সকল মেনু

ওসি সালাউদ্দিন ফেঁসে যাচ্ছেন

 আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম : মিরপুর মডেল থানার ওসি সালাউদ্দিন ঝুট ব্যবসায়ী সুজন হত্যা মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন। প্রধান আসামি এসআই জাহিদের পাশাপাশি ওসি সালাউদ্দিনকে ওই মামলায় জড়িয়ে রোববার ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করতে যাচ্ছে সুজনের পরিবার । সেই ঘটনায় কয়েকজন এসআইসহ ওসি সালাউদ্দিনের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি চুড়ান্ত হয়েছে। শনিবার নিহত সুজনের বড় ভাই নজরুল ইসলাম শামীম হটনিউজ২৪বিডি.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আর এ জন্য তিনি আইনজীবীর সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।

শামীম জানান, ‘আমার ভাই পুলিশের টর্চারে থানা হাজতে মারা গেল, অথচ পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ যেন মার চেয়ে মাসীর দরদ বেশি! ঘটনার পরপরই আমি থানায় মামলা দায়ের করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে পুলিশ তখন আমাদের মামলা নেয়নি।’

তিনি আরো জানান, ‘সুজন হত্যার সঙ্গে মিরপুর থানার ওসিসহ আরো কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। আমরা কাকে কাকে আসামি করবো তা বিবেচনা করছি। এ জন্য আইনজীবীর সঙ্গে ইতিমধ্যে কথা হয়েছে। রোববার সকালে ঢাকার সিএমএম আদালতে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করবো আমি। কারণ, ওসি সালাউদ্দিন নানাভাবে আমাদের অসহযোগীতা করেছেন। তিনি চাইলে আমার ভাইকে বাঁচাতে পারতেন।’

এদিকে সুজন হত্যা মামলার আসামী পুলিশের তিন সদস্য এএসআই রাজকুমার, কনস্টেবল আনোয়ার ও রাশেদুলকে থানা থেকে পালিয়ে যেতে ওসি সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসআই জাহিদকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন ওই তিন আসামী থানার পিছনে কোয়ার্টারেই ছিলেন। ওসি সালাউদ্দিনের নির্দেশে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

মিরপুর মডেল থানার এক দারোগা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, এসআই জাহিদ চাঁদাবাজিতে ভালো পারদর্শী বলেই এর আগে শাস্তি পাওয়া জাহিদকে ওসি সালাউদ্দিন নিজের থানায় নিয়ে আসেন। ওসির আস্কারা পেয়ে জাহিদ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বিনিময়ে জাহিদ ওসিকে মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা দিতেন। জাহিদ এখন বিপদে পড়ায় ওসিও চুপ করে গেছেন। এখন নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেন ওই এসআই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর থানার ওসি সালাউদ্দীন খান জানান, এসআই জাহিদুর রহমানের নামে অনেক অপকর্মের তথ্য তার কাছে এসেছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তিনি কেউ নন। তার কাজ শুধু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ওসি আরো বলেন, মিরপুর থানায় জাহিদ দুই মাস হলো যোগ দিয়েছিলেন। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন পল্লবী, কাফরুল ও শাহআলী থানায় চাকরি করেছেন। ওই সব এলাকায় নিরীহ মানুষকে ধরে চাঁদা আদায় ও পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নিহত সুজনের পরিবারকে মামলা করতে পুলিশ বাধা দিয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সুজন মারা যাওয়ার পরপরই পুলিশ থানায় একটি জিডি করেছিল। এছাড়া লাশের ময়নাতদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পরিবারকে জানানো হয়েছিলো। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অন্যদিকে, এসআই জাহিদের অনেক অবৈধ সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। পাঁচ বছর আগে ২০০৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি পুলিশের এএসআই পদে যোগ দেন। এই পাঁচ বছরে তিনি হয়েছেন বিপুল অর্থের মালিক। অথচ তিনি খুবই গরিব পরিবারের সন্তান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পল্লবী থানাধীন বাউনিয়াবাদ এলাকার ইসলামীয়া মাদরাসার পাশে ৪ কাঠার একটি প্লটের মালিক জাহিদ। গত বছরের মাঝামাঝিতে তিনি ওই প্লটটি কিনেছেন। তার ভয়ে এলাকার লোকজন তটস্থ থাকতেন। এছাড়াও রূপনগর থানার পাশে একটি নবনির্মিত ফ্ল্যাট ছাড়াও গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর থানা এলাকার বিভিন্নস্থানে তিনি প্রায় ৩০ বিঘা আবাদি জমি কিনেছেন বলে অনুসন্ধানে তথ্য মিলেছে।

সূত্র জানায়, ঢাকার কাফরুল থানায় এএসআই পদে যোগ দেওয়ার পর তিনি চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রতিটি মহল্লায় তিনি ব্যক্তিগত সোর্স তৈরি করেন। খোদ থানার ওসি তাকে যেকোনো অভিযানে পাঠাতেন এবং সংবেদনশীল মামলার তদন্ত করতে দিতেন। এতে তার চাঁদাবাজির সুযোগ আরো বেড়ে যায়।

এ ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান ও মিরপুর জোনের পুলিশের এডিসি জসীম উদ্দীন জানান, ‘আমরা যে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেছি তার বড় প্রমাণ হচ্ছে পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। নিহতের অতীত সব কর্মকান্ড নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছি। জড়িত ব্যক্তিদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top