সকল মেনু

পবিত্র ঈদুল ফিতর কাল

 আছাদুজ্জামান:  পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। কাল পবিত্র ঈদুল ফিতর। সেই সঙ্গে বেজে উঠেছে অতি পরিচিত সুর ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই অমর গীতির সুর ছড়িয়ে যাচ্ছে এখন বাংলার ঘরে ঘরে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে মঙ্গলবার সারাদেশে মুসলমানরা তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। এই আনন্দের আমেজ মূলত রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ছড়াতে থাকে। আর এর পূর্ণতা আসে ঈদ উদযাপনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের মত সারা বিশ্বের মুসলমানরাও মেতে উঠেছেন ঈদের আনন্দে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়িত্বশাসিত ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি ভবনে কাল জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। দেশের প্রতিটি দৈনিক বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে এবং টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। রাজধানীর ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৮টায়। এখানে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট, প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনসহ মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ এবং বিদেশি কূটনীতিকরা নামাজ আদায় করবেন। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া। বাণীতে তাঁরা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দেশ ও মুসলিম উম্মার মঙ্গল কামনা করেছেন। অপরদিকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ইতোমধ্যেই ঈদের জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।  রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব প্রফেসর মাওলানা মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। এছাড়া, বায়তুল মোকাররমে সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মোট পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় মহানগরীর ৯০টি ওয়ার্ডে মোট ৩৬৬টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান প্রধান জামাতের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে ২টি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ও জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পৃথক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সেখানেও ঈদের জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

ঈদের প্রধান জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রাখছে। সাদা পোশাকে র‌্যাব এবং পুলিশ সদস্যরাও তৎপর রয়েছেন।

ঈদ উপলক্ষে বনানীর ঢাকা গেট থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রধান সড়ক এবং সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ঈদ মোবারক লেখা ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।

ঈদ মুসলিম বিশ্বের জন্য এক আনন্দঘন উৎসব। ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে শিশু বৃদ্ধ সবাই শামিল হবেন ঈদগাহ ময়দানে। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করবেন একে অপরের সঙ্গে। দোয়া ও মোনাজাত করবেন বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম জাহানের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনার অঙ্গীকারে।

ঈদ আনন্দের আসল ভাগিদার হচ্ছেন তারা, যারা এক মাস রোজা রেখে অভুক্ত থাকার কষ্টকে অনুভব করেছেন। সেই সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, তারাবিহ, ইবাদত-বন্দেগি এবং ইসলামের অনুশাসন যারা পালন করেছেন তাদের জন্য এই ঈদ আনন্দ বেশি উপভোগের, উচ্ছ্বাসের ও শান্তির। তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের এক মহাপুরস্কার এই ঈদ উৎসব।

এই ঈদে সেমাইয়ের সঙ্গে থাকবে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, কোরমা, পোলাওসহ সুুস্বাদু সব খাবারের সম্ভার। রোগীদের জন্য হাসপাতাল এবং এতিমখানা ও বন্দিদের জন্য জেলখানায় থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। সরকারি শিশু সদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র এবং দুঃস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে থাকবে উন্নতমানের খাবার এবং বিনোদনের ব্যবস্থা। এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগারেও পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার।

এরই মধ্যে ঈদের আনন্দ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। নাড়ির টানে মানুষ ছুটেছেন গ্রামের পানে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরাও নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। ঈদ মানুষকে কাছে টানে। দৃঢ় করে সামাজিক ও সম্প্রীতির বন্ধন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top