সকল মেনু

ভোলার বিভিন্ন রুটে চলছে অবৈধ নৌ-যান

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা। যেখানে নদী পথ ছাড়া অন্য কোন উপায়ে যাতায়াত করা যায় না। সড়ক পথে বাসের ব্যবস্থা থাকলেও বিশাল মেঘনা-তেঁতুলিয়া এবং কালাবদর পাড়ি দিয়েই বরিশাল বা লক্ষ্মীপুর হয়ে যাতায়াত করতে হয়। জেলার অভ্যন্তরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যেসব দ্বীপ বা চর রয়েছে সেগুলোতে যোগাযোগেরও একমাত্র মাধ্যম নৌ-পথ। কিন্তু নিরাপদ নৌ-যানের অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে ভোলার ১৮ লাখ মানুষ। গণমাধ্যমে এনিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট প্রচার হলেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসনও নড়ে চড়ে বসছেন না। পদ্মার লঞ্চডুবিতে নিহতদের মরদেহ ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় ভেসে ওঠার পর স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়েছে। তারপরও অগ্যতা বাধ্য হয়েই ফিটনেস বিহীন অবৈধ নৌ-যানে করে অ-দক্ষ চালকদের কাছে জিম্মী হয়ে যাতায়াত করছেন ভোলার মানুষ।
সূত্রে জানা যায়, পদ্মার যেখানে পিনাক-৬ ডুবেছে তার চেয়ে মেঘনার এখানকার পরিধি কয়েকগুন বড়। স্রোতও বেশী। একদম সাগর মোহনা। অথচ বিশাল এই মেঘনা পাড়ি দিচ্ছে মানুষ পিনাকের চেয়ে অনেক ছোট একটি লঞ্চে করে। লঞ্চটির যে সরকারী কোন অনুমোদন নেই তা দেখলেই বোঝা যায়। কারণ লঞ্চটির কোথাও কোন নাম লেখা নেই। যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে কাকে দায়ী করবে কর্তৃপক্ষ ? এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রতিদিনই চরফ্যাশনের বেতুয়া থেকে মনপুরায় যাতায়াত করা এই লঞ্চসহ বেশ কয়েকটি লঞ্চ চলছে ভোলার বিভিন্ন রুটে।
তুলাতুলি থেকে মাঝের চর, মদনপুর, মেদুয়া। দৌলতখান-তজুমুদ্দিন থেকে চর জহিরুদ্দিন। চরফ্যাশন থেকে কুকরী-মুকরী, ঢালচর, মনপুরা, চর নিজাম সব যায়গাই অহরহ চলাফেরা করছে এসব নৌ-যান। শুধু এগুলোই নয় এর চেয়েও ছোট ছোট নৌ-যান বা ইঞ্জিন চালিত নৌকা উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে চলাচল করছে। ভোলার অভ্যন্তরীণ চরগুলো ছাড়াও লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী আর পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে এসব ছোট ছোট নৌ-যানগুলো। অথচ প্রতিবছর মার্চ’র ১৫ থেকে অক্টোবরের ১৫ পর্যন্ত মেঘনার এই এলাকাকে ডেঞ্জার জোন হিসাবে ঘোষণা করে সরকার সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া সকল নৌ-যান চলাচলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে চলাচল করছে এসব নৌ-যান। যাত্রীদের দাবী নিরাপদ নৌ-যান পেলে তারা কোন ভাবেই এসব নৌ-যানে চলাচল করতেন না। তাই নিরুপায় হয়েই চলতে হচ্ছে।
কামাল নামের এক যাত্রী বলেন, মার্চ মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঞ্জারাস সময়। এ সময়টা যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে লঞ্চের উপর একটা নিষেধাজ্ঞা থাকে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য কইর‌্যা প্রতিনিয়ত আমাদের এখানে ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ যাতায়াত করছে।
নাছির নামের অপর যাত্রী বলেন, লালমোহন আর চরফ্যাশনের মানুষ যাওয়ার জন্য মনপুরাতে আর কোন যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই শুধু আমাদের এখান থেকে। একটা ব্যবস্থা আছে অনেক দুরে। আর হেইটা হলো শশীগঞ্জ দিয়া। সেখান দিয়ে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। এখান দিয়ে যাইতে চাইলে বৈশাখ থেকে শুরু অইয়্যা কাল বৈশাখী থেকে ৩০ আর্শ্বিন পর্যন্ত সবসময় ঝুঁকি থাকে। আর যে-ই চরে, তার মধ্যে ভয় ডুকেই।
চরফ্যাশনের এক যাত্রী বলেন, আমরা বেতুয়া ঘাট থেকে মনপুরার জনতা ঘাটে যখন যাই, তখন এই ২ ঘণ্টার পাড়িতে আমাদের মনে হয় জীবনডা হয়তো নদীর গর্ভেই চইল্যা যাইবে। এ রকম মুমূর্ষ লাগে আমাদের। অনেকে আমাদের মধ্যে বুমি করে, কান্না-কাটি করে, বাচ্চারা চিৎকার করে, আমাদের কাছে খুবই খারাপ লাগে।
এক এনজিও কর্মী বলেন, শীতের মৌসূমে যখন ছাড়ে, চলাচল করে তখন ভালো, নিশ্চিত ভাবে যাত্রীরা যেতে পারে। এখন বর্ষা মৌসূমে আসলে খুবই ঝুঁকি। রুলিং, নদী উত্তাল, এর ভিতরে যাচ্ছে এটা খুবই ঝুঁকি যাত্রীদের জন্য।
এছাড়া চট্টগ্রাম-কুমিল্লা অঞ্চল থেকে যারা ঈদে ভোলায় এসেছিলেন ফেরার পথে তারা অনেকেই ছোট নৌ-যানকে এড়িয়ে ফেরী সার্ভিসকে অনেকটা নিরাপদ ভেবে ফেরীতে করে মেঘনা পাড়ি দিয়েছেন। কেউ কেউ নিরাপত্তার স্বার্থে জোড়পূর্বক ফেরীতে উঠেছেন।
মহিমা নামের এক যাত্রী বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে নিরাপদ বড় ধরনের কোন লঞ্চ নেই। তাই অনেকে ছোট ছোট নৌ-যানে চড়তে বাধ্য হয়। তবে ছোট নৌ-যানের চেয়ে ফেরী সার্ভিস অনেকটা নিরাপদ বলে মনে করছেন তিনি।
মহিউদ্দিন নামের অপর যাত্রী বলেন, ছোট লঞ্চ বা নৌ-যানে জীবনের ঝুঁকি একটু বেশী। তাই বাধ্য হয়েই ফেরী সার্ভিসকে বেছে নিয়েছি।
যেখানে সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের অনুমোদনপ্রাপ্ত সি-ট্রাকই এসব রুটে চলতে হিমসীম খাচ্ছে, সেখানে ইঞ্জিন চালিত নৌকা কিংবা ছোট লঞ্চ কেনইবা চলছে আর কেনইবা চলবে না, সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তাদের নির্দেশ অমান্য করে অবাধে অবৈধ এসব নৌ-যানের চলাচল করছে বলে স্বীকার করলেন খোদ ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজা।
তিনি বলেন, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ এসব রুটে ছোট ছোট নৌ-যান ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে বলে মন্তব্য তার। আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করে লোকজনদের আটকানো যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি জানান অবৈধ নৌ-যান চলাচল বন্ধে চেষ্টা চলছে তায়।
ভোলাবাসীর মতে বার বারই জেলা প্রশাসন এসব লঞ্চ বন্ধ করার কথা বলে কিন্তু আজ পর্যন্ত বন্ধ করেনি। বরং তাদের কাছ থেকে ঘাট ইজারা নিয়েই এসব লঞ্চ চালাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আর স্থানীয় প্রশাসন ঘাট ইজারা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। কিন্তু সঠিক রুটে মান সম্মত নিরাপদ যানবাহন চলাচল করছে কি না সে বিষয়টি নিশ্চিত করছে না। ওই সকল রুটে নিরাপদ লঞ্চ চলাচলের বিষয়টি জেলা প্রশাসন লক্ষ্য রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা করছে ভোলাবাসী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top