সকল মেনু

সিসি ক্যামেরা এবার টাঙ্গাইলে

 শানজানা জামান: অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার কত প্রয়োজন, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যাকাণ্ড। গুলশানের ওই মার্কেটে সিসি ক্যামেরা থাকার কারণেই খুব সহজে শনাক্ত করা সম্ভব হয় খুনিদের। এমন আরো অনেক উদাহরণ এখন দেখা যাচ্ছে রাস্তাঘাটে। সম্প্রতি ধানমন্ডিতে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীমের ওপর সন্ত্রাসী হামলার চিত্রও নাকি ভেসে উঠেছে সিসি ক্যামেরার পর্দায়। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজধানী ঢাকার পরই বন্দরনগরী চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ১১০টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এর মধ্য দিয়ে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর ওপর নজর রাখছে ৩৬০টি সিসি ক্যামেরার লেন্স। এ ছাড়া, সিসি ক্যামেরার আওতায় যোগ হতে চলেছে টাঙ্গাইল জেলা শহরটি। জেলা পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে এবং টাঙ্গাইল চেম্বারের সহযোগিতায় চলছে এমন একটা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। তারা আশা করছেন ঈদের আগেই টাঙ্গাইল শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৫০টি সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হবে। এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল চেম্বারের সভাপতি জাহিদুর রহমান খান কাকন বলেন, ‘ডিজিটাল জমানায় প্রযুক্তির ব্যবহার হবে না সেটা হতে পারে না। কারণ, অপরাধ যেমন বাড়ছে তেমনি অপরাধের ধরনও পাল্টাচ্ছে। তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হলে আমাদের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতেই হবে।’

তিনি বলেন, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর পর এই প্রথম কোনো জেলা শহরে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য জেলা পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বলে উল্লেখ করেন চেম্বার সভাপতি। চট্টগ্রামে ক্যামেরা স্থাপন কার্যক্রমের সমন্বয়কারী চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার বাবুল আক্তার। খুবই চৌকস অফিসার, পুলিশে তার সুনাম আছে যথেষ্ট। রাইজিংবিডিকে তিনি জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীর ২৪টি স্পর্শকাতর পয়েন্টে ১১০টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এ জন্য একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষও খোলা হয়েছে। রমজানের প্রথম দিন সোমবার সকাল থেকেই তারা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে জানান।

এ প্রসঙ্গে বাবুল আক্তার আরো বলেন, চট্টগ্রামে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ এবং অপরাধী শনাক্ত করার পাশাপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে পুরো চট্টগ্রাম মহানগরীকে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ২৪টি পয়েন্টে ক্লোজড সার্কিট ক্যামরা স্থাপন করা হয়েছে। এই ২৪টি স্পটের মধ্যে বন্দরনগরীতে প্রবেশের সাতটি বিশেষ স্থানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

স্থাপনকৃত এই বিশেষ ক্যামেরাগুলো সামগ্রিক চিত্র ধারণ করার পাশাপাশি ফেস ডিটেক্টশন এবং গাড়ির নম্বরপ্লেটের নম্বরসমূহ সংরক্ষণ করবে বলে জানান বাবুল আক্তার।

তিনি বলেন, স্থাপিত ক্যামেরাসমূহ পর্যবেক্ষণে নগরীর লালদীঘির পাড়ে সিএমপির সদর দপ্তরে একটি বিশেষ নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এই নিয়ন্ত্রণকক্ষে ১২টি মনিটরের মাধ্যমে নগরীতে স্থাপিত ক্যামেরার চিত্র পর্যবেক্ষণের যাবতীয় যন্ত্রপাতিও স্থাপন করা হয়েছে।

নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসেই দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা ক্যামেরার চিত্র থেকে অপরাধ, অপরাধী শনাক্ত কিংবা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।

তবে চট্টগ্রামের আগেই ঢাকা মহানগরীতে স্থাপন করা হয় প্রায় আড়াই শ সিসি ক্যামেরা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ও মোড়ে এসব ক্যামেরা স্থাপন করায় দৃশ্যমান অপরাধ কমে গেছে বলে মনে করেন ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অপরাধ এবং অপরাধীকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন দুটি প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তার একটি মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং, অন্যটি সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ।
তবে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখছে সিসি ক্যামেরা। কারণ, সরাসরি ধারণ করা ফুটেজ থেকে অপরাধী শনাক্ত করার কাজটা সহজ হচ্ছে। এ জন্য বাসাবাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক-বিমা, অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এখন খুবই জরুরি বলে মনে করেন ডিএমপি কমিশনার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top