সকল মেনু

মৌলভীবাজারে বিশ্ব সেবিকা দিবস পালিত

 এম শাহজাহান আহমদ,মৌলভীবাজার: সেবিকা। রঙে সাদা। পোশাকে সাদা। মনে সাদা। মানে সাদা। সবকিছুতেই সাদা। সাদায় যেন একাকার নার্সিং পেশা। সাদা সেতো শান্তির প্রতীক। জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয়ভাবে সাদা রঙের গুরুত্ব আছে। এ পেশায় আসতে হলে অবশ্যই সেবামনস্ক হতে হয়। হয়তোবা সাদামনের মানুষ বলে শান্তির রঙ সাদা ইউনিফ্রমের নার্স পেশাকে গ্রহণ করে সমাজের কিছু আপনজন। যাদের সেবায় মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠি আমরা। নার্সরা পেশা ও সেবাকর্ম দিয়ে মানুষের মন জয় করে। জয় করে জীবন ও বিশ্ব। সেবার বাতিঘর ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের কথা মনে আছে? এই সেবিকা ফ্লোরিডায় জন্মগ্রহণ করেন ১৮২০ সালের ১২ মে। তার জন্মদিনকে ১৯৭৪ সাল থেকে বিশ্ব সেবিকা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজারে বিশ্ব সেবিকা দিবস পালিত হয়েছে সোমবার সকালে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে কমরত সেবিকাদের উদ্যোগে এক র‌্যালি, আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। কমরত সেবিকা ও স্বাস্থ্য কমপেক্সের অন্যান্য কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। সেবিকা প্রনতী ভট্টার্চাজের সভাপতিত্বে ও মাঈন উদ্দিনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ২৫০ শয্যা হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ হরিপদ রায়। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ম্যাটর্স এর পরিচালক ডাঃ আকতার হোসেন, ডাঃ নজরুল ইসলাম প্রমূখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাশেদ আহমদ, কল্পনা রানী, রোকেয়া বেগম, রেবেকা বেগম, স্বর্না রানী, সুফিয়া বেগম, অশোকনন্দী ও নাজমা বেগমসহ সকল সেবক-সেবিকারা অংশ গ্রহন করেন। বক্তরা বলেন, নার্সিং একটি সেবামূলক পেশা। অনেক পেশার ভিড়ে পেশা হিসেবে নার্সিং দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে নার্সদের চাহিদা। আসলে এটি এমন একটি পেশা, যার চাহিদা নির্দিষ্ট কোনো গ-ির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একদিকে যেমন বিদেশে এ পেশায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে, অন্যদিকে দেশেও কাজ করার অপার সুযোগ রয়েছে।
পেশাদারি পর্যায়ে ই পেশার মানোন্নয়নে ম্যারি সিকোল, এগনেস এলিজাবেথ জোন্স এবং লিন্ডা রিচার্ডস কাজ করে গেছেন। তাদের মধ্যে লিন্ডা রিচার্ডস আমেরিকার প্রথম পেশাদার ও প্রশিক্ষিত নার্স হিসেবে ১৮৭৩ সালে বোস্টনের নিউ ইংল্যান্ড হসপিটাল ফর উইম্যান অ্যান্ড চিলড্রেন থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডে জাতীয় পর্যায়ে নার্সদের নিবন্ধিত করা হয়। এলেন ডাফার্টি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রথম নিবন্ধিত নার্স।
দিন দিন মানুষ বাড়ছে। বাড়ছে হাসপাতাল। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নার্সের চাহিদা। দেশে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, সমাজসেবা অধিদপ্তর, হোটেল-মোটেল, এনজিও এমনকি পর্যটন করপোরেশনেও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। নার্সিংয়ের ওপর স্নাতক পর্যায়ের পড়ালেখা করার সুযোগ কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে সাতটি বেসিক বিএসসি নার্সিং কলেজে এ কোর্স চালু রয়েছে। এদের প্রতিটিতে আসন সংখ্যা ১০০টি করে। কলেজগুলোতে বিএসসি ইন নার্সিংয়ের ওপর চার বছরের অনার্স কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। এর বাইরেও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিদেশি কারিকুলামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দেশের বিএসসি ইন নার্সিংয়ের পাঠ্যসূচি তৈরি করা হয়েছে।
নার্সিং শব্দের আভিধানিক অর্থ তত্ত্বাবধান করা বা সেবা করা। এই নার্সিং শব্দ থেকেই এসেছে নার্স শব্দটি। যারা নার্সিং বিষয়ে দক্ষ, তাদেরকেই বলা হয়ে থাকে নার্স। এর বাংলা অর্থ সেবিকা। হাসপাতালে অসুস্থ মানুষের সেবায় যারা নিয়োজিত থাকেন, তারাই সাধারণত নার্স হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বাজারে যে কয়েকটি বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করলে পড়ালেখা শেষে কাজের পর্যাপ্ত ক্ষেত্র নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, তার মধ্যে নার্সিং অন্যতম। এ কারণেই এই খাতে বছর বছর প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে নার্সদের চাহিদা। আসলে এটি এমন একটি পেশা, যার চাহিদা স্থান, কাল, পাত্রে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের দেশে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারদের যতটা চাহিদা রয়েছে এবং অভিভাবকদের এসব বিষয়ে পড়ানোর যে প্রবণতা রয়েছে, নার্সিং পেশাতে পড়ার এবং পড়ানোর প্রবণতা তেমন করে নেই। ফলে পড়ালেখা শেষ করে মানবসেবা করা ছাড়াও ভালো ক্যারিয়ারের যে সম্ভাবনা রয়েছে, সেই সম্ভাবনা তাই অনেকেই গ্রহণ করতে পারছেন না। নার্সিং বিষয়ে অনেকের স্পষ্ট ধারণাও নেই।
দেশে বিএসসি ইন নার্সিংয়ে ভর্তি হতে চাইলে প্রার্থীকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং সমমানের পরীক্ষার প্রতিটিতে ন্যূনতম জিপিএ ২.৫০ করে পেতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়াদের জন্য অগ্রাধিকার হলেও মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হতে পারে এই বিভাগে। ভর্তি সাধারণত জিপিএ’র ভিত্তিতেই নেয়া হয়। এইচএসসি’র ফলাফল বের হওয়ার পরপরই ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। ভর্তির সার্বিক খরচ বাবদ তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা লাগে। তবে গরীব ও মেধাবীদের জন্য বৃত্তির সুযোগ রয়েছে।
নার্সিং পেশার সম্ভাবনার দিক বিবেচনা করেই এখন অনেক প্রতিষ্ঠানই নার্সিংয়ে পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়ার কথা জানাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩ অনুযায়ী কাউন্সিল এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোনো প্রতিষ্ঠান নার্সিং বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, ভর্তি করা, সনদপত্র প্রদান ইত্যাদি কাজ করতে পারবে না। কাজেই কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই জেনে নিতে হবে তার সঠিক অনুমোদন রয়েছে কি-না বলে জানান বক্তরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top