সকল মেনু

১২ সাংবাদিক রামেকে চিকিৎসকদের হামলায় আহত

 নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, ২১ এপ্রিল : সংবাদ সংগ্রহের সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। হামলায় অন্তত ১২ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বোয়ালিয়া থানার ওসি সায়েদুর রহমানকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

হামলার সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কয়েকজন সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাত পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

রোগী ফেলে ধর্মঘট পালন না করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনার একদিন পরই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ তুলকালাম কাণ্ড ঘটালেন। গত শনিবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

এ দিকে হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত চ্যানেল-২৪ এর ক্যামেরাপারসন আবু রায়হান ও যমুনা টিভির ক্যামেরাপারসন রাসেল মাহমুদকে মহানগরীর লক্ষ্মীপুর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে অবস্থার অবনতি ঘটলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাসেল মাহমুদকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনার প্রতিবাদে রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন সাংবাদিকরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ওই রোগীর স্বজনদের মারপিট করার জন্য ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে একজোট হতে থাকে। পরে ঘটনা শুনতে পেয়ে সংঘাত থামাতে পুলিশ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের গেটে তালা মেরে দেয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তালা ভেঙে ওয়ার্ডের ভেতরে প্রবেশ করে রোগীর স্বজনদের মারার চেষ্টা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনা জানতে পেরে চ্যানেল-২৪ এর সাংবাদিক আবরার শাঈর ও ক্যামেরাপারসন আবু রায়হানসহ আরো কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আবরার শাঈর ও ক্যামেরাম্যান আবু রায়হানের ওপরে হামলা চালায়। ওই সময় চিকিৎসকরা ক্যামেরাপারসন আবু রায়হান ও আবরার শাঈরকে বেধড়ক মারপিট করে। আবু রায়হানসহ অন্য কয়েকজন সাংবাদিক পালিয়ে আসলেও হামলাকারী চিকিৎসকরা আবরার শাঈরকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, আবু রায়হান ছাড়া পেয়ে বিষয়টি অন্য সাংবাদিকদের জানালে পুলিশের সহযোগিতায় অন্য সাংবাদিকরা ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাছে আবরার শাঈরকে মুক্ত করার জন্য গেলে দ্বিতীয় দফায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সাংবাদিকদের ওপরে হামলা চালায়।

এ সময় যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন রাসেল মাহমুদসহ আরো কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। হামলাকারীরা এ সময় সাংবাদিকদের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর চালায় ও মারপিট করে।

এছাড়াও কালের কণ্ঠের ফটোসাংবাদিক সালাহউদ্দিন, এটিএন নিউজের ক্যামেরাপারসন মাহফুজুর রহমান রুবেল, মাছরাঙা টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন সৈয়দ মাসুদ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিবেদক মাইনুল হাসান হামলাকারীদের মারধরের শিকার হন। ভাঙচুর করা হয় সাংবাদিকদের ছয়টি ক্যামেরা।

হামলার শিকার মাইনুল হাসান বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় সাংবাদিকরা পুলিশের সঙ্গে সহকর্মী আবরার শাঈরকে উদ্ধার ও সেখানকার পরিস্থিতি জানার জন্য ভেতরে গেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হামলা চালান। এসময় সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা নীরব ভূমিকা পালন করে। এক পর্যায়ে পুলিশের হাতে থাকা লাঠি দিয়েই সাংবাদিকদের পিটিয়ে যখম করে হামলাকারীরা।’

পরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ গিয়ে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাছে অবরুদ্ধ আবরার শাঈরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

ঘটনার পরে রামেক হাসপাতালে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন আয়েনসহ সাংবাদিক নেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ১২টা ৪৫মিনিট) সাংবাদিকরা হামলাকারীদের বিচার ও দায়িত্ব অবহেলার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এমন আচরণ দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। সোমবার এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির রিপোর্টে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি সায়েদুর রহমানকে অপসারণের দাবি করেন সাংবাদিকরা। এসময় ঘটনাস্থলে থাকা নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি পুলিশ সদর দফতরে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। পরে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয় সায়েদুর রহমানকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top