সকল মেনু

ভোলার মেঘনার ডেঞ্জার জোনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোট ছোট নৌ-যান

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা:  সরকার নৌ-দুর্ঘটনা রোধে প্রতি বছর ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অকেটাবর পর্যন্ত ৮ মাস মেঘনা মোহনাকে ডেঞ্জার জোন হিসাবে চিহ্নিত করে সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া সকল প্রকার নৌ-যান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। কিন্তু সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিনিয়ত-ই ভোলার মেঘনা মোহনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট নৌ-যান চলাচল করছে। কোন কোন রুটে নৌকায় করেও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে ব্যাপক প্রাণহানীর আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসন কোন ভাবেই এসব রুটের অবৈধ নৌ-যানগুলোকে যাত্রী পারাপার থেকে বিরত রাখতে পারছেনা। সূত্রে জানা যায়, মেঘনা-তেঁতুলিয়া আর বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি দ্বারা বেষ্টিত দ্বীপজেলা ভোলা। জেলার মূল ভূ-খন্ড থেকে দুর্গম ইউনিয়ন কিংবা আশ-পাশের জেলা লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী ও পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে হলে ভোলাবাসীকে নৌ-যানের উপরই নির্ভর করতে হয়। দু’একটি রুটে সি-ট্রাক কিংবা সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রপ্রাপ্ত লঞ্চ থাকলেও বেশীরভাগ রুটেই ফিটনেসবিহীন লঞ্চ আর ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে যাত্রীদের চলাচল করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ভোলার তুলাতুলি থেকে মাঝের চর ও মজুচৌধুরীর হাট, দৌলতখান-মির্জাকালু থেকে চর জহিরুদ্দিন ও লক্ষ্মীপুরের আলেকজ্যান্ডার-রামগতি, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন থেকে মনপুরা এবং মুজিবনগর, কুকরী-মুকরী, ঢালচর, পটুয়াখালীর বাউফলসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল ও উপ-দ্বীপগুলোতে চরম ঝুঁকি নিয়ে গাদা-গাদি করে যাতায়াত করছে এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। নাছির নামের এক যাত্রী বলেন, মার্চ মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঞ্জারাস সময়। এ সময়টা যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে লঞ্চের উপর একটা নিষেধাজ্ঞা থাকে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য কইর‌্যা প্রতিনিয়ত আমাদের এখানে ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ যাতায়াত করছে।  মালেক নামের অপর যাত্রী বলেন, লালমোহন আর চরফ্যাশনের মানুষ যাওয়ার জন্য মনপুরাতে আর কোন যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই শুধু আমাদের এখান থেকে। একটা ব্যবস্থা আছে অনেক দুরে। আর হেইটা হলো শশীগঞ্জ দিয়া। সেখান দিয়ে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। এখান দিয়ে যাইতে চাইলে বৈশাখ থেকে শুরু অইয়্যা কাল বৈশাখী থেকে ৩০ আর্শ্বিন পর্যন্ত সবসময় ঝুঁকি থাকে। আর যে-ই চরে, তার মধ্যে ভয় ডুকেই।) চরফ্যাশনের তছির নামের এই যাত্রী বলেন, আমরা বেতুয়া ঘাট থেকে মনপুরার জনতা ঘাটে যখন যাই, তখন এই ২ ঘণ্টার পাড়িতে আমাদের মনে হয় জীবনডা হয়তো নদীর গর্ভেই চইল্যা যাইবে। এ রকম মুমূর্ষ লাগে আমাদের। অনেকে আমাদের মধ্যে বুমি করে, কান্না-কাটি করে, বাচ্চারা চিৎকার করে, আমাদের কাছে খুবই খারাপ লাগে।) রাশিদা আক্তার নামের অপর যাত্রী বলেন, শীতের মৌসূমে যখন ছাড়ে, চলাচল করে তখন ভালো, নিশ্চিত ভাবে যাত্রীরা যেতে পারে। এখন বর্ষা মৌসূমে আসলে খুবই ঝুঁকি। রুলিং, নদী উত্তাল, এর ভিতরে যাচ্ছে এটা খুবই ঝুঁকি যাত্রীদের জন্য।) চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই চরম দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রীরা। প্রতিদিনই মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হয় যাত্রীদের। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় এক প্রকার নিরুপায়-ই তারা। লঞ্চ স্টাফদেরও দাবী উন্নত নৌ-যান পেলে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ চালাতেন না। আকবর নামের লঞ্চ স্টাফ বলেন, আমরা ছোট ছোট লঞ্চ চালাইতে বাধ্য হই। কারণ আমাদের অন্য কোন যানবাহন নাই। সরকারকে আমরা যত বলি এখানে একটা সি-ট্রাক দিত, বড় বড় লঞ্চ দিত, তারা বলে নদীমাতৃক এই রুটে কোন লঞ্চের পারমিট দেয়া যাবে না। এ জন্য আমরা না উপায় হইয়্যা ছোট ছোট যানবাহন দিয়া জীবনের ঝুঁকি নিয়া নৌকা চালাইতে বাধ্য হই। যাত্রীদের এই অসহায়ত্ত্বের কথা শিকার করলেন খোদ ভোলার জেলা প্রশাসক। তবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আমাদের নির্দেশ অমান্য করেও অনেক সময় এরকম উত্তাল আবহাওয়ায় কিছু কিছু লোকজন জীবনের প্রয়োজনে তারা তাদের বাড়ীতে পৌছার জন্য বা জীবিকার টানে এক জায়াগ থেকে আরেক জায়গায় ভ্রমণ করে। সেই বিষয়টি যেন তারা না করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল যেন না করে, সেই জন্য আমরা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে এমনকি মাইকিং এবং সভা-সেমিনার করে আমরা বিষয়টি জন সাধারণের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি এবং আমরা সর্বতোভাবে সজাগ আছি। আমি আন্তরিকভাবে-ই চাই যে, ভোলার জনগণ নিরাপদে বর্ষাকালে চলাফেরা করুক। দুর্ঘটনায় প্রাণহানীর আগেই ভোলার এসব ডেঞ্জার জোনে অবৈধ নৌ-যানের পরিবর্তে সরকারী সি-ট্রাক কিংবা নিরাপদ লঞ্চ চালু হবে এমনটাই প্রত্যাশা ভোলাবাসী সকলের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top