সকল মেনু

বিমানের খোঁজে বদলে ফেলা হল তল্লাশি এলাকাই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ২৯ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : দক্ষিণ থেকে আবার উত্তরে পাড়ি। এত দিন ধরে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তে একগাদা দেশের বিমান, জাহাজ এবং উপগ্রহচিত্র তন্ন তন্ন করে যা খুঁজে পেয়েছিল, নাটকীয় ভাবে তার সব কিছু আজ নস্যাৎ হয়ে গেল। এমএইচ ৩৭০-এর ধ্বংসাবশেষের জন্য আজ থেকে ভারত মহাসাগরের উত্তরে তল্লাশি শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, ক’দিন আগে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী যা যা ঘোষণা করলেন, সেগুলো কি ভুয়ো প্রমাণিত হল তবে?

অস্ট্রেলিয়া তো আজ এও দাবি করেছে, যে গতিতে এমএইচ ৩৭০ যাচ্ছিল বলে আগে মনে করা হচ্ছিল, তার চেয়েও অনেক বেশি দ্রুত গতিতে উড়ছিল সেটি। সে কারণে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল এমএইচ ৩৭০-এর জ্বালানি। বিমানের গতি নিয়ে যে তাঁরা নিঃসংশয় নন, সেটা ব্রিটিশ তদন্তকারীরাও আগে স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু সেই তদন্তকে প্রামাণ্য ধরেই মালয়েশিয়া জানিয়েছিল, ভারত মহাসাগরের দক্ষিণেই বিমানের সলিলসমাধি ঘটেছে। আরোহীরা কেউ বেঁচে নেই। আজ অস্ট্রেলিয়ার বক্তব্য কিন্তু সেই তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল।

অস্ট্রেলিয়ার মেরিটাইম সেফটি অথরিটি (এএমএসএ) জানিয়েছে, নতুন একটি সূত্র মেলায় ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্ত ছেড়ে এগারোশো কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সরে গিয়ে অন্য এলাকায় তল্লাশি শুরু হবে। এমএইচ৩৭০-এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে পাওয়া রেডারের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এলাকাটি পারথের আরও কাছে।

এই সিদ্ধান্ত বদলে উঠছে প্রশ্ন। বাড়ছে ধোঁয়াশা। কারণ বিমানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে পর্যন্ত রেডারে যা যা ধরা পড়েছিল, তার সব কিছুই তদন্তকারীদের হাতে এসেছে বেশ কিছু দিন আগে। তা হলে হঠাৎ এখন রেডারের তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁরা নতুন কী পেলেন? যদি আগেই সেগুলি পেয়ে থাকেন, তা হলে তা গোপন করে এত দিন ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তে প্রতিকূল এলাকায় তল্লাশি চালানো হল কেন? আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় সেখানে মাঝে মাঝেই তল্লাশি অভিযান বন্ধ করতে হচ্ছিল। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন, ওই এলাকা পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে দুর্গম।

আজ সকাল পর্যন্তও তো পারথের আড়াই হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমেই খোঁজ চলছিল। তল্লাশির স্থান বদল প্রসঙ্গে এএমএসএ শুধু বলেছে, মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দল তাদের এই পরামর্শ দিয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগর এবং মাল্লাকা প্রণালীর মাঝামাঝি অঞ্চলের রেডারে পাওয়া তথ্য ধারাবাহিক ভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তারই ফলশ্রুতি এটা। ওই সময়েই বিমানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবট এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য। এখন এই নতুন দিকটিতেই নজরদারি চলবে। দশটি বিমান, ছ’টি জাহাজ এবং বেশ কিছু উপগ্রহ এই কাজে নামছে। সম্প্রতি উপগ্রহচিত্রে যে সব ভাসমান বস্তুর ছবি মালয়েশিয়ার হাতে এসেছিল, সেই বস্তুগুলি থেকে নতুন এলাকাটি বেশ দূরে। তবে দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ওই বস্তুগুলি থেকে অনেক কাছাকাছি ছিল। মালয়েশিয়ার পরিবহণমন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেন আজ সাংবাদিকদের বলেছেন, নতুন তল্লাশি এলাকা থেকেই হয়তো ওগুলি ভেসে চলে এসেছে। ৩ লক্ষ ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে নয়া এলাকায় তল্লাশি হবে।

এএমএসএ-র অফিসার জন ইয়ং বলছেন, ওই এলাকায় সমুদ্র দু-চার হাজার মিটার গভীর। আর আগের এলাকার তুলনায় এখানে আবহাওয়া তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই ভাল। কিন্তু এখানে তল্লাশির কাজ খুব সহজ হবে না বলে জানাচ্ছেন তিনি। আকাশ থেকে ধ্বংসস্তূপ খুঁজতে গিয়ে ভুল জিনিস চোখে পড়ার বেশি সম্ভাবনা। কারণ এই অংশে অনেক বেশি আবর্জনা ভেসে বেড়ায়।

কিন্তু তদন্তকারীরা বিমানের জ্বালানি দ্রুত ফুরনোর ব্যাপারে যে দাবি করছেন, সেটাই বা এত দিন পরে কী ভাবে ধরা পড়ল? তাঁরা বলছেন, আগে বিমানের গতি যা ছিল বলে হিসেব করা হয়েছিল, এখন দেখা যাচ্ছে তার চেয়েও দ্রুত উড়ছিল এমএইচ ৩৭০। তাই ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত বিমান পৌঁছতে পারে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে। হয়তো তার আগেই জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছিল।

আর এই সূত্রে ফের তাঁরা আঙুল তুলছেন বিমানচালক জাহারি আহমেদ শাহের দিকে। জাহারি এত তাড়াহুড়ো করেছিলেন কেন? বিমানের রেডার সংক্রান্ত একটি সংস্থার প্রতিনিধি মাইকেল রবার্টসন বলেছেন, “যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য হয়তো তিনি দ্রুত কোনও রানওয়ে খুঁজছিলেন নামার জন্য। অথবা তিনি হয়তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কর্তৃপক্ষের নজর এড়াতে চেয়েছিলেন। আর তাই দ্রুত গতিতে উড়ে রেডার কভারেজের বাইরে চলে যেতে চেয়েছিলেন।”

কুড়ি দিন হতে চলল বিমান নিখোঁজ। সম্ভাবনা আর অনুমানে ভর করেই এখনও চলছে তদন্ত। রহস্য সেই তিমিরেই।
সৌজন্যে : আনন্দবাজার পত্রিকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top