সকল মেনু

হুমায়ূন আহমেদের ১০ রসিকতা

আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম: হুমায়ূন আহমেদ নাগরিক মধ্যবিত্ত জীবনকে যেভাবে দেখেছেন; তার দেখার ভঙ্গি, উপস্থাপনের ভঙ্গির মধ্যে এমন একটি বিশেষত্ব ছিল যাতে এই চেনা জগৎ ও জানা কথার মধ্যেও পাঠক নতুনত্ব খুঁজে পেতেন। পাঠক মহলে হুমায়ূন আহমেদের ব্যাপক জনপ্রিয়তার এটি অন্যতম একটি কারণ। কিন্তু ব্যক্তি হুমায়ূন কেমন ছিলেন? এক কথায় বলা যায় তিনি সুরসিক ছিলেন। মুহূর্তেই আড্ডা জমিয়ে তুলতে পারতেন। প্রিয়জনদের চমকে দিতে ভালোবাসতেন। তাদের জন্য এমন কিছু করতেন, যে কারণে প্রিয়জনেরা মুগ্ধ হতেন।  মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করার অসম্ভব এক ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। দলবেঁধে বেড়াতে ভালোবাসতেন। আর ভালোবাসতেন রসিকতা করতে। কিন্তু রসিকতার গণ্ডি তিনি মাপতে পারতেন। পরিমিতিবোধ ছিল তার সহজাত। আর এ কারণেই তার সামান্য রসিকতাও হয়ে উঠত অনন্য অসাধারণ।  

এক.
অনেকেই হুমায়ূন আহমেদের রচনায় গভীরতা কম বলে আক্ষেপ বা অনুযোগ করতেন। তার জীবদ্দশাতে এ ধরনের সমালোচনা তাকে অনেকবার শুনতে হয়েছে।
হুমায়ূন আহমেদ একবার বাংলা সাহিত্যের এক অধ্যাপককে একটি গল্প পড়তে দিয়ে তার মতামত জানতে চাইলেন। অধ্যাপক গল্পটি পড়ে বললেন, মন্দ নয়। তবে এতে গভীরতা কম।
হুমায়ূন আহমেদ পাণ্ডুলিপিটি ফেরত নিয়ে পকেটে ভরতে ভরতে বললেন, গল্পটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আমি চরিত্রের নাম পাল্টে কপি করে দিয়েছি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় যখন গভীরতার অভাব, তখন আমার লেখা অগভীর হলে আমার দুঃখ নেই।

দুই.
হুমায়ূন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। হঠাৎ এক ছাত্র প্রশ্ন করল, স্যার আপনি নাকি গরুর কথাও বুঝতে পারেন?
ছাত্রটির সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদের ‘ছেলেবেলা’ বইটি পড়ে এমন ধারণা হয়েছিল।
ক্লাসের মাঝখানে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় চলে আসায় হুমায়ূন আহমেদ বিরক্ত হলেন। বললেন, হ্যাঁ, পারি। নইলে তোমাদের ক্লাস নিচ্ছি কীভাবে?

তিন.
হুমায়ূন আহমেদ সিনেমা বানাবেন, টাকা প্রয়োজন।
হঠাৎ মনে হলো, সরকার যদি সাহায্য করে তাহলেই তো হয়ে যায়। তিনি তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন। মন্ত্রী সব শুনে বললেন, আপনি লেখক মানুষ। ছবি বানানোর আপনি কী জানেন?
: আমি কিছুই জানি না। তবে আমি শিখব।
: শিখে ছবি বানাবেন?
: জি।
: নিজের ওপর আপনার এত বিশ্বাসের কারণ কী?
হুমায়ূন আহমেদ এবার দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, অন্যের ওপর বিশ্বাস করার চেয়ে নিজের ওপর বিশ্বাস করাটা ভালো না?

চার.
হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীব তখন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র। সে বক্সার মোহাম্মদ আলীর খুব ভক্ত। ছোট ভাইকে লেখাপড়ায় উৎসাহ দিতে হুমায়ূন আহমেদ চিঠি লিখে জানালেন, থ্রিতে ফার্স্ট হতে পারলে একজোড়া বক্সিং গ্লাভস ঢাকা থেকে কিনে পাঠাবেন।
চিঠি পেয়ে আহসান হাবীব দ্বিগুণ উৎসাহে পড়াশোনায় মনোযোগী হলেন। কিন্তু রেজাল্ট আশানুরূপ হলো না। সে কথা বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদকে চিঠি লিখে জানানো হলো। তিনি উত্তরে লিখলেন, শাবাশ! দুটো না একটা গ্লাভস পাঠাচ্ছি।

পাঁচ.
মুহসিন হলে থাকাকালীন ঘটনা। এক রাতে হঠাৎ হইচই শুরু হলো। ঘটনা কী?
ঘটনা জটিল এবং অবিশ্বাস্য। হুমায়ূন আহমেদকে হলের একটি ছেলে খুব বিরক্ত করত। শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি ছেলেটিকে জাদুর মাধ্যমে চেয়ারের সঙ্গে আটকে দিয়েছেন। ছেলেটি আর নড়াচড়া করতে পারছে না, কথাও বলতে পারছে না। জড়পদার্থের মতো সে চেয়ারে বসে আছে।
খবর পেয়ে ছুটতে ছুটতে হাউস টিউটর এলেন। এ দৃশ্য দেখে তিনিও কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
অবশেষে ছেলেটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলো। ইনজেকশন দেয়ার পর ছেলেটির চৈতন্য ফিরল।
আসল ঘটনা হলো, ছেলেটির পীড়াপীড়িতে হুমায়ূন আহমেদ তাকে হিপনোটাইজ করেছিলেন। এটাই তার প্রথম এক্সপেরিমেন্ট। কিন্তু এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার উপায় না জানা থাকার কারণে এমন কাণ্ড!

ছয়.
পরিচালক সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য ভাইবা দিতে হয়। হুমায়ূন আহমেদ সিনেমা বানাবেন। সুতরাং তাঁকেও পরিচালক সমিতির অফিসে ভাইবা বোর্ডের মুখোমুখি হতে হলো। প্রথম প্রশ্ন-
: হুমায়ূন কবীর সাহেব, ছবি পরিচালনা বলতে আপনি কী বুঝেন?
: কিছু মনে করবেন না, আমার নাম হুমায়ূন আহমেদ।
: সরি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ছবির পরিচালকের আসল কাজটা কী?
: পরিচালকের মূল কাজ হচ্ছে, ক্রিকেট খেলার আম্পায়ারের মতো একটা সাদা টুপি পড়ে হাসি মুখে চেয়ারে বসে নায়িকাদের সঙ্গে ফষ্টি-নষ্টি করা।
উত্তর শুনে প্রশ্নকর্তা গম্ভীর হয়ে গেলেন। হুমায়ূন আহমেদ এবার ততোধিক গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, আইজেনস্টাইনের মতে, ছবি যদি স্টীম ইঞ্জিন হয়, তাহলে পরিচালক হচ্ছেন সেই স্টীম ইঞ্জিনের স্টীম।
উল্লেখ্য আইজেনস্টাইন কখনও এমন কথা বলেননি। ভাইবা বোর্ডে ভারী কিছু না বললে পার পাওয়া যাবে না মনে করে হুমায়ূন আহমেদ সেদিন কথাটি বানিয়ে বলেছিলেন।

সাত.
হুমায়ূন আহমেদ পরিচিতদের নিয়ে ক্লাব করেছেন। নাম ‘ওল্ড ফুলস ক্লাব’।
ক্লাবের নিয়মকানুন বেশ কড়া। যেমন : প্রতি মিটিংয়ে পরচর্চা করতে হবে। পরচর্চা হবে প্রকাশ্যে। অর্থাৎ অনুপস্থিত মেম্বারদের পরচর্চা নিষিদ্ধ এবং এই পরচর্চাকে তিনি বলতেন, শিক্ষা প্রদান অনুষ্ঠান।
ক্লাবের নাম বাংলায় ‘বৃদ্ধ বোকার দল’ হলে কী হবে, অর্ধেকের বেশি সদস্যের বয়স ত্রিশের নিচে। হুমায়ূন আহমেদ এ সম্পর্কে বলেছেন, গরু যেমন শিং ভেঙে বাছুরদের দলে মিশে যায়, এরা বাছুর বলে নকল শিং লাগিয়ে গরুদের দলে মিশেছে।

আট.
ক্রিকেট নিয়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশের খেলার সময় হুমায়ূন আহমেদের প্রবল উৎসাহ দেখে এক সাংবাদিক ইন্টারভিউ নিতে এসেছেন। কিন্তু ক্রিকেট বিষয়ে তিনি বিজ্ঞ নন দেখে সাংবাদিক হতাশ হয়ে বললেন, আপনি যে ক্রিকেট বুঝেন না, এটা কী লিখতে পারি?
: অবশ্যই লিখতে পারো।
: কিছু না বুঝেও ক্রিকেট কেন পছন্দ করেন-একটু ব্যাখ্যা করবেন?
: কারণ আমি গল্পকার।
: স্যার, একটু বুঝিয়ে বলুন।
: ক্রিকেটে এক ওভারে ছয়টি বল করা হয়। বল করা মাত্র গল্প শুরু হয়। নানা সম্ভাবনার গল্প। ব্যাটসম্যানকে আউট করার সম্ভাবনা, ছক্কা মারার সম্ভাবনা ইত্যাদি। ছয়টা বল হলো, ছয়টি সম্ভাবনা গল্পের সংকলন। এবার বুঝেছ?

নয়.
এক সাংবাদিক হুমায়ূন আহমেদের ইন্টারভিউ নিতে এসেছেন।
: সুনীলদা’র ‘পূর্বপশ্চিম’ পড়েছেন?
: পড়েছি।
: আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে তিনি এত বড় একটা কাজ করে ফেললেন। আপনি পারলেন না কেন?
: তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেননি বলে লেখাটা তার জন্য সহজ হয়েছে।
: না দেখলে লেখা সহজ!
: অবশ্যই। মীর মশাররফ হোসেন কারবালার যুদ্ধ দেখেননি বলে ‘বিষাদসিন্ধু’ লিখে ফেলতে পেরেছেন।
: আপনার কিন্তু উচিৎ ‘পূর্বপশ্চিম’-এর মতো একটা উপন্যাস লেখা।
: ভাবছি লিখব। নামও ঠিক করে ফেলেছি।
: কী নাম?
: নামটা একটু বড়। ‘পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ, উর্ধ্ব-অধ্ব’।

দশ.
এক মা তার ছেলের নামের জন্য হুমায়ূন আহমেদের কাছে এসেছেন।
: স্যার, আমার ছেলের নামের প্রথম অক্ষর হবে ‘আ’। কারণ আমার নামের প্রথম অক্ষর ‘আ’। আতিয়া। শেষ অক্ষর হবে ‘ল’। কারণ ছেলের বাবার নামের প্রথম অক্ষর ‘ল’। লতিফ। নামের অর্থ যদি নদী, আকাশ বা মেঘ হয়, তাহলে খুব ভালো হয়। তারচেয়েও বড় কথা নামটা হতে হবে আনকমন।
: ছেলের নাম রাখো আড়িয়াল খাঁ।
: আড়িয়াল খাঁ!
: হ্যাঁ, তোমার সব দাবি এই নামে পূরণ হয়েছে। এই নাম শুরু হয়েছে ‘আ’ দিয়ে। শেষ হয়েছে ‘ল’ দিয়ে। নদীর নামে নাম। তাছাড়া আনকমন তো বটেই।
: আমার স্বামীর বংশ খাঁ বংশ না।
: তাতে কী? তোমার ছেলে খাঁ বংশের পত্তন করবে।
: স্যার আপনাকে আমার ছেলের নাম রাখতে হবে না। ধন্যবাদ।
: তোমাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top