সকল মেনু

যশোরের বেনাপোলে প্রধান শিক্ষকের লাম্পট্যের শিকার ৭ শিক্ষার্থী

 রিপন হোসেন, যশোর থেকে: যশোরের বেনাপোলের বোয়ালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। যার ফলে স্কুলটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। একই সাথে লম্পট ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিলের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন করছেন ক্ষতিগ্রস্ত অভিভাবকরা। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা পারভীন আক্তার জানায়, যদি প্রধান শিক্ষক ঘটনার সাথে জড়িত থাকে তাহলে আমরা অবশ্যই এ ঘটনার বিচার চায়। এদিকে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে পড়ায় লম্পট আব্দুল কাদের গা ঢাকা দিয়েছে বলে তার সহকর্মীরা দাবি করেছেন। তবে আতœপক্ষ সমর্থন করে প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের মোবাইল ফোনে বলেছেন, তিনি ষড়যন্ত্র ও স্থানীয় নোংড়া রাজনীতির শিকার। তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদেও নানা প্রকারের উস্কানী দিয়ে ফুঁসিয়ে তোলা হচ্ছে। অক্ষর জ্ঞানহীন অভিভাবকরা রাজনৈতিক নেতাদেও শেখানো বুলি আউড়াচ্ছে। তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে এর আগেও এই ধরনের একাধিক অভিযোগ ছিলো।
বেনাপোল শহর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে বাহাদুরপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের দক্ষিণ প্রান্তে বোয়ালিয়া গ্রাম। ছায়া ঢাকা পাখি ডাকা শান্ত সুনিবিড় এই গ্রামে এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত বোয়ালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্রালয়টি। বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১০ জন। এর মধ্যে ছাত্রী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪৫ জন। বাকীরা ছাত্র। প্রথম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া হয় এই স্কুলে লেখাপড়ার মানও সন্তোষ জনক। প্রতি বছর স্কুলটি থেকে ২/১ জন করে শিক্ষার্থী প্রাথমিক বৃত্তি লাভ করেন। বিশেষ করে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের স্পেশাল কেয়ারের মাধ্যমে বৃত্তির জন্য প্রস্তুত করান শিক্ষকরা। যার পরিনামে ফলটি হয় আশাতীত। এ বছর এই বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১। এর মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা ১৮ জন। প্রধান শিক্ষক এই ৩১ জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে মেধার ভিত্তিতে ১৫ জনকে বৃত্তি উপযোগী করার লক্ষ্যে স্পেশাল কেয়ার দেওয়ার জন্য সিলেকশন করেন। এর মধ্যে ১০ জন ছাত্রী ও ৮ জন ছাত্র। প্রধান শিক্ষক নিজে এই স্পেশাল ক্লাসের দায়িত্ব নেন। সেই মতে প্রতি অফিস ডে’তে স্কুল শুরুর আগে প্রধান শিক্ষক নিজ অফিস কক্ষে মেয়েদের ও স্কুল ছুটির পর একই স্থানে ছেলেরে ক্লাস নিতে শুরু করেন। এই ক্লাস নেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্র ও তাদের অভিভাবকদের সাথে প্রধান শিক্ষকের মনোমালিন্য দেখা দেয় বলে প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের জানান। অন্যদিকে অভিভাবকদের অভিমত হচ্ছে কুমতলব নিয়েই প্রধান শিক্ষক ছেলে মেয়েদের সুকৌশলে পৃথক করেন। পড়ানোর নাম করে তিনি মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন আপত্তি জনক স্থানে হাত দিয়ে আদর করার ভঙ্গিতে নিজের স্বার্থ হাসিলে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন। কাক ডাকা ভোরে তিনি স্কুলের অফিস কক্ষে জানালা দরজা দিয়ে মেয়েদো পড়াতেন। পড়ার ফাঁকে ফাকে তিনি নানা অজুহাতে ছাত্রীদের তার কাছে ডেকে নিয়ে কোলের মধ্যে বসাতেন। এর পর নানা অজুহাতে তিনি তাদের শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন। প্রথম পর্যায়ে ছাত্রীরা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও দিনে দিনে প্রধান শিক্ষকের  চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থীরারা। এক পর্যায়ে তিনি “রে” ও “খা” আদ্যাক্ষরের ২ ছাত্রীকে বিশেষ ক্লাসের কথা বলে এক শুক্রবারে তিনি স্কুলে ডেকে নিয়ে জোর পূর্বক তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন লোক লজ্জার ভয়ে নির্যাতিত ২ ছাত্রীও চুপ করে থাকেন। এক পর্যায়ে গত সপ্তাহে ঘটনাটি ফাঁস করে দেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজংি কমিটির সদস্য  জোসনা পারভিন। তিনি জানান, শুক্রবারে ছুটির দিন সত্বেও  বেলা ১০টার দিকে প্রধান শিক্ষক তার অফিস কক্ষে আসেন। এর কিছুক্ষন পরে ৫ম শ্রেণরি এক ছাত্রী বই খাতা নিয়ে ওই কক্ষে প্রবেশ করেন। সে সময় প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে এক শিক্ষার্থী বাড়ির পাশের এক ম্যানেজিং কমিটির মহিলা সদস জোসনা আক্তারকে ঘটনা খুলে বলেন। পরে তিনি ঘটনাটি ম্যনেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমানকে জানান। মিজানুর রহমান আক্রন্ত মেয়েদের বাড়িতে যেয়ে ঘটনার সততা নিশ্চিত হন। পরে তিনি প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরের নিকট জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। এর পর থেকে ওই শিক্ষক দ্বারা নির্যাতিত অনেক ছাত্রী তাদের অভিভাবক মা, দাদি বা নানীর কাছে ওই প্রধান শিক্ষকের নানা কুর্কীকির কথা ফাঁস করে দেয়। যা এক পর্যায়ে বোমা বিস্ফোরনের আকার ধান করে। স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা পারভিনা আক্তার ও মাহফুজা খাতুন জানান, ঘটনাটি জানার পর তাদের এলাকায় মুখ দেখানো মুশকিল হয়ে গেছে । অনেকে তাদের দেখে টিটকারী মারতে শুরু করে। ঘটনার পর থেকে প্রধান শিক্ষক লাপত্তা। ফলে বাধ্য হয়ে তারা  ৩ নারী শিক্ষক স্কুলে গেলেও ক্লাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। স্কুলে গ্রামের লোকজন এসে বসে থাকছে। যার ফলে তাদের ক্লাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। অপরদিকে স্থানীয় অভিভাবকরাও তাদেও ছেলে মেয়েকে ওই স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেন। যার ফলে গত ১ সপ্তাহ ধরে বিদ্যালয়টি প্রায় বন্ধ রয়েছে । গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে স্কুলে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের ৫ম শেণীতে তিন জন ছাত্র বসে আছে। কোন ছাত্রী এ ক্লাসে আসেনি। খোঁজ খবর নিয়ে স্কুলের পাশেই ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জোসনা বেগমের বাড়িতে গিয়ে ঘটনার আদ্যপান্ত জানা গেল। সাংবাদিকদের আগমনের খবরে মুহুর্তে সেখানে হাজির হয় গোটা পঞ্চাশেক মানুষ। নানা বয়সের এসব মানুষজন ক্ষোভে ফুটছে। তারা ক্ষোভের সাথে বলেন,“ আমরা ওই লম্পট শিক্ষকের ফাঁসি চাই। যে শিক্ষকের হাতে মেয়েরা নিরাপদ নয়, নানা অজুহাতে মেয়েদের ইজ্জত  লুটে নেয় লম্পট শিক্ষক আমরা তার বিচার চাই।” এভাবে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা তাদের প্রতিত্রিয়া ব্যক্ত করেন। নামধাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন নির্যাতিত ছাত্রী প্রধান শিক্ষকের যৌন নির্যাতনের রগরগে বর্ণনা তুলে ধরেন। তারা জানায়, বৃত্তি পাইয়ে দেওয়াসহ নানা অজুহাতে প্রধান শিক্ষক তাদেরকে এসব কাজ করতে বাধ্য করতো। একই ধরনের তথ্য দেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আরো কয়েকজন সদস্য। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনা সব  শুনেছি। তবে এসব ঘটনার কোন তথ্য প্রমান তো আসলে পাওয়া যায় না। যারা এধরনের জঘন্য অপরাধ করে তা খুব চালাক হয়। কোন প্রমান রেখে তারা কাজ করে না। তবে জোসনা বেগমসহ অন্যরা যা দেখেছে তা কিছুটা প্রমানবহন করে। তার ওপর ভিত্তি করেই প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাথে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত অভিভাবক ও স্কুলের সহকারী শিক্ষিকাবৃন্দ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যেও সৃষ্টি করেছে । এবিষয়ে  যোগাযোগ করা হলে শার্শা উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিও) আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। ঘটনাটি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা চেষ্টা করেও অভিযুক্ত  প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার পর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ রয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন মোবাইল ফোন থেকে তিনি বাড়িতে ফোন করে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানছেন বা খোঁজ খবর নিচ্ছেন। লোক মারফত যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোনে আব্দুল কাদের নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “তিনি নোংড়া রাজনীতির শিকার। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন , এসবই মিথ্যা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top