সকল মেনু

দুর্নীতিবাজ এমদাদ রাজউক চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন

  নিজস্ব প্রতবেদক,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলামের চাকরির মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় অর্থ উপার্জনে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। রাজউকের প্রকল্পগুলোতে ব্যয় বাড়িয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জোট আমলের পূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের সঙ্গে দুর্নীতির মামলায় জেল খাটার পর কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও এমদাদ আবার ফিরে এসেছেন আগের চেহারায়। চাকরির মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে তিনি এখন রাজউকের চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বলে জানান সংস্থার কেউ কেউ।

অভিযোগ রয়েছে, তার মদদে অন্য প্রকৌশলীরাও অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতেই মূলত নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়া প্রকৌশলীদের মদদ দিচ্ছেন এমদাদ। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি।

রাজউক সূত্রে জানা যায়, এমদাদুল ইসলামের নানা অনিয়ম নিয়ে হটনিউজ২৪বিডি.কমসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে রাজউকে আরো অনেক অভিযোগ জমা পড়ছে তার বিরুদ্ধে। এসবের মধ্যে রয়েছে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গুলশান, উত্তরা, পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পে পরিচিতদের বেশ কিছু প্লট বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। নিজের অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতে প্রভাবশালীদের মধ্যেও বেশ কিছু প্লট বিতরণ করেছেন এমদাদ। এছাড়া রাজউকের ঠিকাদারি কাজ তার ইশারা ছাড়া পাওয়া অসম্ভব।

জানা যায়, দুর্নীতির মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি এমদাদ দেড় বছর জেলেও ছিলেন। প্রভাবশালী এ কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ চলতি বছরেই শেষ হওয়ার কথা। তাই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।

আরো জানা যায়, জাকের হোসেন নামের এক ঠিকাদার গত ৪ মার্চ একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর নামে লিখিত অভিযোগ দেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে। অভিযোগ করার পর ওই ব্যবসায়ীর ওপর নেমে আসে আরো হয়রানির খড়ক। পরে ৮ মার্চ তিনি রাজধানীর বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে জাকের হোসেন উল্লেখ করেন, রাজউকের বনানী কোয়ার্টারে অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও টাইলসের কাজ নেন তিনি। কিন্তু কাজ নেওয়ার পর নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম তার কাছ থেকে অন্যায়ভাবে ১০ লাখ টাকা আর্থিক সুবিধা নেন।

এরপর আরো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এ কর্মকর্তা তার কাজ বন্ধ করে দেন এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসীর মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতন করান। ভুক্তভোগী জাকের হোসেন বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল ইসলামের অনিয়মের কথা আমি মৌখিকভাবে প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলামের কাছে জানাই। তিনি আমাকে এ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার পরামর্শ দেন।

অভিযোগ রয়েছে, মূলত মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী রাজনীতিকদের নাম ভাঙিয়ে এমদাদ রাজউকের হর্তাকর্তা হয়ে গেছেন। তার হয়ে আগের পাঁচ বছর বিভিন্ন কাজ বিতরণ করেছেন তৎকালীন পূর্ত প্রতিমন্ত্রী মান্নান খানের ব্যক্তিগত সহকারী আসাদুজ্জামান দীপু। দীপু বর্তমানে রাজউকের রাজস্ব শাখায় কর্মরত। আরো অভিযোগ রয়েছে, মান্নান খান প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন এমদাদ ও দীপু মিলে পুরো রাজউকের ঠিকাদারি কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এ ছাড়া বিগত বছরগুলোয় তারা প্রতিমন্ত্রীর কাছের লোক হিসেবে দাপটের সঙ্গে ঘুষ, দুর্নীতি, কমিশন-বাণিজ্যের মাধ্যমে অঢেল টাকা কামিয়েছেন। দীর্ঘ সময় চাকরি করে বেপরোয়া এমদাদ এখন বিদায়ের অপেক্ষায় বলে রাজউক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা যায়, যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে সেই সরকারের সঙ্গেই সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন এমদাদুল ইসলাম। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এমদাদ ছিলেন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের কাছের লোক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সিনিয়র নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের ভাগ্নি জামাই তিনি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এমদাদ বলে বেড়ান ক্ষমতাসীন দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবারের তিনি আত্মীয়। নিজেকে জাসদের মইনুদ্দিন খান বাদলের স্বজন হিসেবেও পরিচয় দেন এমদাদ। এসব পরিচয় ব্যবহার করে তিনি তৎকালীন পূর্ত প্রতিমন্ত্রী মান্নান খান, তখনকার সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন ও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হুদার সঙ্গে মিলে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

রাজউক সূত্রে জানা যায়, ৫ জানুয়ারির পর রাজউকের সদস্য হওয়ার চেষ্টা চালান এমদাদ। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রশাসনিক জটিলতা দেখিয়ে তা হতে দেননি। নিজের বেয়াই শওকত হোসেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালীনও সদস্য হওয়ার জন্য একটি আবেদন করেছিলেন এমদাদ। ওই সময় আবেদনটি আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান সরকারের আমলে ঢাকার এক সংসদ সদস্যের পেছনে থেকে বেশ সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন এমদাদুল ইসলাম। দুর্নীতির মামলায় আসামি হয়েও তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

ঈদের দুই দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চেয়েছিলেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম। দেশের নদ-নদী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতবিনিময় সভা ছিল। রাজউকের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ভুঁইয়া ছিলেন আমন্ত্রিতদের একজন। তার সঙ্গে এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন এমদাদুল ইসলামও।

আমন্ত্রিত অতিথি তালিকায় নাম না থাকায় তার নামে প্রবেশ কার্ড ইস্যু করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৪ আশরাফুজ্জামান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা তার পাস বাতিল করে দেন। হতাশ এমদাদ বিমর্ষ চেহারা নিয়ে ফিরে যান অফিসে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জিএম জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখা হবে। রাজউকে কাজের মান ও সেবার ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি প্রমাণিত হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলামের অফিসে যোগাযোগ করে জানা যায় তিনি বিদেশ সফরে রয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top