সকল মেনু

নিরাপত্তা ব্যয় তিনগুণ, তবুও প্রাণহানি ৯

ঢাকা, ২৭ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সার্বিক ব্যয় বিগত ২০০৯ সালের তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় কয়েকগুন বাড়লেও নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা কমেনি বরং বেড়েছে। একইসঙ্গে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

 ইসি সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে মোট বরাদ্দ দেয়া হয় ৯৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংসদ নির্বাচনের জন্য ৫শ কোটি টাকা এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ৪৮৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। তবে সংসদ নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় প্রায় ২শ কোটি বেঁচে যায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাত মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ১৪৭ কোটি টাকা এবং আইন-শৃঙ্খলা খাতে ১৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য বরাদ্দকৃত ৪৮৯ কোটি টাকার মধ্যে ইতোমধ্যে ব্যয় ৩৩০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে যা তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে ২০০ কোটি টাকা বেশি, যার মত্যে আইনশৃঙ্খলা খাতেই খরচ হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। পঞ্চম ধাপের (শেষ ধাপ) ভোটগ্রহণ হবে ৩১ মার্চ। যে হারে সহিসংতা বাড়ছে তাতে এ ব্যয় আরো অনেক বাড়তে পারে বলে নির্বাচন কমিশনের বাজেট শাখার কর্মকরর্তারা আশঙ্কা করছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন করতে তৎকালীন কমিশনের ব্যয় হয়েছিল ১৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা করতে ব্যয় হয়েছিল ৬৪ কোটি ২৭ লাখ এবং আইনশৃঙ্খলা বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৬৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আর সেসময় সহিংসতাও তুলনামূলক কম হয়েছিল।
এবার দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বিএনপি জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় স্বভাবতই স্থানীয় নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয় নির্বাচন কমিশন। এ কারণে পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা দুই খাতেই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। মাঠে নামানো হয়েছে অন্য সব নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীও। কিন্তু সহিংসতা কমেনি। প্রথম ধাপ থেকেই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে সহিংসতায় ৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে ২ জন, তৃতীয় ধাপে ৩ জন এবং চতুর্থ ধাপে ৪ জন প্রাণ হারায়। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন করেই একমাসের ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ। ফলে আরো আস্থা সঙ্কটে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। বাকি নির্বাচনগুলো নিয়ে আরো চ্যালেঞ্জ বেড়ে গেছে।
ঠিক একারণেই সর্বশক্তি নিয়োগ করছেন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। বাড়ানো হচ্ছে বাজেট। চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে ২০০ কোটি টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। পঞ্চম ধাপ নিয়েও ভোটার ও নির্বাচন পরিচালনাকারী কর্মকর্তার মধ্যে উৎকণ্ঠা রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্র দখল, জালভোট, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, বালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাই, ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলির ঘটনা যেভাবে বেড়েই চলেছে তাতে আইনশৃঙ্খলা খাতে ব্যয় আরো বাড়বে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
সূত্র মতে, চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে বাজেটের অর্ধেকের বেশি ব্যয় হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা খাতে। এ খাতে ইতোমধ্যে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে গেছে।
সহিংসতার কারণে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ১০টি কেন্দ্র, দ্বিতীয় ধাপে ৩৪টি কেন্দ্র, তৃতীয় ধাপে ২৬টি ও চতুর্থ ধাপে ৩৩টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার।
সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা খাতে খরচ হওয়া ১৮০ কোটির টাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে আনসার বাহিনীর পেছনে। এ বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। এছাড়া পুলিশ ও র‌্যাবের পেছনে ব্যয় হয়েছে ৬৩ কোটি টাকা এবং সেনাবাহিনীর পেছনে ব্যয় হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা আর কোস্টগার্ডের পেছনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। তবে এ খরচ আরো বাড়তে পারে।
 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘আগের নির্বাচনে সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীকে তিন দিন দায়িত্ব পালন করতে হতো। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না থাকায়, সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীকে ৫ দিন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এ কারণেই তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনের তুলনায় চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ধাপে ধাপে নির্বাচন হওয়ার কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এক ধাপে নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে খরচ অনেক কমে যেত।’
শুধু আইনশৃঙ্খলা খাতেই এবার ব্যয় বাড়েনি কয়েকগুন ব্যয় বাড়ানো হয়েছে নির্বাচন পরিচালনাকারীদের পেছনেও। আগে প্রিজাইডিং অফিসারদের দেয়া হতো এক হাজার টাকা আর এবার দেয়া হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। এছাড়া সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সম্মানী ৭০০ থেকে ২ হাজার এবং পোলিং অফিসারদের ৬০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা করা হয়েছে।
অন্যদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রত্যেককে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের সম্মানী আগের তুলনায় অনেক বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার ছাপানো, কালি, সিল, ব্যাগ, মার্কিং পেনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম কেনায়ও খরচ আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন পরিচালনাকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানী এবং সরঞ্জাম কেনা ও পরিবহন বাবদসহ অন্যান্য খাতে ৫টি ধাপের নির্বাচনে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ধাপে খরচ হয়েছে ৩৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, দ্বিতীয় ধাপে ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, তৃতীয় ধাপে ২৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং চতুর্থ ধাপে ২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর পঞ্চম ধাপে খরচ হচ্ছে ২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা।
নির্বাচনে ব্যয় বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘গত উপজেলা নির্বাচনের তুলনায় কমিশনের খরচ কয়েকগুন বেশি হয়েছে। কারণ জিনিসপত্রের দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে ব্যয় বাড়ছে, তারপও সহিংসতা কমছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ ভালো না থাকায় নির্বাচনে পরিচালনায় খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে এত বেশি খরচ হতো না।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top