সকল মেনু

মাছ-মুরগির খাবারে ক্যান্সারের উপাদান

ঢাকা, ২০ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার বিভিন্ন কারখানায় তৈরি মাছ-মুরগির খাবারে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান ক্রোমিয়ামের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে এসব পোলট্রি ফিড। আর এই ফিডের ভেতরেই ক্যান্সার, কিডনি, লিভারের জটিল রোগের অন্যতম কারণ ক্রোমিয়ামের অস্তিত্ব পেয়েছেন গবেষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হোসেনের গবেষণায় এমন ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে। এ গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত বুধবার রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমি সংলগ্ন ‘মাল্টি প্রোটিন’ নামে একটি পোলট্রি ফিড প্রস্তুত কারখানায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করেন গবেষকরা। এতেও মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরপর ওই কারখানার কয়েক হাজার বস্তা পোলট্রি ফিড জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। আটক করা হয়েছে কারখানা মালিকের ছেলেকে। সিলগালা করা হয়েছে কারখানা।

ড. আবুল হোসেন সমকালকে বলেন, এই গবেষণা করার সময় ট্যানারির বর্জ্য থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন পোলট্রি ফিডের নমুনা বাজার থেকে কেনা হয়েছে। এ ছাড়া সরাসরি কারখানা থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যেসব কারখানায় ট্যানারির বর্জ্য থেকে পোলট্রি ফিড উৎপাদন হচ্ছে_ তার মধ্যেই ক্রোমিয়াম থাকবে। তবে ট্যানারি বর্জ্য ছাড়াও অন্য উপাদান ব্যবহার করে দেশে পোলট্রি ফিড তৈরি হয়। সেখানেক্রোমিয়ামের উপাদান থাকার কোনো আশঙ্কা নেই। তিনি জানান, ঢাকার ট্যানারি শিল্প এলাকা হাজারীবাগের আশপাশেই রয়েছে শতাধিক পোলট্রি ফিডের কারখানা। এগুলোতে তৈরি ৮০ শতাংশ খাবারেই রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি।

সমকালকে তিনি আরও বলেন, বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্যে তৈরি পোলট্র্রি ফিডের প্রতি কেজিতে ৮ হাজার মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম রয়েছে। আর ট্যানারি বর্জ্যের প্রতি কেজিতে এর পরিমাণ ১৪ হাজার মিলিগ্রাম। পূর্ণবয়স্ক মানবদেহে ক্রোমিয়ামের সহনীয় মাত্রা স্বাভাবিকভাবে প্রতি কেজিতে .০৫-.২ মিলিগ্রাম।

গবেষকরা বলছেন, ট্যানারি বর্জ্য থেকে তৈরি ক্রোমিয়ামযুক্ত বিষাক্ত খাবার মুরগির চামড়া, মাংস, যকৃত, হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক ও হাড়ে জমা হতে থাকে। ট্যানারি বর্জ্য থেকে তৈরি খাবার দুই মাস খাওয়ানোর পর মুরগির শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রতি কেজিতে মানবদেহের সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকশ’ গুণ বেশি ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়াম মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ, বিশেষ করে লিভার ও কিডনিতে জমা হতে থাকে। এক পর্যায়ে লিভার ও কিডনির কার্যক্রম ব্যাহত করে জটিল রোগের সৃষ্টি করে। এ ছাড়া ক্রোমিয়াম ক্যান্সার রোগের অন্যতম কারণ। মাছের ক্ষেত্রেও একই রকম।সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক খামারে বিষাক্ত ক্রোমিয়ামযুক্ত এসব খাবার খাচ্ছে মাছ-মুরগি। এই মাছ-মুরগির মাধ্যমে ক্রোমিয়াম প্রবেশ করছে মানব শরীরে। এতে ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে মানুষ। যাতে ক্রোমিয়ামযুক্ত খাবার কোনোভাবেই তৈরি ও বাজারজাত হতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যাপক নজরদারির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা। একইসঙ্গে সব পোলট্রি ফিডে মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়াম নেই বলেও তারা উল্লেখ করেন।

ড. আবুল হোসেন বলেন, যে তাপমাত্রায় মাছ-মুরগি রান্না হয়, তাতে ক্রোমিয়ামের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় না। এই রাসায়নিক উপাদান মানবকোষের ডিএনএর গঠন ভেঙে জেনেটিক্যাল রোগেরও সৃষ্টি করে।কারখানার চিত্র :গতকাল বিকেলে রায়েরবাজার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বধ্যভূমি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়_ আধাপাকা একটি বিশাল ঘরে তৈরি হচ্ছে পোলট্রি ফিড। জনা দশেক শ্রমিক খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ট্যানারির বর্জ্য। বিশেষ করে ঘরজুড়ে গরু-ছাগলের শুকনো চামড়া। গন্ধে ঘরের ভেতর টেকাই দায়। কথা হয় কারখানা মালিক মকবুল আহমেদের ছেলে শহীদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনিই ওই কারখানায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শহীদুল বলেন, ৭-৮ বছর ধরে তারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চালের কুঁড়া, শুঁটকি মাছ, গরু-ছাগলের হাড় ও ট্যানারি বর্র্জ্য মিশিয়ে তারা পোলট্রি ফিড তৈরি করে আসছিলেন। তবে এই খাবারে ক্যান্সারের উপাদান রয়েছে_ তা তাদের জানা ছিল না। গতকালের অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাব-৪-এর উপ-অধিনায়ক মেজর আরিফুর রহমান। এ সময় র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল-আমিন বলেন, বিষাক্ত ক্রোমিয়ামযুক্ত পোলট্রি খাবারের কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান এই প্রথম। এ ঘটনায় ম্যানেজারকে দুই লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে। কারখানার তিন হাজার বস্তা পোলট্রি ফিড জব্দ করা হয়েছে। বিষাক্ত এসব পোলট্র্রি ফিড সঠিকভাবে ধ্বংসের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মতামত নেওয়া হবে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান সমকালকে বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কোনো অনুমোদন ছাড়াই মাল্টি প্রোটিন নামে কারখানাটি চালু ছিল। পোলট্রি ফিড উৎপাদনে কারখানা চালু করতে গেলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন। মেজর আরিফুর রহমান জানান, এ ধরনের আরও কারখানা চিহ্নিত করে তাদের অভিযান চলবে।(সমকাল)

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top