সকল মেনু

গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে মেহেরপুরে বোরো বাম্পার ফলন

মেহেরপুর প্রতিনিধি : চলতি বোরো মৌসুমে গুটি ইউরিয়া সার ব্যবহারে বাম্পার ফলন পেয়েছেন মেহেরপুরের চাষিরা। এ পদ্ধতিতে শুধু বোরো চাষেই জেলায় সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার সাশ্রয় হয়েছে। অন্যদিকে ভাল ফলন চাষিদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ফার্টিলাইজার ডেভলপমেন্ট সেন্টার (আইএফডিসি) ও ইউএসআইডি এর সহযোগিতায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক্সেলেটারিং এগ্রিকালচার প্রোডাক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট (আপি) প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সাল থেকে মেহেরপুর জেলায় গুটি ইউরিয়া ব্যবহার সম্প্রসারণের কার্যক্রম শুরু হয়। এক বিঘা ধান আবাদে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয় কমপক্ষে ৫০ কেজি। সেখানে গুটি ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয় মাত্র ২২ কেজি থেকে ২৩ কেজি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে, বোরো ২০১১-১২ মৌসুমে ২৪ ভাগ ও ২০১২-১৩ মৌসুমে ৩৫ ভাগ জমিতে চাষিরা গুটি ইউরিয়া সার ব্যবহার করেন। চলতি মৌসুমে ২১ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমির মধ্যে ৫৪ ভাগ জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করেছেন চাষিরা। এতে জেলায় সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার সাশ্রয় হয়েছে। গুটি ইউরিয়ার জোগান দিতে বিসিআইসি ডিলারসহ উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে জেলার ২৪টি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এ সব কারখানার মাধ্যমে জেলার চাষিদের কাছে গুটি ইউরিয়া বিক্রি করা হচ্ছে।

চাষিরা বলছেন, ধানের চারা রোপণের পর ক্ষেতে একবার গুটি ইউরিয়া সার পুতে দিলেই ইউরিয়া সার ব্যবহারের আর কোন ঝামেলা থাকে না। কিন্তু গুড়ো ইউরিয়া ব্যবহার করতে হলে কমপক্ষে তিনবার জমিতে ছিটাতে হয়। গুটি ইউরিয়া ব্যবহার পদ্ধতিতে চাষ খরচ কিছুটা বেশি হলেও গুড়ো ইউরিয়া ব্যবহারের চেয়ে প্রতি বিঘায় ৩/৪ মণ বেশি ফলন হয়।

জেলার গাংনী উপজেলার সহড়াবাড়ীয়া গ্রামের মাঠে প্রায় সাড়ে তিন’শ বিঘা বোরো জমিতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। গত বোরো মৌসুমেও এখানে গুড়ো ইউরিয়া প্রয়োগ করা হয়েছিল।

সহড়াবাড়ীয়া গ্রামের বোরো চাষি আনারুল ইসলাম বলেন, ধানের চারা রোপণের এক সপ্তাহের মধ্যে জমিতে গুটি ইউরিয়া পুতে দিতে হয়। এর আগে অবশ্যই ধান লাইন দিয়ে লাগাতে হবে। ওই পদ্ধতিতে ধান কর্তন পর্যন্ত ইউরিয়া সার কাজ করে। তাই ধান গাছে চাহিদামত সারের জোগান পাওয়ায় ফলন ভাল হয়েছে।

মুজিবনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের আরেক চাষি হাবিবুর রহমান জানান, ক্ষেতে ইউরিয়া ছিটিয়ে দিলে অর্ধেক পরিমাণ বাতাসের সাথে মিশে যায়। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন জমে বায়ুমন্ডলে উষ্ণতা সৃষ্টি হচ্ছে। গুটি ইউরিয়া পদ্ধতিতে ইউরিয়া বা নাইট্রোজেন বাতাসের সাথে মিশে উড়ে যেতে পারে না।

এ পদ্ধতি চাষিদের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী প্লটসহ নানামুখী কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানালেন আইএফডিসি-আপি ফিল্ড অফিসার মিজানুর রহমান।

গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে যে সফলতা দেখা যাচ্ছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ধান ও সবজি চাষের শতভাগ জমিতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের আশা প্রকাশ করলেন মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ ডক্টর আক্তারুজ্জামান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top