সকল মেনু

বাংলাদেশের চোখে ভারতের নির্বাচন

ঢাকা, ৭ এপ্রিল (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : ভারতের নির্বাচনের দিকে এখন বাংলাদেশের দৃষ্টি। কারণ বিশ্বের বৃহত্তম এই গণতন্ত্রের অতি নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক। বিজেপি, কংগ্রেস না দুর্বল কোনো কোয়ালিশন? সোমবার ভারতের লোকসভার প্রথম পর্বের নির্বাচনের শুরুতে সেখানে যেমন এটি আলোচনার বিষয়, বাংলাদেশেও তাই। কারণ বাংলাদেশের নাগরিকরা নিজেদের মতো করে ভাবেন যে, ভারতের নতুন সরকারে কারা আসলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের হিসেবটা কেমন হবে। আর তাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোন প্রভাব পড়বে কিনা?

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতে কারা ক্ষমতায় আসবেন, বাংলাদেশের মানুষের তা নিয়ে ভাবার যথেষ্ট যুক্তি আছে।” ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর। পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে। উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত। নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে।

কারণ বিজেপি আর কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রধান এই দুটি দলের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়েছে। তাই বিজেপি ক্ষমতায় এলে এবং নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে কূটনৈতিক সম্পর্কে মৌলিক পরিবর্তন না আসলেও সম্পর্কের ভাষায় যে পরিবর্তন আসবে তা নিশ্চিত। ভাষার পরিবর্তন অনেক সময় সম্পর্কের মৌলিক জায়গায়ও পরিবর্তন এনে দেয় বলে মনে করেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ৷

তিনি আরও বলেন, ‘‘আর এর সুযোগ নেবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক দলগুলোও। এটা সবার জানা, যে কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। এমনকি নেতাদের মধ্যেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে দীর্ঘদিনের যোগাযোগ আছে। তাই কংগ্রেস যদি ক্ষমতায় না থাকে আর ভারতে যদি বাংলাদেশ বিরোধিতা বাড়ে, তাহলে বাংলাদেশেও ভারত বিরোধিতা বাড়বে। নরেন্দ্র মোদী একাধিক সমাবেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে সব মন্তব্য করেছেন, তা ভাবিয়ে তুলেছে এখানকার মানুষকে। তবে তার এই কথা ভোটের জন্য, না তিনি নীতির দিক থেকেই বলেছেন, তা বুঝতে আরো সময় লাগবে।”

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আরও বলেন,”অন্যদিকে বাংলাদেশ ভারতের অনেক দেনা-পাওনার হিসাব আছে। সীমান্ত চুক্তি, পানি চুক্তি, ট্রানজিট – এ সব নিয়ে কী হবে, তা নির্ভর করছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা ব্যানার্জি এই নির্বাচনে প্রাদেশিক এবং কেন্দ্রীয় সরকারে কতটা প্রভাবশালী হন তার ওপর।”

আগামী ৭ তারিখ থেকে ভারতে ১৬তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে৷ প্রায় ৮০ কোটি ভোটার এবার ভোট দেবেন৷ ২০০৯ সালের চেয়ে সংখ্যাটা প্রায় ১০ কোটি বেশি৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ভারতের নির্বাচন নিয়ে সারা দুনিয়ায়ই আগ্রহ আছে। কারণ ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। আর বাংলাদেশের সঙ্গে নানামুখী সম্পর্কের কারণে ভারতের নির্বাচন নিয়ে এখানকার সব শ্রেণির মানুষের আগ্রহ আছে। আর এই নির্বাচনে কেমন সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসবে তা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে, রাজনৈতিক মহল, সুশীল সমাজ সবারই ভাবনার বিষয়।” তিনি বলেন, “ভারতে যদি মৌলবাদের উত্থান হয়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও তার এক ধরনের প্রভাব পড়বে।”

তবে তিনি মনে করেন, “ভারতে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক স্তরে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সম্পর্কে তেমন কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসবেনা। হয়তো সম্পর্কের ভাষা পরিবর্তন হতে পারে।”

তিনি আরও মনে করেন, “এখনো নিশ্চিত নয় যে ভারতে বিজেপি না কংগ্রেস – কারা ক্ষমতায় আসবে। এমনও হতে পারে বিজেপি বা কংগ্রেস নয়, একটি দুর্বল কোয়লিশন সরকারও ভারতের ক্ষমতায় আসতে পারে। তাই ভারতের নির্বাচন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলবে, তা নির্বাচনের ফলাফল নিশ্চিত না হওয়ার আগে বলা সম্ভব নয়।”

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top