সকল মেনু

রায়ের অপেক্ষায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৫ মামলা

 অাছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,২০জুন :  মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি মামলা বর্তমানে রায়ের জন্য অপেক্ষমান। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন ও ফরিদপুরের পলাতক বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকনের মামলা এবং ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায়ের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর মামলা। এর মধ্যে তিনটি মামলার শুনানি শেষ হয়েছে দুই থেকে তিন মাস আগে। রায়ের জন্য অপেক্ষামান থাকা মামলাগুলোর মধ্যে বেশি সময় ধরে ঝুলে রয়েছেজামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলাটি। অন্যদিকে জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টিএম আজহার ও এরশাদ সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলার কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে।

ঝুলে গেছে নিজামীর রায় : নিজামীর মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে প্রায় সাত মাস আগে। কিন্তু এখনো রায় ঘোষণা হয়নি। ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলোর মধ্যে নিজামীর মামলাটিই বিচারিক কার্যাক্রম শেষ হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি দিন রায়ের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। প্রথম দফায় নিজামীর মামলার কার্যক্রম শেষ হয় গত বছরের ১৩ নভেম্বর। নিজামীর আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত বছরের ২০ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় আবারো মামলার কার্যক্রম শেষ হয়।  কিন্তু রায় ঘোষণার আগেই গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান ট্রাইব্যুনাল-১-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর । এরপর দীর্ঘ ৫৩ দিন পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে এই ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর নিজামীর মামলায় দুই  পক্ষ আবার নতুন করে যুক্তি উপস্থাপন করেন। গত ২৪ মার্চ তৃতীয় দফায় নিজামীর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই থেকে মামলাটির রায় ঘোষণার অপেক্ষা  এখনো শেষ হয়নি।

এ বিষয়ে নিজামীর মামলার প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে নিজামীর মামলার রায় হয়েও হচ্ছে না।  প্রায় সাত মাস অতিক্রান্ত  হলেও রায় না হওয়াটা দুঃখজনক। এ নিয়ে অস্বস্তি আর দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি আমরা।  নিজামীর মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো মামলাতেও মনোযোগ দিতে পারছি না।

ট্রাইব্যুনালের মামলা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এর আগে কোনো মামলার ক্ষেত্রে রায় দিতে এত বেশি সময় নেয়নি ট্রাইব্যুনাল। দুই ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত মোট নয়টি মামলার রায় দিয়েছেন । এর মধ্যে আটটি মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর রায় ঘোষণা করতে গড়ে এক মাস করে সময় লেগেছে । শুধু জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের রায় ঘোষণা করতে দুই মাসের মতো সময় লেগেছে।

এ ছাড়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় দিতে এক মাস সময় লাগে।  ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলার রায় দিয়েছেন বিচার কাজ শেষ হওয়ার ৪০ দিন পর। এ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার মামলার রায় এসেছে শুনানি শেষে যথাক্রমে ২৩ ও ১৮ দিন পর। পলাতক আবুল কালাম আজাদের (বাচ্চু রাজাকার) মামলার রায় আসে ২৬ দিনের মাথায়।

টাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজহটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ের অপেক্ষায় আমরা উদগ্রীব হয়ে আছি। কেনো এত দেরি হচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না । বিশেষ করে নিজামীর মামলার রায় দ্রুতই আসা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন এ আইনজীবী।

আপিলে এবার সাঈদীর পালা : সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বর্তমানে শুধু জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাটি চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষায় আছে। ৫০ কার্যদিবস  শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল সাঈদীর দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষ হয় । তবে রায় ঘোষণা হয়নি এখনো। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ার ট্রাইব্যুনাল-১ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। এর আগে আপিল নিষ্পত্তি শেষে একমাত্র জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়।

পলাতক খোকন রাজাকার : একাত্তরে স্থানীয়ভাবে ‘খোকন রাজাকার’ নামে পরিচিত ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও বিএনপির নেতা পলাতক এম এ জাহিদ হোসেন খোকনের মামলাটি গত ১৭ এপ্রিল রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে ট্রাইব্যুনাল। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো রায় ঘোষিত হয়নি। কিন্তু এর আগে জামায়াতের  সাবেক রুকন পলাতক আবুল কালাম আজাদের (বাচ্চু রাজাকার) রায় ঘোষণা করা হয়েছিল শুনানি শেষ হওয়ার পর মাত্র ২৬ দিনের মাথায়।

মীর কাসেম আলীর রায় যেকোনো দিন : জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীর মামলার কার্যক্রম শেষ হয় গত ৪ মে। ওই দিন মামলাটির রায় ‘যেকোনো দিন ঘোষণা করা হবে’ মর্মে অপেক্ষমান রাখেন ট্রাইব্যুনাল-২।  ট্রাইব্যুনাল-২ এ এই মামলাটিই একমাত্র রায়ের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। এই ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ছয়টি মামলার রায় হয়েছে।  অপেক্ষমান রাখার পর রায় ঘোষণা করতে ট্রাইব্যুনাল-২-এর গড়ে এক মাস করে সময় লেগেছে ।

মোবারক হোসেন : ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার মোবারক হোসেনের মামলাটি গত ২ জুন রায়ের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১ এ। মোবারক হোসেনের পরিচয় সম্পর্কে জানা যায়,  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানার নয়াদিল গ্রামের সাদত আলীর ছেলে সে। তার রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মোবারক হোসেন স্বাধীনতার পর জামায়াতের রুকন ছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তবে মোবারক হোসেন তার সাক্ষ্যে দাবি করেন তিনি সব সময়ই আওয়ামী লীগ করতেন। এখনো আওয়ামী লীগেই আছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রতিহিংসামূলক।

শেষ পর্যায়ে কায়সার-আজহার : ট্রাইব্যুনাল-১ ও ট্রাইব্যুনাল-২ এ বর্তমানে ৩টি মামলার কার্যবক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি সরকারের সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সার ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষের দিকে । মামলা দুটি এ মাসের মধ্যেই রায়ের জন্য অপেক্ষমান হতে পারে বলে আদালত সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা মনে করছেন।
এ দুটি মামলার বিষয়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, আশা করি দ্রুতই কায়সার ও আজহারের মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হবে। ইতিমধ্যেই জামায়াত নেতা আজহারের বিরুদ্ধে আইনী বিষয়ে যুক্তি উপস্থানের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

জামায়াতের আরেক নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-২ এ প্রসিকিউশনের ১৪তম সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ মামলাটিও দ্রুতই শেষ হওয়ার আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top