সকল মেনু

বিনা তিল-১ এ ফলন দ্বিগুণ

 মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরার কৃষকরা প্রথমবারের মত উচ্চফলনশীল বিনা তিল-১ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। সারাদেশে এই তিলের চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে অচিরেই বাংলাদেশ ভোজ্যতেল আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পরবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ ও মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে মাগুরা জেলায় এ মৌসুমে ১ হাজার হেক্টর জমিতে এই প্রথম উচ্চ ফলনশীল জাতের বিনা তিল-১ চাষ হয়েছে।

সাধারণ জাতের তিলের তুলনায় এ জাতের তিলের ফলন দ্বিগুণ ও দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা অত্যন্ত লাভজনক ফসল হিসেবে নিয়ে এটির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এম এ সাত্তার জানান, বিনাতিল-১ সাধারণ তিলের থেকে ফলন দ্বিগুণ। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ক্ষমতা কমপক্ষে ১ টন। বীজে তেলের পরিমাণ ৫২ শতাংশ। এটির রং সাদা হওয়ায় এর তেল দেখতে সয়াবিনের মত স্বাদ ও গন্ধ একই রকম। যে কারণে এটি সহজেই খাবার উপযোগী। সরিষার পাশাপাশি সারা দেশে এ তিলের চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে ভবিষ্যতে বিদেশেও তেল রপ্তানী করা সম্ভব হবে।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অভিকাংশ দেশে বেকারী ও ফাস্টফুডসহ বিভিন্ন খাবারের সাথে সাদা তিল ব্যবহার হয়ে থাকে। রপ্তানী পণ্য হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে বাংলাদেশের বিনা-১ জাতের সাদা তিলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

মাগুরা সদর উপজেলার হাজরাপুর ইউনিয়নের নন্দলালপুর গ্রামের কৃষক শহীদুল ইসলাম ২ একর, সোনারুল ইসলাম ৪ একর, ফারুক হোসেন ১ একর, আবুল বাসার ৪ একর, মোখলেছুর রহমান ১ একর ও আরিফুল ইসলাম ১ একর জমিতে প্রথমবারের মত উচ্চ ফলনশীল বিনাতিল-১ চাষ করেছেন।

তারা জানান, কৃষি বিভাগ থেকে সরবরাহকৃত বীজ ও তাদের পরামর্শে প্রথমবারের মত নতুন জাতের এ তিল চাষ করেছেন। ৮০ থেকে ৮৫ দিনের মাথায় তিল পাকা শুরু করেছে। প্রায় ৫ ফুট লম্বা প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত জড়িয়ে ফল ধরেছে। সাধারন জাতের তিল থেকে যার ফলন কমপক্ষে দ্বিগুণ হবে বলেই কৃষকরা মনে করছেন।

পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম রইসুল হায়দার জানান, বিনা থেকে উদ্ভাবন করা বিনা তিল-১ খোসা না ছাড়িয়ে যে কোন খাবারে ব্যবহার করা যায়। এর বীজে তেলের পরিমান অর্ধেকেরও বেশি। বেলে দো-আঁশ মাটিতে এ তিল চাষ উপযোগী। চাষের ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে তিল ঘরে ওঠে। এটি সাথী ফসল হিসেবে চাষ উপযোগী।

মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। বীজ বপনের পর নির্ধারিত সময়ে একর প্রতি ৪০ থেকে ৫০ কেজি ইউরিয়া, ৫০ থেকে ৬০ কেজি টিএসপি, ১৬ থেকে ২০ কেজি এমপি ও ৪০ থেকে ৫০ কেজ জিপসাম ব্যবহার করতে হয়। এ তিল চাষে সেচের প্রয়োজন হয় না শুধু বপনের সময় মাটিতে রস থাকলেই চলে। তবে এই জাতের তিল মোটেও জলবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

ড. রাইসুল ইসলাম আরো জানান, শুধু বানিজ্যিক দৃষ্টিকোন থেকেই নয় আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় ৪টি ভিটামিন- এ, ডি, ই, কে ও খনিজ পদার্থের প্রধান উৎস তিলের তেল। এই তেল গন্ধহীন, দেখতে সয়াবিন তেলের মত কোলেষ্টরেলমুক্ত ও যথেষ্ট পুষ্টি সমৃদ্ধ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top