সকল মেনু

হুমায়ূন আহমেদের সেরা উৎসর্গ

 আফিফা জামান : হুমায়ূন আহমেদ তার এক লেখায় নিজেই বলেছেন, বাংলা সাহিত্যে অনেক বড় বড় জাদুকর তৈরি হয়েছে। আমাকে বাংলা সাহিত্যের একজন দীন সেবক বলা যেতে পারে। সেবা করে যাচ্ছি। সেবা করার যে সুযোগ পেয়েছি এতেই আমি খুশি। লোকজন আগ্রহ নিয়ে আমার বই পড়ছে, এটাই আমার জীবনের পরম প্রাপ্তি। আর কতটুকু দিতে পেরেছি না পেরেছি সেটি ভাববে সমালোচকরা। আমার কাজ হচ্ছে, শুধু লেখালেখি করা। তিনি অজস্র লিখেছেন। এবং অবাক ব্যাপার এই যে, তার অধিকাংশ লেখাই পাঠকপ্রিয়। সুরসিক এই লেখক বইয়ের উৎসর্গপত্রেও চমক রাখতেন। নিকটজনদের তো বটেই, অচেনা পাঠকের নামেও তিনি বই উৎসর্গ করেছেন। এই উৎসর্গের তালিকা দীর্ঘ। তালিকায় গাছের নামও আছে। আবার কখনও যদি উৎসর্গের জন্য আশানুরূপ কাউকে না পেতেন তখন সে কথাও তিনি লিখে দিতেন। অসামান্য জনপ্রিয় এই লেখকের প্রকাশিত কিছু বই থেকে তার লেখা উৎসর্গকথা পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো।

এই মেঘ, রৌদ্রছায়া
ছবি পাড়ায় আমার ছোট্ট একটা অফিস আছে। সেই অফিসে রোজ দুপুরবেলা অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ উপস্থিত হয় এবং হাসিমুখে বলে, ভাত খেতে এসেছি। সে আসলে আসে কিছুক্ষণ গল্প করার জন্যে। ইদানীনং মাহফুজ খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুপুরবেলা তার হাসিমুখ দেখতে পাই না। মাহফুজ কি জানে, প্রতিদিন দুপুরে আমি মনে মনে তার জন্যে অপেক্ষা করি?

বাসর
স্নিগ্ধা করিম। আমার উৎসর্গপত্রগুলি সে খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে। আমি না-কি উৎসর্গপত্রে অনেক মজা করি। তার ধারণা কোন একদিন তাকে একটি বই আমি উৎসর্গ করব। সেখানে অনেক মজার কথা থাকবে। বই উৎসর্গ করা হলো।

আসমানীরা তিন বোন
আমি একজনকে চিনি যিনি দাবি করেন তাঁর শরীরের পুরোটাই কলিজা। চামড়ার নিচে রক্ত মাংস কিছু নেই, শুধুই কলিজা। এ ধরনের দাবি করার জন্য সত্যি সত্যিই অনেক বড় কলিজা লাগে।
প্রণব ভট্ট।

অয়োময়
আমার স্তন্যদাত্রী
নানিজান-কে

মৃন্ময়ীর মন ভালো নেই
তিনি সব সময় হাসেন।
যতোবার তাঁকে দেখেছি, হাসিমুখ দেখেছি।
আমার জানতে ইচ্ছা করে জীবনে কঠিন দুঃসময়ে তিনি যখন কলম হাতে নিয়েছিলেন তখনও কি তাঁর মুখে হাসি ছিলো?
সর্বজন প্রিয়
আমাদের রাবেয়া খাতুন

সকল কাঁটা ধন্য করে
কবি ফরহাদ মজহার
প্রিয়তমেষু
কবি-মানুষ যে রাজনীতি নিয়ে জটিল জটিল রচনা লিখে সবাইকে চমকে দিতে পারে- আমার ধারণা ছিলো না।

রূপার পালঙ্ক
একবার একজন লেখক আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। আমাদের তিনকন্যা যে যেখানে ছিলো, লেখকের নাম শুনে উড়ে চলে এলো। আমার মেজো মেয়ে বলল, এতো বড় লেখকের সামনে সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তার না-কি পা ঝিমঝিম করছে। আমি তখন লেখককে দেখছিলাম না, মুগ্ধ হয়ে আমার তিনকন্যার উচ্ছ্বাস দেখছিলাম।
সেই লেখকের নাম- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

দিঘির জলে কার ছায়া গো
কন্যা লীলাবতীকে। এই উপন্যাসের নায়িকা লীলা। আমার মেয়ে লীলাবতীর নামে নাম। লীলাবতী কোনোদিন বড় হবে না। আমি কল্পনায় তাকে বড় করেছি। চেষ্টা করেছি ভালোবাসায় মাখামাখি একটি জীবন তাকে দিতে। মা লীলাবতী : নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।

আনন্দ বেদনার কাব্য
শামসুর রাহমান
শ্রদ্ধাষ্পদেষু
আমাকে দেখাও পথ ধ্যানী;
চোখ বন্ধ ক’রে অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে
এখন কোথায় যাবো? কার কাছে যাবো?

কালো যাদুকর
জুয়েল আইচ
জাদুবিদ্যার এভারেস্টে যিনি উঠেছেন। এভারেস্টজয়ীরা শৃঙ্গ বিজয়ের পর নেমে আসেন। ইনি নামতে ভুলে গেছেন।

তিথির নীল তোয়ালে
বিখ্যাত টেলিভিশন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা
আমার জানতে ইচ্ছে করে, একজন মানুষ এত ভাল অভিনয় কীভাবে করেন?

লীলাবতী
শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাশ
কবি, আমি কখনো গদ্যকার হতে চাই নি।
আমি আপনার মতো একজন হতে চেয়েছি।
হায়, এত প্রতিভা আমাকে দেয়া হয় নি।

মধ্যাহ্ন প্রথম খণ্ড
মেহের আফরোজ শাওন।
পরম করুণাময় ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ উপহার তাকে দিয়েছেন। তার কোলভর্তি নিষাদ নামের কোমল জোছনা। আমার মতো অভাজন তাকে কি দিতে পারে? আমি দিলাম মধ্যাহ্ন। তার কোলে জোছনা, মাথার উপর মধ্যাহ্ন। খারাপ কি?

মধ্যাহ্ন দ্বিতীয় খণ্ড
বোবায় ধরা নামের একটি জটিল ব্যাধি আমার আছে। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মনে হয় বিকট দর্শন জন্তুর মতো কয়েকটি অতিপ্রাকৃত প্রাণী আমার বুকে বসেছে। গলা চেপে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। আতঙ্কে আমি অস্থির হয়ে চিৎকার করতে থাকি। তখন একটা কোমল স্পর্শ আমার কপালে পৌঁছে। গভীর মমতায় একজন বলে, ‘এই তো আমি আছি’। আমার ঘুম ভাঙে, আমি স্বাভাবিক হই।
মমতাময়ী শাওনকে।

মাতাল হাওয়া
কোন মৃত মানুষ মহান আন্দোলন চালিয়ে নিতে পারেন না। একজন পেরেছিলেন।
আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তাঁর রক্তমাখা শার্ট ছিলো ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের চালিকাশক্তি

আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ
বৃক্ষদের!
যাদের কারণে গল্পগুলি লেখা হয়েছে

বাদশাহ নামদার
নিনিত হুমায়ূন
আমার কেবলই মনে হচ্ছে পুত্র নিনিত পিতার কোন স্মৃতি না নিয়েই বড় হবে। সে যেন আমাকে মনে রাখে এইজন্যে নানান কর্মকাণ্ড করছি। আমি ছবি তুলতে পছন্দ করি না। এখন সুযোগ পেলেই নিনিতকে কোলে নিয়ে ছবি তুলি। এই বইয়ের উৎসর্গপত্রও স্মৃতি মনে রাখা প্রকল্পের অংশ।

উঠোন পেরিয়ে দুই পা
পক্ষী বন্ধু সাদাত সেলিম
তিনি পাখিদের ভালোবাসেন
পাখিরা কি তাঁকে ভালোবাসে?

মিসির আলির চশমা
সম্প্রতি আমি একজনকে পেয়েছি যে বাংলাদেশের বিভিন্ন মানুষদেরকে মিসির আলি হিসেবে নিয়ে আসছে। এবং সবাইকে ভাবতে বাধ্য করছে এদের মিসির আলি হিসেবে ভাবতে।
তরুণ পরিচালক
অনিমেষ আইচ

মিসির আলি অমনিবাস
`মিসির আলি অমনিবাস` আমার অতি প্রিয় গ্রন্থের একটি। প্রিয় গ্রন্থের সঙ্গে প্রিয়জনের নাম যুক্ত থাকাই বাঞ্চনীয়। মিসির আলির লজিক এই কথাই বলে। কাজেই বইটি গুলতেকিনের জন্য।

মিসির আলি! আপনি কোথায়?
কিছু লেখা আছে কাউকে উৎসর্গ করতে মন চায় না। এই লেখাটি সেরকম।
কাজেই উৎসর্গ পত্রে কেউ নেই।

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর
জাহিদ হাসান, প্রিয় মানুষ
মানুষ হিসেবে সে আমাকে মুগ্ধ করেছে,
একদিন হয়তো অভিনয় দিয়েও মুগ্ধ করবে।
(দ্বিতীয় বাক্যটি দিয়ে তাকে রাগিয়ে দিলাম, হা হা হা)

সে আসে ধীরে
মৃত্যুর কাছাকাছি যাবার মতো ঘটনা আমার জীবনে কয়েকবারই ঘটেছে। একবারের কথা বলি। আমার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে- আমাকে নেয়া হয়েছে হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে। আমি চলে গিয়েছি প্রবল ঘোরের মধ্যে, চারপাশের পৃথিবী অস্পষ্ট। এর মধ্যেও মনে হচ্ছে হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক যুবক আমার পাশে বসে। কে সে? হিমু না-কি? আমি বললাম, কে? যুবক কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, হুমায়ূন ভাই, আমি স্বাধীন। আপনার শরীর এখন কেমন? শরীর কেমন জবাব দিতে পারলাম না, আবারও অচেতন হয়ে পড়লাম। এক সময় জ্ঞান ফিরল। হলুদ পাঞ্জাবি পরা যুবক তখনো পাশে বসা। আমি বললাম, কে? যুবক কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, আমি স্বাধীন।
হিমুর এই বইটি স্বাধীনের জন্যে। যে মমতা সে আমার জন্যে দেখিয়েছে সেই মমতা তার জীবনে বহুগুণে ফিরে আসুক- তার প্রতি এই আমার শুভকামনা।

চলে যায় বসন্তের দিন
আমার একটি খুব প্রিয় গান আছে, গিয়াসউদ্দিন সাহেবের লেখা ‘মরণ সঙ্গীত’- ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’।
প্রায়ই ভাবি আমি মারা গেছি, শবদেহ বিছানায় পড়ে আছে, একজন কেউ গভীর আবেগে গাইছে- ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়…’
‘নক্ষত্রের রাত’ নামের ধারাবাহিক নাটকের শুটিং ফ্লোরে আমি আমার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। এবং একজনকে দায়িত্ব দিলাম গানটি বিশেষ সময়ে গাইতে। সে রাজি হলো। উৎসর্গ পত্রের মাধ্যমে তাকে ঘটনাটি মনে করিয়ে দিচ্ছি। আমার ধারণা সময় এসে গেছে।
মেহের আফরোজ শাওন

এবং হিমু
ব্রাত্য রাইসু, যে মাঝে মাঝে হিমুর মতো হাসে।

হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য
এক জীবনে অনেককে বই উৎসর্গ
করে ফেলেছি। এদের মধ্যে পছন্দের মানুষ
আছে আবার অপছন্দের মানুষও আছে।
অপছন্দের মানুষদের কেন বই উৎসর্গ করেছিলাম
এখন তা আর মনে করতে পারছি না।
উৎসর্গ খেলাটা আপাতত বন্ধ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top