সকল মেনু

প্রথম প্রেসিডেন্ট নিয়ে বিতর্ক

ঢাকা, ২৯ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট কে এ নিয়ে বিতর্ক এবার তুঙ্গে। রাজনীতিতে বলা যায় এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় শুরু হয়েছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা ইতোমধ্যে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট কে এ নিয়ে ভিন্ন দাবি করেছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাবি, দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দাবি, দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের বিভিন্ন শরিক দল এ দাবীকে মিথ্যাচার ও উদ্ভট বলে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ছাত্রলীগ গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বেগম খালেদা জিয়ার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে। অন্যদিকে বিএনপি ও ১৯দলীয় জোটের অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দ এ দাবীর পক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরছেন।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গত ২৫ মার্চ লন্ডনে এক আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান বলে দাবী করেন। এর পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে তুমুল বিতর্কের শুরু। শুধু রাজনীতির মাঠেই নয় টকশোতেও এ নিয়ে বিতর্ক এখন বেশ জমজমাট। তবে সব কিছু ছাড়িয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে এখন চলছে এ বিতর্ক যুদ্ধ।

লন্ডনের আলোচনা সভায় তারেক রহমান যে দাবী করেন তার সপক্ষে প্রথম কথা বলেন বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কয়েকটি অনলাইন মিডিয়াতে দেয়া সক্ষাৎকারে তিনিও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট বলে দাবী করেন। এরপর ২৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট বলে উল্লেখ করেন। তারেক রহমানের দাবীকে সমর্থন করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, একাত্তরে যখন কেউ কিছু বলছিল না, দেশের মানুষ যখন দিশেহারা তখন জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলেই যুদ্ধ হয়েছে। তাই তিনি দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারাও স্বীকার করেন, জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতিহাস থেকে এটি মুছে ফেলা যাবে না। তাই স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মেনে নিতে পারে না আওয়ামী লীগ। কিন্তু পৃথিবী, বাংলাদেশের মানুষ মেনে নিয়েছেন। জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষকই নন, তিনি প্রথম প্রেসিডেন্ট, বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রেসিডেন্টের স্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী হিসেবে তিনি গর্বিত।

জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করে বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া এ বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা নিন্দা ও প্রতিবাদ শুরু করেন। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক বিক্ষোভ সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে ছাত্রলীগ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে। গত বৃহস্পতিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যারা মিথ্যাচার করছে, তারাই প্রথম প্রেসিডেন্ট নিয়ে নতুন ফর্মুলা দিচ্ছে। তারা (বিএনপি) এখন ফর্মুলা পাল্টেছে। এত দিন বলেছেন, জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক; এখন বলছেন প্রথম প্রেসিডেন্ট। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে প্রথম প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। এছাড়া তারেক রহমানের বক্তব্যের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, তারেক ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার করেছে। আর ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। এ জন্য অবশ্যই তারেকের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে।

খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে জিয়াউর রহমানকে প্রথম প্রেসিডেন্ট দাবি করা প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বেগম জিয়া ডাহা মিথ্যাচার করছেন। উনাকে মিথ্যাচারের এই পাগলামি বন্ধ করতে হবে। ইতিহাসকে নির্বাসনে পাঠিয়ে বা হত্যা করে কেউ রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারেনি।

বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতি-উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন খালেদা জিয়া। অথচ জিয়াউর রহমান নিজেও কখনো তাকে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট দাবি করেননি। জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট বলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। জাতীয় সংগীতের চেতনায় জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ, ঠিক তখনই বিভ্রান্তি ছড়াতে খালেদা জিয়া ও তাঁর পুত্র এ ধরনের উদ্ভট দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিব নগরের আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণা অনুযায়ী বাঙালি জাতির প্রথম প্রেসিডেন্ট হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ৪৩ বছর পর স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে বিএনপি’র নতুন তত্ত্ব পাগলের প্রলাপ। এই তত্ত্ব আবিষ্কারের পেছনে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া গতকাল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট এর সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের নেতৃত্বভার ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের হাতে। তার ঘোষণার মধ্য দিয়েই স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। কাজেই জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৬ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত প্রবাসী সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত জিয়াউর রহমানই এ দেশের প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সুতরাং এ কথা এখন অস্বীকার করার মতো কিছু নেই। এখনই সময় সত্যকে উদঘাটন করে প্রকৃত সত্যকে বের করা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top