সকল মেনু

ফলোআপ;কমলগঞ্জে আকষ্মিক বন্যায় ৫শ’ পরিবার পানিবন্দি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি,৯মে: দু’দিনের ভারী বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ১২টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কমলগঞ্জ পৌর এলাকা ও চারটি ইউনিয়ন এলাকায় ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের দু’তীরে ছোট বড় ১২টি ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় ওই এলাকার প্রায় ৫শ টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি ৫শ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৫শ পরিবারই ক্ষতিগ্রস্থ। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ৫০ হেক্টর বোরো ফসল ও ৫ হেক্টর আউস চারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে দেড়শ পুকুর ও ফিসারীর অর্ধ কোটি টাকার মাছ। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার হিসাবে চিড়া, গুড়, দিয়াশলাই ও মোমবাতি বিতরণ করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার দুপুরের পর নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের পূর্ব ও পশ্চিম তীর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বাঁধের মাটিতে ধ্বস দেখা দেয় একাধিক স্থানে। বিকাল ৪টায় সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের সরিষাবিল এলাকায় ১ম ভাঙ্গন দেখা দেয়। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টায় ধলাই নদীর উজিরপুর নামক স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়। অধিক ঝুঁকির্পর্ণ হয়ে পড়ে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের পৌর এলাকার দক্ষিন কুমড়াকাপন ও গোপালনগর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা। কমলগঞ্জ ইউএনও মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, পৌর মেয়র আবু ইব্রাহীম জমশেদ, ভানুগাছ বাজার পৌর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মখলিচুর রহমানের নেতৃত্বে স্থানীয় এলাকাবাসী ঝুকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করেন। কিন্তু পানির বেগ বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় বাঁধ ভাঙ্গন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদমপুর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা ও পশ্চিম কান্দিগাঁও এলাকায় ছোট বড় ৪টি ভাঙ্গন দেখা দেয়। ইসলামপুরের মখাবিল এলাকায় ছোট একটি ভাঙ্গন দেয়। একইভাবে কমলগঞ্জ পৌর এলাকার দক্ষিন কুমড়াকাপন ও গোপালনগর এলাকায় ৩টি, রহিমপুর ইউনিয়নে ২টি ভাঙ্গন দেখা দেয়। বৃহষ্পতিবারের আকষ্মিক বন্যায় ধলাই নদীর ভাঙ্গনকৃত ওই এলাকা দিয়ে বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় রহিমপুর, কমলগঞ্জ, আদমপুর, ইসলামপুর ইউনিয়ন ও কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ বাজার, কুমড়াকাপন, উজিরপুর, বালিগাঁও, চৈতন্যগঞ্জ, নারায়নপুর, গোপালনগর, করিমপুর, বাধে করিমপুর, গুলেরহাওর, ইটখলা, শ্রীপুর, কোনাগাঁও, গঙ্গানগর, মকাবিল, লক্ষ্মীপুর, কুশালপুর, পুরান বাজার, কুরমা চা বাগানের আংশিক সহ প্রায় ৫০টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়। প্রায় ৫শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন। ভাঙ্গন এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার হয়ে পড়েন পানিবন্দি। রাতে ভাঙ্গন দেওয়ায় অনেক পরিবারের সদস্যরা মালামাল রেখে সন্তানদের নিয়ে নিরাপদে চলে যেতে দেখা যায়। বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় ভানুগাছ বাজারের ১০নং রোড মোড়। আলাপকালে আলেপুর গ্রামের নজমুল ইসলাম, আলমাছ মিয়া, সিরাজুল ইসলাম, খোকন মিয়া জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলাতির কারণে ধলাই ব্রীজের ভাঙ্গা বাঁধ মেরামতের কাজ যথাসময়ে শেষ হয়নি। যে কোন মুহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে একটি প্রাইমারী স্কুল সহ আলেপুর গ্রামটি নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে।কমলগঞ্জ পৌর মেয়র আবু ইব্রাহিম জমশেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ধলাই নদীর একাধিক স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার আবেদন জানানোর পরও কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এদিকে বৃহস্পতিবার কোন বৃষ্টি না হওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকে ধলাই নদীর পানি কমতে শুরু করলে বন্যা কবলিত এলাকার পানিও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তবে নিন্মাঞ্চলে পানি জমতে থাকে। আবার বৃষ্টি নামলে ধলাই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা প্রায় আরো ১২টি স্থানে ভাঙ্গনের আশঙ্কা রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে ভাঙ্গনকৃত সবক’টি এলাকা পরিদর্শন করেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জের ইউএনও মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ। এছাড়া মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন।
কমলগঞ্জের ইউএনও মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, সরকারী বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে বন্যা কবলিত এলাকায় উপজেলা প্রশাসন-এর পক্ষ থেকে শুকনো খাবার হিসাবে ১০ মন চিড়া, আড়াই মন চিনি, গুড়, দিয়াশলাই, মোমবাতি ও কিছু নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top