯%    ২৭.৭১%    ৭.৯৭ লাখ    ১২.৩%
২০১১-১২    ৪৯.২৫%    ৫০.৭৫%    ৭.৫৩ লাখ    -৫.৫%
২০১২-১৩    ৩৯.১৬%    ৬০.৮৪%    ৮.১১ লাখ    ৭.৬%
২০১৩-১৪    ২২.২৭%    ৭৭.৭৩%    ১০.৭৭ লাখ    ৩২.৯%

জানা গেছে, আমদানি করা ফ্রিজের বাজার হারানোর পেছনে রয়েছে উচ্চমূল্য, ক্ষেত্রবিশেষে নি¤œমানের পণ্য এবং কাঙ্খিত বিক্রয়োত্তর সেবা না পাওয়ায়। অন্যদিকে দেশে তৈরি ফ্রিজ দামে সাশ্রয়ী, মানে ভালো। হাতের কাছে মিলছে বিক্রয়োত্তর সেবা এবং প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ।
রেফ্রিজারেটর সেক্টরের এই অগ্রগতিকে দেশের জন্য অভাবনীয় সাফল্য হিসেবে দেখছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলী খান। তিনি বলেন, এটা দেশের জন্য ভালো দিক। ফ্রিজের মতো অন্যান্য পণ্যও দেশে উৎপাদন হলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। নতুন নতুন শিল্পস্থাপনের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সরকারের উচিত এক্ষেত্রে অবকাঠামো এবং আনুষঙ্গীক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top