সকল মেনু

বিচারপতি অপসারণের-ক্ষমতা সংসদের

 সচিবালয় প্রতিবেদক : সংবিধানের (ষোড়শ সংশোধন) আইন, ২০১৪-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই আইনে বিচারপতিদের অপসারণ বা অভিশংসন (ইমপিচমেন্ট বা অপসারণের অভিযোগ আনা) ক্ষমতা জাতীয় সংসদ ফিরে পাবে। এই আইন কার্যকর হলে বিচারপতিদের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে। জনপ্রতিনিধিদের প্রতি বিচারপতিদের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মোশাররাফ হোসাইন বলেন, সংবিধানের (ষোড়শ সংশোধন) আইনে বলা হয়েছে, ৩৫০ সংসদ সদস্যের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রপতির আদেশ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারপতিকে অপসারণ করা যাবে না। ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ বহাল থাকলে বিচারপতিদের অপসারণ-সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকবে না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের মালিক জনগণ। রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ— নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও জাতীয় সংসদ। এই তিনটি বিভাগের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত ছিল। সচিব বলেন, সামরিক ফরমান বলে বাহাত্তরের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। ওই সংবিধানে বিচারপতিদের ইমপিচ করার ক্ষমতা ছিল সংসদের হাতে। কিন্তু সামরিক ফরমানের বলে সেটাকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে দেওয়া হয়। সংবিধানের এই বিধান সংবিধানের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদ পরিপন্থি।

মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা আরো বলেন, রাষ্ট্রপতি, স্পিকারকে ইমপিচমেন্ট সংসদের অর্ধেক সদস্যের প্রস্তাবে স্পিকারের অপসারণ এবং দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচমেন্ট করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থার প্রস্তাব আনার ক্ষমতাও সংসদের রয়েছে।

তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে উন্নয়নশীল অনেক দেশেই এই ক্ষমতা সংসদকে দেওয়া আছে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে সংসদের হাতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে।

সচিব বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের জন্য অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছিল। ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারকদের পদের মেয়াদ শীর্ষক ৯৬ অনুচ্ছেদে ২ দফায় বলা ছিল, ‘প্রমাণিত ও অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্যসংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।’ কিন্তু প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ১৯৭৭ সালের ১ ডিসেম্বর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে অপসারণের বিধানটি কার্যকর করেন। পরে পঞ্চম সংশোধনীর সময় সংবিধানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন গেল মেয়াদের মহাজোট সরকারের আমলে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। ২০১২ সালে প্রাক্তন স্পিকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একটি রুলিং নিয়ে এক বিচারপতির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কয়েকজন সংসদ সদস্য হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন। ওই সময়ই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হয়। তখন এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিচারপতিদের ইমপিচমেন্টের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করার তাগিদ দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ এই আইনের অনুমোদন দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top