সকল মেনু

চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট থেকে আজো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছেড়েছে

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: মাওয়া কাওরাকান্দি নৌ-রূটে ভয়াবহ নৌ-দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই চাঁদপুরে আরো একটি ভয়াবহ লঞ্চ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এম এম পিনাক-৬ এর হতভাগ্য যাত্রীদের লাশ যখন চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় ভেসে উঠছে তখনও প্রশাসনের চোখের সামনে চাঁদপুর ঘাট থেকে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। বর্ষায় দেশের ৯০ ভাগ নদনদীর পানি চাঁদপুরের উপর দিয়ে বঙ্গপোসাগরে প্রবাহিত হয়। ফলে জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাস চাঁদপুরের মেঘনা মোহনা ও এর আশপাশের অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকা ভয়াবহ হয়ে উঠে। ১৯৯৪ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত সময়ে চাঁদপুরের মোহনাসহ মেঘনায় ঘুর্ণাবর্তের কবলে পড়ে অন্তত চারটি লঞ্চ ডুবির ঘটনায় হাজারেরও উপরে মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে তিনটি লঞ্চ আজো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তারপরও মানুষের বোধদয় নেই।  জীবনের চেয়ে সময়ের দাম বেশি দিয়ে মানুষ যেমন লঞ্চগুলোতে বোঝাই হয়ে ভ্রমণ করছে তেমনি লঞ্চ মালিকরাও মুড়ির মত করে যাত্রী বোঝাই করে লঞ্চগুলো ছাড়ছে। বুধবার সকালে পঙ্গপালের মত মানুষ ছুটছিল। হাজার হাজার মানুষ জীবন বাজী রেখে লঞ্চ বোঝাই করে ঢাকার উদ্দেশ্যে চাঁদপুর ঘাট ছেড়েছে। লঞ্চগুলোতে তিল ধারনের মত ঠাঁই ছিল না। যাত্রীদের চাপে লঞ্চগুলো দস্তুরমত কাত হয়ে যায়। যাত্রী বোঝাই করে লঞ্চ ছাড়ার পর আবার ঘাটের অদূরে যেয়ে লঞ্চ থামিয়ে নৌকায় করে আসা লোজনদের লঞ্চে উঠানো হয়। পুলিশ ,কোষ্টগার্ড, ম্যাজিস্ট্রেট, বিআইডব্লিউটিসি’র লোকজনদের সামনেই এসব দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। তারপরও তারা বলছেন কোন সমস্যা হবে না। চাঁদপুর নৌ-ট্রাফিক ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম জানালেন, কোন লঞ্চেই ওভারলোড করা হচ্ছে না। অথচ তার সামনেই লঞ্চগুলো যাত্রী বোঝাই করে যাচ্ছিল। লঞ্চ ঘাট হকাররা দখল করে রাখলেও তিনি বলছেন, কোন হকার লঞ্চ ঘাটে নেই।  লঞ্চ ঘাটে কর্তব্যরত ম্যাজিষ্ট্রেট রাজিব আহমেদ নিজেও স্বীকার করলেন যাত্রী ওভারলোড করার কথা। কেন জরিমানা করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, এখন থেকে জরিমানা করবেন। চাঁদপুরের বন্দর কর্মকর্তা মোঃ মোবারক হোসেন জানালেন, আবহাওয়া খারাপের কারণে গত দু’দিন লোকজন ঘর থেকে বেরুতে পারেনি। তাই আজ বুধবার যাত্রীর চাপ একটু বেশি হয়েছে। তবে দুর্ঘটনার কোন আশঙ্কা নেই। তারা যাত্রীর চাপ সামাল দিতে আরো একটি স্পেশাল লঞ্চ দিচ্ছেন। বুধবার চাঁদপুর লঞ্চঘাটে যাত্রীদের এমন অস্বাভাবিক ভিড়ের জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। পদ্মায় লঞ্চ ডুবি এবং বৈরি আবহাওয়ার কারণে গত দু’দিন যাত্রীরা নৌ-পথে চলাচল করার সাহস পায়নি। বৃহস্পতিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ক্লাশ শুরু হবার কথা। তাই যারা এতদিন ঢাকা যাননি তারা বুধবার ছুটেছেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। কিন্তু জীবনের চাইতে যাত্রীরা যে ভাবে গন্তব্যে যাবার প্রবনতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন তাতে করে বলাই যায়, যাত্রীরা নিজেরা সচেতন না হলে কোনভাবেই নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়।  তার উপর লঞ্চে মালামাল পরিবহনের প্রবনতা লঞ্চ দুর্ঘটনাকে আরো ত্বরান্বিত করবে। বেশ কিছু যাত্রীকে দেখা গেছে, এই ভিড়ের ভেতরও চালতা, তাল, নারকেল বোঝাই বর্মা ও ব্যাগ নিয়ে লঞ্চে উঠছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top