সকল মেনু

নীতির বাইরে সুবিধা দিলে সরকার ভালো : শেখ হাসিনা

 সচিবালয় প্রতিবেদক,১৮মে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনেকেই সরকারের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে দেশের অগ্রগতি, মর্যাদা ও অস্তিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। নীতির বাইরে গিয়ে সুবিধা দিলে সরকার ভালো এবং দেশে সুশাসন থাকে। তা না হলে দেশ উচ্ছন্নে গেছে বলে প্রচার করা হয়।’

‘তারাই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন। গণতান্ত্রিক পরিবেশ তাদের পছন্দ নয়। কারণ গণতন্ত্র থাকলে তাদের মোড়লিপনা থাকে না।’

রোববার তথ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় এ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য একটি সম্প্রচার নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমাদের এটি প্রয়োজন। পৃথিবীর সব দেশেই এটি আছে। আমরা একটি খসড়াও তৈরি করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি সম্পন্ন করা একান্ত প্রয়োজন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভালো, তবে তার সঙ্গে দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যবোধও থাকতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ৩১টি বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া আমাদের সরকার ১২টি এফএম ও ৩২টি কমিউনিটি রেডিও স্টেশনের অনুমোদন দিয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভালো। তবে এর সঙ্গে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধও থাকা উচিত। এ ব্যাপারে সবাইকে নজর দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের খ-উপধারা অনুযায়ী আমরা গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেকোনো ঘটনার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম থেকে মানুষ অনেক কিছু শেখে। শিশুরা এখন গণমাধ্যম থেকেও যথেষ্ট বিনোদন পায়। তাই ইতিহাসের সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে। ইতিহাস ভালো করে না জানলে মানুষের চরিত্র নষ্ট হয়, বিকৃত চরিত্র হয়।’

তিনি বলেন, ‘এ সরকার দেশে গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। গণতন্ত্রকে বিকশিত করার স্বার্থেই সরকার সংসদ টিভি চালু করেছে। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে রেডিও চ্যানেলের প্রভাবও আছে। অনেকে মনে করেছিলেন, রেডিও বোধ হয় মরে গেছে।’

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথার উদ্ধৃত করে বলেন, ‘যে গাছে ফল ধরে সেখানেই বেশি ঢিল পড়ে। নিষ্ফলা গাছে কোনো ফল হয় না, তাই সেখানে ঢিলও পড়ে না। আমরা কাজ করছি তাই বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। সেই বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘তথ্য মন্ত্রণালয়কে গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখনকার যুগ বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যুগ, ডিজিটাল যুগ, সেই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারের কার্যক্রম এগিয়ে যাবে, সেটাই লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিলিটারি ডিক্টেটররা অবৈধভাবে ক্ষমতা নেয়, তাদের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে মিডিয়া। তারা একসময় টেলিভিশনে এসে বলে, “আসসালামুঅালাইকুম, আমি আজ থেকে রাষ্ট্রপতি হলাম…।” এভাবেই তারা ক্ষমতায় আসে। আইয়ুব খান থেকে শুরু করে জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ এভাবেই ক্ষমতা দখল করেছেন। সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আসে তারাই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বর্তমানে ৮২৬টি সংবাদপত্র চালু রয়েছে। সংবাদ না পেলে সংবাদ তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এই গণমাধ্যমগুলো। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সংবাদ তৈরি করে যাচ্ছে তারা। যার কোনো সূত্র নাই, তথ্য নাই সেভাবে সংবাদ তৈরি করছে। গণতন্ত্রকে আরো বিকশিত, মানুষের মাঝে গণতান্ত্রিক বিকাশের উন্মেষ ঘটানো, সচেতনতা সৃষ্টির জন্য অবাধ তথ্যপ্রবাহ আমাদের সরকার নিশ্চিত করেছে, এর আগে কেউ সাহস পায়নি।’

প্রধানমন্ত্রী সিনেমা হলগুলোকে কীভাবে ডিজিটাল করা যায়, সেজন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। অনলাইন মিডিয়া সম্পর্কে বলেন, এখন সবকিছু উন্মুক্ত। সমাজে ক্ষতি না করতে পারে, সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ দরকার।

তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্রকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। সাংবাদিকতা নীতিমালা একান্ত প্রয়োজন। কাউকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। সমাজ, পরিবার, দেশ এটাকে মাথায় রেখে একটা সহায়ক শক্তি হিসেবে সংবাদপত্রগুলো চলবে, এটাই কাম্য।’ সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করার বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র আরো বেশি করে হওয়া উচিত। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে জানার ব্যবস্থা করতে হবে। আর্কাইভ মানসম্মত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষ যেন তাদের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে পারে। সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top