সকল মেনু

মুক্তিযোদ্ধার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসা

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: জীবনে অনেক না পাওয়ার বেদনা নিয়ে যখন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার জীবনের প্রতিই বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছিল তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া একটি উপহার তার সব হতাশা দূর করে দিয়েছে। তিনি বেঁচে থাকার নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন তার জীবনের যে বড় অর্জন তা নতুন করে বুঝতে পারছেন।
গত বুধবার অর্থাৎ ২ এপ্রিল বিকেলে হাজীগঞ্জ উপজেলার উচ্চঙ্গা গ্রামের মুন্সী বাড়িতে ঘটে গেল এক অন্যরকম ঘটনা। সেনাবাহিনীর সিগনাল কোরের একজন কর্পোরাল এলেন যুদ্ধাহত অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির মুন্সীর বাড়িতে। হাতে একটি সুন্দর প্যাকেট। প্যাকেটটি তুলে দেয়া হল হুমায়ুন কবিরের হাতে। বলা হল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্যাকেটে করে তার জন্য একটি উপহার পাঠিয়েছেন। হতবাক হুমাযুন কবির প্যাকেট খুলতেই তার চোখ ছানাভরা।  দেখতে পেলেন তাতে  রয়েছে একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন।  আবেগে আপ্লুত এই প্রাক্তন সৈনিকের চোখে পানি চলে এল। কী করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না। মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে গেলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে। মনের অজান্তে চোখ বেয়ে অশ্রু নির্গত হতে লাগল। সংসারের হাজারো না পাওয়ার বেদনা ভুলে যেয়ে নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গর্ব বোধ করতে লাগলেন। দু’হাত উঁচিয়ে দোয়া করলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সহযোদ্ধা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!
২ ছেলে ১ মেয়ের জনক হুমায়ুন কবির জীবনের শেষ সময়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এ রকম একটি স্বীকৃতি পাবেন স্বপ্নেও ভাবেননি। স্বাধীনতা যুদ্ধে একটি পা হারিয়ে গেলেও কেউ খোঁজ রাখেনি। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ভাতা পান সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের কোটায়। এসব নিয়ে অনেক কষ্ট বুকে দানা বেঁধে রেখেছেন। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি কৃতজ্ঞ।
হুমায়ুন কবির জানান, তিনি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে ৪ মাসের ছুটি নিয়ে পাকিস্তান থেকে দেশে আসেন ও বিয়ে করেন। ২ মাসের মতো ছুটি কাটানোর পরেই দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কাউকে কিছু না বলে ব্রাক্ষণবাড়িয়া হয়ে চলে যান ভারতের মেলাগড় ক্যাম্পে। কিন্তু সেনাবাহিনীর লোক হওয়ার কারণে তার আর ট্রেনিং করতে হয়নি। যুদ্ধের জন্য সরাসরি যোগ দিতে বলা হয় অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর সিলেটের বড়লেখা এলাকায় এই রেজিমেন্ট থেকে পাকবাহিনীর সাথে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। ওই দিন যুদ্ধ শেষে ভারতীয় ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার সময় একটি মাইন বিস্ফোরণে বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলেও চিরতরে বাম পা হারান হুমায়ুন কবির। কাটা পায়ের ক্ষত না শুকাতেই ভারতীয় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এক নার্সের মাধ্যেমে খবর পান দেশ স্বাধীন হয়েছে। এর কয়েক মাস পরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আসাম থেকে কলকাতা হয়ে যশোরে প্রবেশ করেন। সেখানে থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সরকারিভাবে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকেসহ আরো অনেক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে। চিকিৎসা শেষে স্ট্রেচারে ভর করে যখন বাড়ি ফিরেন তখন সবাই হতভম্ব হয়ে পড়েন। কারণ, তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীসহ অন্যরা ভেবেছিলো তিনি যুদ্ধে মারাই গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত উপহার হাতে পেয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় হুমায়ুন কবির বলেন, দেশে কতো মুক্তিযোদ্ধাই আছে, কে কার খবর রাখে? প্রধানমন্ত্রী আমার মতো অজোপাড়াগাঁয়ের এক মুক্তিযোদ্ধাকে মনে রেখেছেন, মোবাইল পাঠিয়েছেন এটা ভাবা যায় না ! আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। মহান আল্লাহ যেন ওনাকে দীর্ঘজীবি করেন এবং সুস্থ রাখেন। যাতে তিনি এভাবেই মানুষের জন্য কাজ করে যেতে পারেন ।
এ বিষয়ে হুমায়ুন কবিরের ভাইপো ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শাহালম মুন্সী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা জাতির জনকের কন্যার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার চাচা শেষ বয়সে এসে যে সম্মান পেয়েছেন তার জন্য পারিবারিকভাবে অনেক খুশি আমরা সবাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top