সকল মেনু

হারাচ্ছে পাখির আবাসস্থল পরিবেশ হচ্ছে হুমকির সম্মুখীন; ৪ সহস্রাধিক ছায়াবৃক্ষ কর্তন

 এম শাহজাহান আহমদ,মৌলভীবাজার: লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন ফুলবাড়ি চা বাগানের প্রাচীনতম বৃক্ষরাজি সাবাড় হয়ে গেছে। এগুলো চা গাছের ছায়াবৃক্ষ হিসাবে কাজ করতো। চা বাগান কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রয়োজনে একযোগে মূল্যবান প্রজাতির এসব প্রাচীনতম গাছ বিক্রি করেছেন। চাম, জাম, শিরিষ সহ বিভিন্ন প্রজাতির ৪০০০ গাছ বিলীন হয়ে যাওয়ায় জাতীয় উদ্যান এলাকার পাখির আবাসস্থল ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। তবে চা বাগান ব্যবস্থাপক বাগানের ভালোর জন্যই গাছ গুলো বিক্রি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও ফুলবাড়ি চা বাগানের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে শমশেরনগর-শ্রীমঙ্গল সড়কপথ। সড়কপথের পশ্চিম পাশে জাতীয় উদ্যান ও পূর্ব পাশে এম. আহমদ টি কোম্পানীর ফুলবাড়ি চা বাগান। বিশাল এই বাগানে চা গাছের ছায়াবৃক্ষ হিসাবে প্রায় দীর্ঘ শত বর্ষী চাম, জাম, শিরিষ সহ মূল্যবান প্রজাতির গাছ গাছালি গড়ে উঠেছে। মাগুরছড়া গ্যাস কূপটিও ফুলবাড়ি চা বাগান এলাকায় রয়েছে। ফলে ১৯৯৭ সনে মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরনের প্রভাব, বন্যপ্রাণি, পাখির আবাসস্থল ও খাবার ছাড়াও চা গাছের ছায়াবৃক্ষ হিসাবে গাছগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি রয়েছে স্থানীয়দের। এর মধ্যেই প্রাচীনতম এই গাছগাছালি বিলীন হওয়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুলবাড়ি চা বাগানের শ্রমিকরা বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে চাম, জাম, শিরিষ সহ পুরনো প্রায় ৪ হাজার গাছ ৪ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে কোম্পানী এসব গাছ বিক্রি করেছে। নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত মহালদার কেটে ফেলা ঐসব গাছের খন্ডাংশ নিয়ে নিচ্ছেন। গাছগুলো কিনেছেন শ্রীমঙ্গলের মহালদার জাকারিয়া হাবিব চৌধুরী।  তবে বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ি চা বাগানের ২১৭৪টি গাছ কর্তনের অনুমতি প্রদান করেছে বনবিভাগ। এর মধ্যে চা বাগানের উচুঁ টিলা সমূহ থেকে বৃহদাকার গাছ গুলো কেটে ফেলা হয়েছে। এখনও নাম্বারযুক্ত অসংখ্য গাছ রয়েছে যেগুলো আগামী শুষ্ক মৌসুমে কেটে ফেলা হবে। চা শ্রমিক দুধ কুমার জানান, এক একটি কর্তনে শত শত চা গাছও বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ চা গাছে কলম করে রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক হাজার চা গাছও মারা গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ২৪৬ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এসব পাখি জাতীয় উদ্যান ও উদ্যান সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়, খাবার সংগ্রহ করে ও আবাসস্থল গড়ে তোলে। এমনকি প্রাচীনতম গাছ সমূহ শকুনের আবাসস্থল হিসাবেও পরিচিত। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত গ্যাস ফিল্ড এলাকা ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন ফুলবাড়ি চা বাগানের এই কার্যক্রম প্রকৃতির বড় ধরণের ক্ষতি বয়ে আনবে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম (এফইজেবি) মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ মহসিন পারভেজ বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা প্রাচীন বৃহদাকার গাছগুলি পাখিদের বিচরন ভূমি। বিশেষত শকুনের অবাধ বিচরন ভূমি হিসাবে প্রাচীনতম গাছগাছালি খুবই প্রয়োজন। কিন্তু প্রাচীনতম বৃহদাকার এসব গাছগুলো এখন আর চোখে পড়ে না। তার উপর এই এইসব গাছগুলি কমে গেলে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার নয়।
লাউয়াছড়া বন্যপ্রাণি বিভাগের বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মরতুজ আলী বলেন, পশুপাখির বাসস্থান ও তাদের খাবারের জন্য প্রাচীনতম গাছগুলি খুবই প্রয়োজন। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে এক সাথে এতগুলো গাছ কেটে ফেলা খুবই দুঃখজনক। বন্যপ্রাণি বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, টি গার্ডেনের আলাদা একটা ইকো সিষ্টেম রয়েছে। সে জন্য তাদের বিষয়ে কিছু মন্তব্য করা যাচ্ছে না। ফুলবাড়ি চা বাগান ব্যবস্থাপক মো. লুৎফুর রহমান ৩৬০০ গাছ বিক্রির সত্যতা নিশ্চিত করে মোবাইল ফোনে বলেন, বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় গাছের ভালোর জন্যই বন বিভাগের অনুমতি ক্রমে এগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অন্য দশটি চা বাগানের চেয়ে ফুলবাড়ি চা বাগানে গাছ অনেক বেশি রয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু জানতে চাইলে তিনি কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলস্থ মহকুমা বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ জামান বলেন, উর্দ্বতন কর্তপক্ষের নির্দেশে ফুলবাড়ি চা বাগানের গাছ বিক্রির অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top