সকল মেনু

রানা প্লাজায় নিহত ভোলার ১৩ পরিবারগুলোতে ঈদ মানেই কান্না

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা: বাবারে কি কিমু, আমার পোলায়তো ঢাহাতোন কিনাকাডা কইরা লইয়া আইতো। ভোলাতোন আমাগো কিছু কিনা লাগতো না। পোলায় আমার প্রতি বছরই ঈদের আগে ঢাহাতোন আমাগো লইগ্যা অনেক কিছু কিনাকাডা কইরা আইতো। পোলায় রানা প্লাজায় কাম করতো। অনেক টাহা বেতন পাইতো। আমাগো কোন অভাব থাকতো না। এভাবেই কথাগুলো বললেন মৃত ছেলে জসিমের বাবা। রানা প্লাজার ভবন ধসে নিহত জসিমের কথা মনে পড়লে মা বিলকিছ বেগম কখনো ভালো আবার কখনো স্মৃতি হাড়িয়ে অন্য রকম হয়ে যান।  ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বিলকিছ বেগম। স্বামী ও ৪ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার তাদের। মেঘনার ভাঙ্গনের কবলে কয়েকবার বিলিন হয়ে গেছে তাদের বসত বাড়ি। অবশেষে একই উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে গিয়ে আশ্রয় নেয় অন্যের জায়গায়। কোন ভাবে দিন কাটাচ্ছে বিলকিছ বেগমের পরিবার। পরিবারের অভাব দুর করতে ছেলেকে পাঠিয়েছিল ঢাকায় রানা প্লাজার এক গার্মেন্টেস-এ। কয়েক মাসে সংসারের কিছুটা পরিবর্তন আসলেও মাঝ পথে থেমে যায় উপার্জনের চাকা। উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম বড় ছেলে জসিম রানা প্লাজার ভবন ধসে নিহত হওয়ার ঘটনায় ভেঙ্গে পড়েছে পুরো পরিবারটি। ছেলে হারা বেদনা মা বিলকিছ বেগম পাগল প্রায়। বাবা শাহে আলম জীবিত থাকলেও বয়সের ভারে হাড়িয়ে ফেলেছে তার কর্ম জীবন। ঈদকে সামনে রেখে পরিবারে যেন কান্নায় আহাজারি।  শাহে আলম অভিযোগ করে বলেন, এমন একটি ঈদ আসছে ভবন কর্তৃপক্ষ বা সরকারের পক্ষ থেকে একটু সাহায্য বা সহোযোগীতার হাত বাড়ায়নি কেউ। তাদের ছেলে বেঁচে থাকলে হয়তো এই দিনটিতে পরিবারে আনেক হাসি আনন্দ থাকতো।  ছেলের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় চোখে পানি ফেললেন চরসামাইয়া ইউনিয়নের চর ছিফলী গ্রামের নুর জাহান বেগম। সরকারের কাছে তাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল কিন্তু আশানরূপ কিছুই পায়নি তারা। তবে নুর জাহানের ছেলে নিহত নুর মোহাম্মদ মীরের বড় ছেলে ডিগ্রীতে পড়ালেখা করে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি তার জন্য একটি চাকুরীর ব্যবস্থা করতো, তাহলে নিহত নুর মোহাম্মদের পরিবারটি আবার ঘুড়ে দাঁড়াতে পারতো। ভবন ধসে নিহত একই উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের মৃত বজলুল রহমানের ছেলে মাহাবুবুল আলমের বড়িতে গিয়ে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা বোরহানউদ্দিন উজেলার গঙ্গাপুর ইউনিয়নের জয়া গ্রামের বাসিন্দা আমির হোসেনের পরিবারে। উপার্জনের আশায় একমাত্র মেয়ে রিয়া আক্তার রুমাকে কাজে দেয় রানা প্লাজার এক গার্মেন্টেস-এ। ভবন ধসে রুমার মৃত্যু কেড়ে নিলো পুরো পরিবারটির সুখ শান্তি। তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শুধু রুমার কবরটি। ছোট্ট একটি ঘর তালা দিয়ে বাবা চলে গেছেন জীবিকার সন্ধানে ঢাকায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দৌড়ে আসে নিহত রুমার চাচা রুহুল আমিন। কান্না জনিত কন্ঠে বলল, নিজের হাতে কবর দিয়েছি ভাতিজি রুমাকে। দু’বছর পার হলেও কর্তৃপক্ষ তো দুরের কথা সরকারের পক্ষ থেকে যৎ সামান্য সাহায্য ছাড়া তেমন কিছুই মেলেনি। এমন একটি ঈদ আসছে এসকল পরিবারটি কিভাবে ঈদ কাটাবে তাও যেন দেখার কেউ নেই। এছাড়াও রানা প্লাজায় নিহত ভোলার ১৩ জনের মধ্যে দৌলতখান উজেলার মেদুয়া ইউনিয়ের বাসিন্দা ফরিদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের খোরশেদ আলনের মেয়ে সুমি আক্তার, লালমোহন উপজেলার মহেসখালী গ্রামের বাসিন্দা মিলনের মেয়ে মোসাম্মৎ ঝুমুর, কুচুয়াখালীর আবদুল জলীলের মেয়ে রুমা বেগম, কইচাখালীর মফু মাঝির মেয়ে দিনাজ বেগম ও গঙ্গামিয়া গ্রামের ইউছুফের স্ত্রী রহিমা বেগম, তজুমুদ্দিন উপজেলার আড়ালীয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাসেমের ছেলে হারুন অর রশিদ, চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ ইউনিয়নের আনোয়ারুজ্জামানের ছেলে মোঃ আব্দুল গনী ও নীলকমল ইউনিয়নের মোঃ কামালের মেয়ে শাহনাজ বেগম। এসকল পরিবারের অনেকেই দেশের বাড়িতে থাকে না। কেউ থাকে ঢাকায় কেউ বা অন্য জেলায়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমের নিহতদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে কেউ শোনালেন নানা অভিযোগ, কেউবা পুরোনো ম্মৃতি মনে পড়ে বারুদ্ধ প্রায়। তবে ঈদকে ঘিড়ে মালিক পক্ষ বা সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগীতার না পাওয়ার অভিযোগই সকলের।ঈদকে সামনে রেখে সরকারের পক্ষ থেকে কোন সাহায্য সহযোগীতা করা হলে তা যথাযথ ভাবে পৌছে দেয়ার আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজা। তিনি নিহত প্রতিটি পরিবার যেন বিজিডি-বিজিএফ এর চাল পায় সে ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top