সকল মেনু

বঙ্গবন্ধুর খুনী রাশেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে এলাকার এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে হাত রাঙ্গায়

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আত্মস্বীকৃত খুনীদের অন্যতম বহিস্কৃত লে. কর্ণেল রাশেদ চৌধুরী ছাত্র জীবনে চুপ-চাপ ও শান্ত প্রকৃতির ছেলে হলেও চাকুরি জীবনে যেয়ে বদলে যায় তার জীবনযাত্রা। এলাকার মানুষ তাকে মেধাবী ও ভাল ছেলে হিসেবেই জানতো। যদিও মানুষ মারার হাতেখড়ি নিজ এলাকা থেকে নিয়েছিলেন রাশেদ। প্রথমে একজন মুক্তিযোদ্ধার রক্তে হাত রাঙ্গিয়ে পরে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার মিশনে অংশ নেয়। চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার ৬নং পূর্ব বড়কূল ইউনিয়নের সোনাইমুড়ি গ্রামের তৎকালীন মুসলীম লীগ নেতা মরহুম শিহাব উদ্দিনের ছেলে রাশেদ চৌধুরী। ৮ ভাই এক বোনের মধ্যে রাশেদ ৪র্থ। ছাত্র জীবনে আচার আচরণ ভালো ছিল। কিন্তু চাকুরী জীবনে গিয়ে বদলে গেছে রাশেদ। জানালেন রাশেদের সহপাঠিসহ এলাকার লোকজন। তারা জানান, রাশেদ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হাজীগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়েছে। এর পর সে চট্রগ্রাম চলে যায়। সেখান থেকেই এইচএসসি পাশ করার পর পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দেবার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়ে পরে সেনাবাহিনীতে কমিশন অফিসার হিসেবে চাকুরি লাভ করে। চাকুরিতে যোগ দেবার পর কয়েক মাস পর পর বাড়িতে আসতো। তখন তার বাবা-মা দু’জনেই জীবিত ছিল। এলাকায় এলেও সে ঘরের বাইরে খুব একটা বেরুতো না। সাধারণত ট্রাউজার, সাদা টি সার্ট ও পিটি সু’ পরে বিকেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গ্রামের খেতের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতো। মানুষের সাথেও খুব একটা মিশতো না। রাশেদ সুঠাম দেহের অধিকারী ও বেশ লম্বা বলেও জানালো তার এলাকার লোকজন। তার গায়ের রং কালচে শ্যামলা।  গ্রামের বাড়িতে রাশেদ চৌধুরী সব শেষ কবে  এসেছেন জানেন না তার এলাকার মানুষ। তবে কেউ বলেছেন এরশাদ শাসনামলের শেষ দিকে একবার তাকে এলাকায় দেখা গেছে। বস্তুত বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর অন্যান্য খুনীদের সাথে সে বিদেশ পালিয়ে যায়। তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পদোন্নতিসহ তার চাকুরি ফিরিয়ে দিয়েছিল খন্দকার মোশতাক সরকার। পরে আবার তাকে বহিস্কার করা হয়। সে দীর্ঘদিন কানাডায় ছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বলে জানা যায়। রাশেদের  গ্রামের বাড়িতে তার ছোট এক ভাই ছাড়া আর কেউই থাকে না। তার মা গত হয়েছে কয়েক বছর আগে। তার ভাইয়েরাও বাড়িতে আসে না। তার যে ছোট ভাই গ্রামের বাড়িতে থাকে তার নাম তোফায়েল চৌধুরী। তোফায়েলের ছেলে সাজ্জাদ চৌধুরীর বয়স আনুমানিক ২০ বছর। সে জানিয়েছে, সে তার জেঠা রাশেদ চৌধুরীকে আজো সামনাসামনি দেখে নি। কোন দিন ফোনেও কথা হয়নি।
রাশেদ চৌধুরীর বাবা মরহুম শিহাবউদ্দিনের সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইউপি সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক ও তৎকালীন আ’লীগ নেতা আঃ লতিফ মাস্টারের একটি স্কুল নিয়ে বিরোধ ছিল। তার জের ধরে রাশেদ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দুই বছর আগে ওই মাস্টারকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে ফেনীর ছাগলনাইয়া ব্রিজের নিচে ফেলে রেখেছিল্। সেই হত্যকান্ডের আজো বিচার পায়নি তার পরিবারের সদস্যরা। লতিফ মাষ্টারের বড় ছেলে আহসান হাবিব জানালো, তার বাবার হত্যাকান্ডের ব্যাপারে মামলাও হয়েছিল। সেই মামলার কারণে রাশেদকে সেনাবাহিনী থেকে বহিস্কার করা হয়। কিছুদিন জেলও খাটে। পরে জামিনে বেরিয়ে এসে ফারুক-রশিদ গং’দের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে অংশ নেয়। তারপর মামলাটির কী হয়েছে তা তারা জানে না। সে জানায়, তার বাবাকে রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠিয়ে ডেকে নিয়ে যায় রাশেদ চৌধুরী। তখন তারা খুবই ছোট ছিল। মামলার খোঁজ-খবর নেবার মত লোক তাদের ছিল না। সে তার বাবার হত্যাকান্ডের বিচার চায়।
মুক্তিযোদ্ধা লতিফ মাষ্টার হত্যাকান্ডের বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ কিছুই জানে না। তবে তার পরিবার যদি আবেদন করে তাহলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হবে। রাশেদ চৌধুরীর পরিবারের উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানালেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আামির জাফর।
সেনাবাহিনী থেকে বহিস্কৃত ও পলাতক খুনী রাশেদ চৌধুরী হাজীগঞ্জের সোনাইমুড়ি মৌজায় ১ একর ১৫ শতক জমি  উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল সেই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে হাজীগঞ্জের উপজেলা প্রশাসন।

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের অন্যতম রাশেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর পরই বিদেশ পাড়ি দেয়। এরপর সে এরশাদের শাসনামলের শেষ দিকে একবার এক দিনের জন্য গ্রামে এসেছিল। তবে কারো সাথে কোন কথা বলে বলেনি। এ খুনিকে শীঘ্রই দেশে এনে রায় কর্যাকরের দাবি দেশবাসীসহ চাঁদপুরের আপামর জনতার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top