সকল মেনু

বোয়ালমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি

 লিটু সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর): ফরিদপুরের বোয়ালমারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ঘুষ দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। টাকা ছাড়া কোন কাজই হয়না ওই অফিসে। অনিয়ম ও দুর্নীতির মূল হোতা বোয়ালমারী এবং পাশ্ববর্তী আলফাডাঙ্গা উপজেলায় একাধারে ১৩ বছর চাকরিরত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমান। তবে অভিযুক্ত এটিইও ওয়াহিদুর রহমান সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শুধু শিক্ষা কর্মকর্তা নয়, অফিস সহকারীদের বিরুদ্ধেও রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ।
সম্প্রতি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বদলি বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, ৩২ বছর যাবত মুরাইল আখালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করা মোসা. শামচুননাহার, ঠাকুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হওয়ার আবেদন করেন। সিনিয়র হওয়া সত্বেও তাকে বদলি না করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জেলার বাইরে থেকে জুনিয়র এক শিক্ষককে সেখানে বদলি করা হয়েছে। বোয়ালমারী উপজেলার ৬৭টি প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ের আভ্যন্তরিন ব্যয় নির্বাহের জন্য “স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্লান” (স্লিপ) খাতে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে টাকা বরাদ্দ আসে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের বরাদ্দ পাওয়া ৩০ হাজার টাকা থেকে সরকারি ভ্যাট ও অন্যান্য কর কর্তনের পরও উৎকোচ হিসেবে এক থেকে দুই হাজার টাকা করে কেটে রাখেন এটিইও ওয়াহিদুর রহমান। জাতীয়করণ হওয়া উপজেলার ২৮টি রেজিস্টার্ড ও ৪টি কমিউনিটি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ৪ জন করে মোট ১২৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। ওই শিক্ষকদের সরকারি বরাদ্দের বেতন বিল ছাড় করানো বাবদ শিক্ষকদের কাছে জনপ্রতি ১ হাজার ৫শ টাকা করে ঘুষ দাবী করেন এটিইও ওয়াহিদুর রহমান। শেষ পর্যন্তু ওয়াহিদুর রহমানকে জনপ্রতি ৪শ টাকা হারে মোট ৫১ হাজার ২শ টাকা উৎকোচ দিয়ে নিজেদের বেতনভাতা ছাড় করাতে হয়েছে ওই শিক্ষকদের। একই সময়ে জাতীয়করণ হওয়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর মধ্যে থেকে প্রধান শিক্ষক হওয়ার মত যোগ্যদের তালিকা প্রেরণকালে এটিইও ওয়াহিদুর রহমান দিঘীরপাড়ের আসমা পারভীন, পশ্চিম কাদিরদীর সালমা বেগম, কামারহেলার আবু লায়েস বিশ্বাস, ও সবুজ বাংলা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেনের কাছ থেকে মোট ৮০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এছাড়া ৫ জন বেসরকারি প্রধান শিক্ষকের কাগজপত্র প্রস্তুত করে ঢাকায় পাঠানোর করে ১৫ হাজার টাকা উৎকোচ নেন তিনি। একমাস আগে উপজেলার ১শ ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্ধারিত তথ্য ও ছবি অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানোর সময় একটি নির্ধারিত কম্পিউটার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে ওয়াহিদুর রহমান প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ৫শ টাকা হারে আদায় করেন। এছাড়া ডাটা (তথ্য) সংশোধন বাবদ বিদ্যালয় গুলো থেকে আরো অতিরিক্ত ৩শ টাকা হারে নেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কম্পিউটার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত একজন জানান, চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যালয় গুলো থেকে আদায় করা টাকার অর্ধেক এটিইও ওয়াহিদুর রহমানকে দিতে হয়েছে। বিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রতি সেট প্রশ্নপত্রর জন্য আদায় করা হয় ৪ টাকা করে যা খরচ মাত্র ২টাকা। এখান থেকে উদ্বৃত্ত ৫০/৬০ হাজার টাকা চলে যায় শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের পকেটে।
অফিস সহকারী আজিজার রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের মূল বেতন কমিয়ে বিল করাও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক সুমনা রায় বলেন, গত ফেব্রুয়ারি, মার্চের মূল বেতন ৭ হাজার ৫৭০ টাকার স্থলে ৭ হাজার ২৫০ টাকা বিল করে দেয়। তাকে বিষয়টি জানানোর পরেও এপ্রিল মাসে একই ভুল করে। এ ব্যাপারে অফিস সহকারী আজিজার রহমান বলেন, কম্পিউটারে ভুলের কারণে এটি হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) ভুপতি মোহন বালা জানিয়েছেন, অফিসের সব বিষয়ে ওয়াহিদুর রহমানই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়ে থাকলে দায়ভারও তার। তবে তিনি (টিইও) নিজে কোন দুর্নীতির সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top